দ্রুত আধুনিকায়নের মধ্যেও চীনে এখনো প্রভাবশালী বহু পুরোনো যৌন ও বিবাহমূল্যবোধ। নতুন প্রজন্ম সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা চাইছে, কিন্তু বিয়ে ও পরিবারে রয়ে গেছে কৌমার্যের কঠোর প্রত্যাশা। এই দ্বৈত বাস্তবতায় প্রেম, যৌনতা ও বিবাহের সংযোগস্থলে বহু নারী কঠিন মানসিক টানাপোড়েনে পড়ছেন।
গবেষণায় উঠে আসা ‘কৌমার্য যুদ্ধ’
লন্ডনের এসওএএস-এর অধ্যাপক লিউ জিয়েউ-এর নেতৃত্বে তিন বছরের গবেষণা দেখায়—পশ্চিমা প্রভাবে তরুণরা প্রেমের সম্পর্কে যৌনতার প্রতি উন্মুক্ত হলেও, বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ ও পরিবার এখনো কৌমার্যকেই মূল্য দেয়। ফলে নারীর যৌন সিদ্ধান্ত নেওয়া এক গভীর দ্বন্দ্বে পরিণত হয়।
প্রেমে মুক্তি, বিয়েতে দাবি—দ্বৈত মানদণ্ড
গবেষণা বলছে, তরুণ চীনা পুরুষরা প্রেমের সময় যৌন সম্পর্কে আগ্রহী এবং চাপও দিয়ে থাকেন। কিন্তু বিয়ের সময় একই পুরুষ কৌমার্যের প্রত্যাশা করেন। পরিবারও বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক–কে অপছন্দ করে। এক-সন্তান নীতি প্রজন্মের নারীদের কাছে প্রেমে কৌমার্য হারানোর সিদ্ধান্ত ছিল বড় মানসিক যুদ্ধ।

গবেষণার বিস্তার
২০১৬–২০১৯ সালে শানদং, হুনান, ফুজিয়ানসহ গ্রামাঞ্চল ও তিয়ানজিন, গুয়াংঝু, শিয়ানসহ বড় শহরে ৮০টি পরিবারের ওপর শতাধিক সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তিন প্রজন্মের সামাজিক পরিবর্তন তুলনা করা হয়।
যুব প্রজন্মে বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক বাড়লেও সঙ্গীর সংখ্যা কম
ইন্টারনেট বিস্তার ও সরকারি ব্যাখ্যার পরিবর্তনের পর যৌন স্বাধীনতা বাড়লেও সঙ্গীর সংখ্যা সীমিত থাকে।
তরুণ নারীর ৬০% ও পুরুষের ৮০% বিয়ের আগে যৌনসম্পর্কে জড়ালেও বেশিরভাগের প্রথম সঙ্গীই পরবর্তীতে জীবনসঙ্গী হন। গবেষকদের মতে, চীনে বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক অনেকটাই বিয়ের আগে ‘পরিবর্তনকালীন ধাপ’ হিসেবে কাজ করছে।
যৌনতার সম্মতি—বলা এক, বাস্তব আরেক
প্রথমে পুরুষরা সম্মতিকে গুরুত্ব দেয়ার দাবি করলেও গভীর আলোচনায় দেখা যায় মাত্র ৩০% সত্যিই তা মানেন। কেউ কেউ স্বীকার করেছেন, প্রথম যৌনসম্পর্ক ছিল জোরপূর্বক।
অনেক নারী বিশ্বাস করতেন—প্রথম সঙ্গীকেই বিয়ে করতে হবে। তাই কেউ কেউ সচেতনভাবে প্রবেশমূলক যৌনক্রিয়া এড়িয়ে চলতেন।
কৌমার্যকে সামাজিক ‘বন্ধন’ তৈরির কৌশল হিসেবে ব্যবহার
গবেষণায় উঠে আসে, কোনো নারী যৌন সম্পর্কে রাজি হলে সামাজিক চাপ তাকে সেই পুরুষকেই বিয়ের উপযুক্ত মনে করতে বাধ্য করে। লিউর মতে, এতে লিঙ্গবৈষম্য আরও গভীর হয়।
শহর–গ্রাম বিভাজন ও এক নারীর ব্যতিক্রমী গল্প
বেশিরভাগ নারী বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক–কে চাপ মনে করলেও গুয়াংঝুর লু এক ব্যতিক্রম। তিনি যৌন বিষয়ে স্বাধীন ছিলেন। তাঁর দরিদ্র গ্রামের প্রেমিক তাকে সম্পর্কের সময় অন্যদের সঙ্গে অঙ্গীকারবিহীন যৌনসম্পর্ক করার অনুমতিও দেন—কারণ তার নিজের জন্য সঙ্গী পাওয়া কঠিন। পরে লু অন্য সম্পর্কে চলে গেলে গ্রাম–শহরের যৌন ক্ষমতা-বিভাজন স্পষ্ট হয়।
বাড়ছে পরকীয়াও
গবেষণা বলছে—
২০০৬: পুরুষ ১৬.৫%, নারী ৪.৫%
২০১৫: পুরুষ ৩৩.৪%, নারী ১১.৪%
২০২০: পুরুষ ৩৫%, নারী ২৩%
এখন চীনে পরকীয়া উন্নত দেশগুলোর সমতুল্য, অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি।
তরুণ পুরুষদের ৭০% পরকীয়া সমর্থন করলেও নারীদের মতভেদ রয়েছে।

কেন বাড়ছে সম্পর্ক-বহির্ভূত যৌনতা?
• পশ্চিমা প্রভাব
• ব্যক্তিজীবনে সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া
• যৌন শিল্প বিস্তার
• গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন
• গণমাধ্যমে রোমান্সের আধিক্য
এ ছাড়া ঐতিহ্যগত চাপ—কম বয়সে বিয়ে, প্রেমে নিরুৎসাহ—তরুণদের পার্টনার বেছে নিতে বাধা দেয়, যা পরকীয়াকে বাড়ায়।
তবু পরিবার ভাঙতে অনীহা
সন্তান ও বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ববোধের কারণে বেশিরভাগেই বিবাহ বজায় রাখতে চান।
তরুণ নারীরা বেশি হারে বিবাহবিচ্ছেদ করলেও বয়স বাড়ার পর নতুন সঙ্গী খোঁজা কঠিন হওয়ায় তারা অনীহা দেখান। অনেক পুরুষ মনে করেন—বিচ্ছেদ ব্যয়বহুল, তাই সম্পর্ক রেখেই অন্য সম্পর্কে জড়ানো সহজ।
দাম্পত্যে যৌনতার মান নির্ভর করে জীবনের বাস্তবতায়
বয়স, সন্তান লালন-পালন, কর্মচাপ, গর্ভধারণ—সবই দাম্পত্য যৌনতার ওঠানামা তৈরি করে।
যেসব দম্পতি সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট, তাদের অভিজ্ঞতায়—দীর্ঘদিনের সহায়তা ও বোঝাপড়া গভীর অন্তরঙ্গতা তৈরি করে, যা যৌন জীবনকেও সমৃদ্ধ করে।
#Tags
#ChinaSociety #WomenAndMarriage #VirginityPressure #GenderStudies #ModernRelationships #SexualNorms #SarkahonFeature
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















