০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
২০২৯-এ ফিরছে অ্যানিমেটেড হিট ‘কে-পপ ডেমন হান্টার্স’ ‘টাইটানিক’-এর নেপথ্যের গল্প: চলচ্চিত্র প্রযোজকের স্মৃতিচারণ অভিষেক শর্মার রেকর্ড গড়া ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জয় ভারতের জেন জি এখন সুগন্ধি খুঁজছে আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ ‘ইনল্যান্ড টাইপ্যান’: প্রাণঘাতী বিষ, শান্ত স্বভাবের এই সরীসৃপের অজানা বিস্ময় কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থ হয়ে পুলিশের মৃত্যু রবিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা ভিয়েতনামী ঔপন্যাসিক ড. ফান কুয়ে মাই শারজাহ বইমেলায় পাঠকদের মুগ্ধ করলেন মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

কাঠের টুকরো আর রঙে নারীর স্বপ্ন-নির্মাণ: আয়েন কুইয়াসের শিল্পভুবন

ফিলিপাইনের শিল্পী আয়েন কুইয়াস কাঠের টুকরো, উজ্জ্বল রঙ ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে নারীর শক্তি, মমতা ও পারিবারিক বন্ধনের গল্প বলেন। তাঁর জনপ্রিয় সিরিজ ‘Ayen’s Little Town’ কেবল কল্পনার শহর নয়—এটি ঘর, সংহতি ও আশার শিল্পিত প্রতিচ্ছবি।


রঙ ও কাঠের টুকরোতে নারীর গল্প

ফিলিপাইনের তারলাক প্রদেশের পুরা এলাকায় নিজের উজ্জ্বল রঙে ভরা স্টুডিওতে আয়েন কুইয়াস রঙ, কাঠ ও কল্পনাকে একত্র করে এমন সব শিল্পকর্ম তৈরি করেন যা নারীর শক্তি, সহনশীলতা ও পারিবারিক বন্ধনের গল্প বলে। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজ ‘Ayen’s Little Town’—একটি ছোট্ট রঙিন শহরের গল্প—যা দেশ-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কাঠের টুকরো জোড়া দিয়ে তৈরি এই শহর কেবল কল্পনার নয়, বরং মানবিক সংযোগ ও আশার প্রতীক।

শিল্পের শুরু: ‘Cheeks on Fleek’

২০১২ সালে আয়েনের শিল্পজীবন শুরু হয় ‘Cheeks on Fleek’ নামের সিরিজ দিয়ে। সেখানে তিনি আধুনিক নারীর অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছিলেন বিমূর্ত ও আকারধর্মী শিল্পের সংমিশ্রণে। শিল্পী বলেন, “এই নারীগুলো আমারই প্রতিবিম্ব—একজন নারী, মা ও প্রেমিকা হিসেবে।” প্রতিটি চিত্র তাঁর জীবনের খোলা ডায়েরি, যেখানে লুকানো নেই দুর্বলতা বা সাফল্য।

মহামারির সময়ের নতুন অনুপ্রেরণা

কোভিড মহামারির সময়ে, যখন বাইরের জগত থমকে গিয়েছিল, কুইয়াস কাঠের টুকরো নিয়ে শুরু করেন নতুন পরীক্ষা। সীমিত সম্পদের মধ্যেই তিনি তৈরি করেন ক্ষুদ্র রঙিন ঘর, যা পরে রূপ নেয় তাঁর স্বপ্নের শহর ‘Ayen’s Little Town’-এ। শিল্পী বলেন, “এটা শুরু হয়েছিল এক ধরনের মানসিক থেরাপি হিসেবে। কিন্তু বিশ্ব যখন একাকিত্বে ভুগছিল, তখন আমার ছোট শহর মনে করিয়ে দিত—আমরা সবাই এখনও একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।”

নারীর মমতা ও ‘Ina ng Tahanan’

পরবর্তীতে আয়েন তাঁর দুটি সিরিজ—‘Cheeks on Fleek’ ও ‘Ayen’s Little Town’—কে যুক্ত করেন এক প্রতীকী চিত্রে: মাথায় ক্ষুদ্র ঘর-সমৃদ্ধ এক নারীর প্রতিমূর্তি। তিনি এই কাজের নাম দেন ‘Ina ng Tahanan’ বা “গৃহের মা”। শিল্পীর ভাষায়, “একজন পুরুষ বাড়ি তৈরি করে, কিন্তু একজন নারী সেটিকে ঘর বানায়।” এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁর শিল্পের প্রাণ—ভালোবাসা, মমতা ও গৃহের উষ্ণতার প্রতিচ্ছবি।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার

আয়েন কুইয়াসের শিল্প ইতিমধ্যেই ছুঁয়ে গেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চকে। মালয়েশিয়া আর্ট এক্সপো, সিঙ্গাপুরের Arts Apart, ইতালি, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর প্রদর্শনী হয়েছে। তাঁর বিখ্যাত চিত্র ‘Sopistikada’ মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় এশিয়ান আর্ট অকশনে বিক্রি হয়ে এখন নিউইয়র্কের এক গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে।
২০২২ সালে ‘Ayen’s Little Town’ প্রদর্শিত হয় ম্যানিলার এডসা মহাসড়কের বিশাল LED বিলবোর্ডে এবং একই বছর এটি Philippine Museums Yearbook-এর প্রচ্ছদে স্থান পায়। পরের বছর তিনি নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে প্রদর্শিত “বিশ্বের ১০০ নারী শিল্পী”-এর তালিকায় জায়গা করে নেন। তাঁর সাফল্যের তালিকায় রয়েছে ভেনিসের International Pegasus Prize এবং ওয়াশিংটন ডি.সি.-র Leader Protagonist of the Art সম্মাননাও।

শিল্প আন্দোলন ও সমাজে অবদান

ব্যক্তিগত অর্জনের বাইরে, কুইয়াস ২০১৬ সালে Contemporary Art Movement of the Philippines (CAMP) প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য বিশ্বদরবারে ফিলিপাইন শিল্পীদের জায়গা করে দেওয়া। তাঁর বিশ্বাস, “আমি পরিকল্পনা করে কিছু করি না—আমি কাজের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাই।” এই উক্তিই তাঁর শিল্প ও জীবনের দর্শনের সংক্ষিপ্তসার।

সমাপনী ভাবনা

আয়েন কুইয়াসের শিল্পকর্ম কেবল রঙের খেলা নয়, বরং নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের নির্মাণ, পুনর্গঠন ও ঘর-সংহতির গল্প। কাঠের টুকরো, রঙ ও মমতার বুননে গড়া তাঁর ছোট্ট শহর দেখায়—ঘর মানে শুধু দেয়াল-ছাদ নয়; ঘর মানে ভালোবাসা, সংহতি ও আশা।

জনপ্রিয় সংবাদ

২০২৯-এ ফিরছে অ্যানিমেটেড হিট ‘কে-পপ ডেমন হান্টার্স’

কাঠের টুকরো আর রঙে নারীর স্বপ্ন-নির্মাণ: আয়েন কুইয়াসের শিল্পভুবন

১১:২৩:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

ফিলিপাইনের শিল্পী আয়েন কুইয়াস কাঠের টুকরো, উজ্জ্বল রঙ ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে নারীর শক্তি, মমতা ও পারিবারিক বন্ধনের গল্প বলেন। তাঁর জনপ্রিয় সিরিজ ‘Ayen’s Little Town’ কেবল কল্পনার শহর নয়—এটি ঘর, সংহতি ও আশার শিল্পিত প্রতিচ্ছবি।


রঙ ও কাঠের টুকরোতে নারীর গল্প

ফিলিপাইনের তারলাক প্রদেশের পুরা এলাকায় নিজের উজ্জ্বল রঙে ভরা স্টুডিওতে আয়েন কুইয়াস রঙ, কাঠ ও কল্পনাকে একত্র করে এমন সব শিল্পকর্ম তৈরি করেন যা নারীর শক্তি, সহনশীলতা ও পারিবারিক বন্ধনের গল্প বলে। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজ ‘Ayen’s Little Town’—একটি ছোট্ট রঙিন শহরের গল্প—যা দেশ-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কাঠের টুকরো জোড়া দিয়ে তৈরি এই শহর কেবল কল্পনার নয়, বরং মানবিক সংযোগ ও আশার প্রতীক।

শিল্পের শুরু: ‘Cheeks on Fleek’

২০১২ সালে আয়েনের শিল্পজীবন শুরু হয় ‘Cheeks on Fleek’ নামের সিরিজ দিয়ে। সেখানে তিনি আধুনিক নারীর অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছিলেন বিমূর্ত ও আকারধর্মী শিল্পের সংমিশ্রণে। শিল্পী বলেন, “এই নারীগুলো আমারই প্রতিবিম্ব—একজন নারী, মা ও প্রেমিকা হিসেবে।” প্রতিটি চিত্র তাঁর জীবনের খোলা ডায়েরি, যেখানে লুকানো নেই দুর্বলতা বা সাফল্য।

মহামারির সময়ের নতুন অনুপ্রেরণা

কোভিড মহামারির সময়ে, যখন বাইরের জগত থমকে গিয়েছিল, কুইয়াস কাঠের টুকরো নিয়ে শুরু করেন নতুন পরীক্ষা। সীমিত সম্পদের মধ্যেই তিনি তৈরি করেন ক্ষুদ্র রঙিন ঘর, যা পরে রূপ নেয় তাঁর স্বপ্নের শহর ‘Ayen’s Little Town’-এ। শিল্পী বলেন, “এটা শুরু হয়েছিল এক ধরনের মানসিক থেরাপি হিসেবে। কিন্তু বিশ্ব যখন একাকিত্বে ভুগছিল, তখন আমার ছোট শহর মনে করিয়ে দিত—আমরা সবাই এখনও একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।”

নারীর মমতা ও ‘Ina ng Tahanan’

পরবর্তীতে আয়েন তাঁর দুটি সিরিজ—‘Cheeks on Fleek’ ও ‘Ayen’s Little Town’—কে যুক্ত করেন এক প্রতীকী চিত্রে: মাথায় ক্ষুদ্র ঘর-সমৃদ্ধ এক নারীর প্রতিমূর্তি। তিনি এই কাজের নাম দেন ‘Ina ng Tahanan’ বা “গৃহের মা”। শিল্পীর ভাষায়, “একজন পুরুষ বাড়ি তৈরি করে, কিন্তু একজন নারী সেটিকে ঘর বানায়।” এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁর শিল্পের প্রাণ—ভালোবাসা, মমতা ও গৃহের উষ্ণতার প্রতিচ্ছবি।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার

আয়েন কুইয়াসের শিল্প ইতিমধ্যেই ছুঁয়ে গেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চকে। মালয়েশিয়া আর্ট এক্সপো, সিঙ্গাপুরের Arts Apart, ইতালি, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর প্রদর্শনী হয়েছে। তাঁর বিখ্যাত চিত্র ‘Sopistikada’ মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় এশিয়ান আর্ট অকশনে বিক্রি হয়ে এখন নিউইয়র্কের এক গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে।
২০২২ সালে ‘Ayen’s Little Town’ প্রদর্শিত হয় ম্যানিলার এডসা মহাসড়কের বিশাল LED বিলবোর্ডে এবং একই বছর এটি Philippine Museums Yearbook-এর প্রচ্ছদে স্থান পায়। পরের বছর তিনি নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে প্রদর্শিত “বিশ্বের ১০০ নারী শিল্পী”-এর তালিকায় জায়গা করে নেন। তাঁর সাফল্যের তালিকায় রয়েছে ভেনিসের International Pegasus Prize এবং ওয়াশিংটন ডি.সি.-র Leader Protagonist of the Art সম্মাননাও।

শিল্প আন্দোলন ও সমাজে অবদান

ব্যক্তিগত অর্জনের বাইরে, কুইয়াস ২০১৬ সালে Contemporary Art Movement of the Philippines (CAMP) প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য বিশ্বদরবারে ফিলিপাইন শিল্পীদের জায়গা করে দেওয়া। তাঁর বিশ্বাস, “আমি পরিকল্পনা করে কিছু করি না—আমি কাজের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাই।” এই উক্তিই তাঁর শিল্প ও জীবনের দর্শনের সংক্ষিপ্তসার।

সমাপনী ভাবনা

আয়েন কুইয়াসের শিল্পকর্ম কেবল রঙের খেলা নয়, বরং নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের নির্মাণ, পুনর্গঠন ও ঘর-সংহতির গল্প। কাঠের টুকরো, রঙ ও মমতার বুননে গড়া তাঁর ছোট্ট শহর দেখায়—ঘর মানে শুধু দেয়াল-ছাদ নয়; ঘর মানে ভালোবাসা, সংহতি ও আশা।