আন্টানানারিভোর পানির সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে ঘিরে ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া তরুণদের আন্দোলনে নতুন বাঁক এসেছে। অভিজাত ক্যাপসাট ইউনিটের কিছু সদস্য শনিবার বিক্ষোভকারীদেরকে কড়া পাহারায় থাকা ‘মে ১৩ স্কয়ার’-এ ঢুকিয়ে দেন। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী রুফিন ফর্চুনাৎ জাফিসাম্বো সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানান। আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ, জাতীয় ক্ষমাপ্রার্থনা এবং সিনেট ও নির্বাচন কমিশন বিলুপ্তির দাবি তুলেছেন। জাতিসংঘের হিসাবে অন্তত ২২ জন নিহত ও ১০০ জন আহত; সরকার বলছে সংখ্যা কম।
কী ঘটেছে শনিবার
- রাজধানীতে দেশজুড়ে তরুণদের নেতৃত্বে চলা বিক্ষোভে উত্তেজনা চরমে ওঠে।
- ক্যাপসাট ইউনিটের কয়েক ডজন সৈনিক ব্যারাক ছেড়ে হাজারো বিক্ষোভকারীকে ‘মে ১৩ স্কয়ার’-এ নিয়ে যান—যে স্থানটি সাম্প্রতিক অস্থিরতার সময় থেকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল।
- সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো ভিডিওতে ওই সৈনিকদের “জনগণকে সমর্থন” করার আহ্বান শোনা যায়।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: সংলাপ ও ঐক্য
রাষ্ট্রীয় টিভি এম-এ দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জাফিসাম্বো বলেন, সরকার তরুণদের, শ্রমিক ইউনিয়ন এমনকি সামরিক বাহিনीसহ “সব পক্ষের কথা শুনতে ও সংলাপে বসতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”
গত সপ্তাহে সরকার ভেঙে নতুন প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তামন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হলেও জনঅসন্তোষ কমেনি বলে তিনি স্বীকার করেন।
সেনাবাহিনীর অবস্থান
- সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল জসেলিন রাকতুসন স্থানীয় গণমাধ্যমে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান, “আলোচনার মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করুন।”
- ক্যাপসাট ইউনিট ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনার ক্ষমতায় ওঠায় ভূমিকা রেখেছিল—তাই তাদের অংশবিশেষের প্রকাশ্য সমর্থন আন্দোলনে বড় মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছে।

বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি
- প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ।
- রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা।
- সিনেট ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিলুপ্তি।
কেন এই বিক্ষোভ
- তীব্র বিদ্যুৎ ও পানির সংকটের প্রতিবাদে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু।
- কেনিয়া ও নেপালের জেন জেড নেতৃত্বাধীন আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার কথা আন্দোলনকারীরা বলছেন।
- ২০২৩ সালের পুনর্নির্বাচনের পর রাজোয়েলিনার শাসনের জন্য এটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
ভুয়া খবর ও প্রেসিডেন্টের অবস্থান
সামাজিক মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে রাতে প্রেসিডেন্সি এক বিবৃতিতে জানায়, তিনি “দেশেই আছেন” এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন।

হতাহতের হিসাব: বিতর্কিত সংখ্যা
- জাতিসংঘের হিসাবে অস্থিরতায় অন্তত ২২ জন নিহত ও ১০০ জন আহত।
- সরকার এ সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে; রাজোয়েলিনা বলেছেন, নিহতের সংখ্যা ১২।
প্রেক্ষাপট: রাজনৈতিক প্রতীক ‘মে ১৩ স্কয়ার’
আন্টানানারিভোর ‘মে ১৩ স্কয়ার’ মাদাগাস্কারের বহু রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্র। সাম্প্রতিক অস্থিরতার সময় এটি ছিল সবচেয়ে কঠোরভাবে পাহারায় থাকা এলাকা। শনিবারের ‘সামরিক এসকর্টে প্রবেশ’ ঘটনাটি তাই আন্দোলনের শক্তি ও সাহসের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
পরবর্তী সম্ভাব্য পথ
- সরকারের সংলাপের প্রস্তাব গতি পেলে উত্তেজনা কমতে পারে, তবে দাবিগুলো মেনে না নিলে অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
- সেনাবাহিনীর ভেতরের মতভেদের ইঙ্গিত রাজনৈতিক সমীকরণে অনিশ্চয়তা বাড়াতে পারে।
- নাগরিক সেবা—বিদ্যুৎ ও পানির জট নিরসনে দ্রুত ফল না এলে জনঅসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
সামরিক বাহিনীর একটি অংশের নীরবতা ভাঙা ও রাজধানীর প্রতীকী স্কয়ারে তরুণদের প্রবেশ মাদাগাস্কারের সংকটকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। একদিকে সরকারের সংলাপের আহ্বান, অন্যদিকে কঠোর রাজনৈতিক দাবি—এই টানাপোড়েনে দেশটি এখন এক অনিশ্চিত সংক্রমণে দাঁড়িয়ে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















