০৩:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
এরশাদের উদ্যোগেই সাংবিধানিক স্থিতি নিশ্চিত হয়েছিল: জিএম কাদের নাইজেরিয়ায় মুক্তি পেয়েছে অপহৃত ১০০ স্কুলশিক্ষার্থী নিউইয়র্কের অভিবাসীদের অধিকার জানালেন নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি চীনা নারীর টানাপোড়েন: আধুনিক প্রেম, পুরোনো কৌমার্যচাপ ট্রাম্পের সঞ্চালনায় কেনেডি সেন্টার অনার্সে স্ট্যালন ও কিস সম্মানিত রোমে ব্রুনেলো কুচিনেল্লির জীবনভিত্তিক চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে তারকার মেলা চীনের এআই অগ্রযাত্রা কেন কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক হওয়া জরুরি কাজাখস্তানের ইলি নদী পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা: বড় স্বপ্নের সামনে পানি-সংকট বিরাট কোহলির ‘১০০ সেঞ্চুরির’ পথে শেষ লড়াই: আর কত সময় লাগতে পারে? ইউরোপের সার্বভৌমত্ব সংকটে

চীনে চাহিদা ও উৎপাদন খাতে স্থবিরতা—মূল্যপতনে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা

অর্থনৈতিক মন্দা ও আস্থার সংকট

চীনের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ অব্যাহত রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির ভোক্তা ও উৎপাদক উভয় সূচকেই মূল্যপতন দেখা গেছে, যা নীতিনির্ধারকদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দীর্ঘমেয়াদি রিয়েল এস্টেট সংকট এবং চীন–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য উত্তেজনা ব্যবসায়িক আস্থাকে নড়বড়ে করে তুলেছে।

উৎপাদক মূল্যে তিন বছরের পতন

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (NBS) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে উৎপাদক মূল্যসূচক (PPI) আগের বছরের তুলনায় ২.৩ শতাংশ কমেছে, যা আগস্টের ২.৯ শতাংশ পতনের তুলনায় সামান্য কম। এটি গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম পতন। সরকার উৎপাদন খাতে মূল্য প্রতিযোগিতা কমানোর উদ্যোগ নেওয়ায় এই সংকোচন কিছুটা ধীর হয়েছে।

ভোক্তা মূল্যেও নেমে এসেছে পতন

সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI), আগের বছরের তুলনায় ০.৩ শতাংশ কমেছে। আগস্টে এই হার ছিল ০.৪ শতাংশ। বিশ্লেষকদের হিসেবে, মুদ্রাস্ফীতির এই নিম্নগতি দেশের ভেতরে দুর্বল চাহিদার প্রতিফলন।

Deflationary pressures persist in China on weak demand, overcapacity |  Reuters

ক্যাপিটাল ইকনমিকসের অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং বলেন, “আমরা আশা করছি চলতি বছর ও আগামী বছর উভয় সময়েই চীন ডিফ্লেশনের মধ্যে থাকবে। তবে শুধুমাত্র সরবরাহমুখী পদক্ষেপে সমাধান আসবে না—এর সঙ্গে শক্তিশালী চাহিদা তৈরির উদ্যোগ প্রয়োজন।”

খাদ্যদ্রব্য ও মূল মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা

খাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় ৪.৪ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে শূকরের দাম এক বছরে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে, যদিও সরকার বড় মাপের উৎপাদকদের উৎপাদন কমাতে বলেছিল। অন্যদিকে, মূল মুদ্রাস্ফীতি (যেখানে খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দেওয়া হয়) সেপ্টেম্বরে ১ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি আগস্টের ০.৯ শতাংশের তুলনায় সামান্য বেশি। এই হার গত ১৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভোক্তাদের ব্যয়ের ধস

মধ্য-শরৎ উৎসব ও জাতীয় দিবসের ছুটিতেও ক্রেতাদের ব্যয় কমেছে। দুর্বল চাকরির বাজার এবং রিয়েল এস্টেট খাতের ধসের কারণে সাধারণ মানুষ অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে যাচ্ছে।

ING Group - Wikipedia

নীতিনির্ধারকদের সামনে দ্বিধা

আইএনজি ব্যাংকের প্রধান চীন অর্থনীতিবিদ লিন সং জানান, “তৃতীয় প্রান্তিকের ধীর গতি ও ধারাবাহিক মূল্যপতন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আরও অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রয়োজন হতে পারে। নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোর মতো পদক্ষেপ নিতে পারে।”

এ বছরের মে মাসে চীন সরকার সুদের হার কমানোসহ নানা প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল। সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও নীতিগত সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বড় পরিসরের প্রণোদনা দিলে শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত উত্তাপ সৃষ্টি হতে পারে—যা ২০১৫ সালের বাজার ধসের মতো পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধে বিরতির মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ল : সংবাদ  অনলাইন

শিল্পখাতে মূল্যযুদ্ধের প্রভাব

২০২২ সালের অক্টোবর থেকে কারখানার দরজায় (ফ্যাক্টরি-গেট) পণ্যের দাম ক্রমাগত কমছে, যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পতনের হার কিছুটা কমেছে। সরকার উৎপাদন খাতে মূল্যযুদ্ধ কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে গাড়ি খাতে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে প্রধান অটোমোবাইল কোম্পানিগুলোর মুনাফা ব্যাপকভাবে কমেছে।

বাণিজ্য উত্তেজনা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে পাল্টাপাল্টি শুল্ক ও বাণিজ্য পদক্ষেপ, বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে। বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হলে চীনের রপ্তানি ও উৎপাদন খাত আবারও ধাক্কা খেতে পারে।

 

# চীন, অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যপতন, উৎপাদক মূল্যসূচক, ভোক্তা মূল্যসূচক, বাণিজ্য উত্তেজনা, রিয়েল এস্টেট সংকট, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থনৈতিক প্রণোদনা

জনপ্রিয় সংবাদ

এরশাদের উদ্যোগেই সাংবিধানিক স্থিতি নিশ্চিত হয়েছিল: জিএম কাদের

চীনে চাহিদা ও উৎপাদন খাতে স্থবিরতা—মূল্যপতনে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা

০৪:৩৪:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

অর্থনৈতিক মন্দা ও আস্থার সংকট

চীনের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ অব্যাহত রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির ভোক্তা ও উৎপাদক উভয় সূচকেই মূল্যপতন দেখা গেছে, যা নীতিনির্ধারকদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দীর্ঘমেয়াদি রিয়েল এস্টেট সংকট এবং চীন–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য উত্তেজনা ব্যবসায়িক আস্থাকে নড়বড়ে করে তুলেছে।

উৎপাদক মূল্যে তিন বছরের পতন

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (NBS) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে উৎপাদক মূল্যসূচক (PPI) আগের বছরের তুলনায় ২.৩ শতাংশ কমেছে, যা আগস্টের ২.৯ শতাংশ পতনের তুলনায় সামান্য কম। এটি গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম পতন। সরকার উৎপাদন খাতে মূল্য প্রতিযোগিতা কমানোর উদ্যোগ নেওয়ায় এই সংকোচন কিছুটা ধীর হয়েছে।

ভোক্তা মূল্যেও নেমে এসেছে পতন

সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI), আগের বছরের তুলনায় ০.৩ শতাংশ কমেছে। আগস্টে এই হার ছিল ০.৪ শতাংশ। বিশ্লেষকদের হিসেবে, মুদ্রাস্ফীতির এই নিম্নগতি দেশের ভেতরে দুর্বল চাহিদার প্রতিফলন।

Deflationary pressures persist in China on weak demand, overcapacity |  Reuters

ক্যাপিটাল ইকনমিকসের অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং বলেন, “আমরা আশা করছি চলতি বছর ও আগামী বছর উভয় সময়েই চীন ডিফ্লেশনের মধ্যে থাকবে। তবে শুধুমাত্র সরবরাহমুখী পদক্ষেপে সমাধান আসবে না—এর সঙ্গে শক্তিশালী চাহিদা তৈরির উদ্যোগ প্রয়োজন।”

খাদ্যদ্রব্য ও মূল মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা

খাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় ৪.৪ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে শূকরের দাম এক বছরে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে, যদিও সরকার বড় মাপের উৎপাদকদের উৎপাদন কমাতে বলেছিল। অন্যদিকে, মূল মুদ্রাস্ফীতি (যেখানে খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দেওয়া হয়) সেপ্টেম্বরে ১ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি আগস্টের ০.৯ শতাংশের তুলনায় সামান্য বেশি। এই হার গত ১৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভোক্তাদের ব্যয়ের ধস

মধ্য-শরৎ উৎসব ও জাতীয় দিবসের ছুটিতেও ক্রেতাদের ব্যয় কমেছে। দুর্বল চাকরির বাজার এবং রিয়েল এস্টেট খাতের ধসের কারণে সাধারণ মানুষ অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে যাচ্ছে।

ING Group - Wikipedia

নীতিনির্ধারকদের সামনে দ্বিধা

আইএনজি ব্যাংকের প্রধান চীন অর্থনীতিবিদ লিন সং জানান, “তৃতীয় প্রান্তিকের ধীর গতি ও ধারাবাহিক মূল্যপতন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আরও অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রয়োজন হতে পারে। নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোর মতো পদক্ষেপ নিতে পারে।”

এ বছরের মে মাসে চীন সরকার সুদের হার কমানোসহ নানা প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল। সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও নীতিগত সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে বড় পরিসরের প্রণোদনা দিলে শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত উত্তাপ সৃষ্টি হতে পারে—যা ২০১৫ সালের বাজার ধসের মতো পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধে বিরতির মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ল : সংবাদ  অনলাইন

শিল্পখাতে মূল্যযুদ্ধের প্রভাব

২০২২ সালের অক্টোবর থেকে কারখানার দরজায় (ফ্যাক্টরি-গেট) পণ্যের দাম ক্রমাগত কমছে, যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পতনের হার কিছুটা কমেছে। সরকার উৎপাদন খাতে মূল্যযুদ্ধ কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে গাড়ি খাতে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে প্রধান অটোমোবাইল কোম্পানিগুলোর মুনাফা ব্যাপকভাবে কমেছে।

বাণিজ্য উত্তেজনা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে পাল্টাপাল্টি শুল্ক ও বাণিজ্য পদক্ষেপ, বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে। বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হলে চীনের রপ্তানি ও উৎপাদন খাত আবারও ধাক্কা খেতে পারে।

 

# চীন, অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যপতন, উৎপাদক মূল্যসূচক, ভোক্তা মূল্যসূচক, বাণিজ্য উত্তেজনা, রিয়েল এস্টেট সংকট, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থনৈতিক প্রণোদনা