০৩:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
ইউক্রেন সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা: কেজিবি প্রধানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা কীভাবে আপনার জন্য উপযুক্ত যোগব্যায়াম [ yoga ] ক্লাস নির্বাচন করবেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ‘আমি জানি কে আমি, তবে সেটি গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’- ভারতীয় সিনেমার নব্যা নায়ের একান্ত কথা কানাডায় তিমিদের জীবনরক্ষা নিয়ে বিতর্ক: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প পথ এখনো খোলা নেপালে অগ্নিকাণ্ড: একটি সমন্বিত ধ্বংসাত্মক অভিযান একটি রাতের আধুনিক আর অ্যান্ড বি সোল: কোরিয়ান ট্রিওর দাপটে কুয়ালালামপুরে বাজল সঙ্গীতের সুর শরীফা হানিস্যার ‘পুনর্জন্ম’ ভারতের বাজারে অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হুন্দাইয়ের ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা টেলর সুইফটের নতুন কৌশলে অ্যালবাম বিক্রির রেকর্ড ভাঙল আধুনিকতা, ঐতিহ্য আর স্বাচ্ছন্দ্যের মিশেলে মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ ব্র্যান্ড স্প্ল্যাশের নতুন সংগ্রহ

জুলাই চার্টার স্বাক্ষর ঘিরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা

রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি হিসেবে ঘোষিত ঐতিহাসিক ‘জুলাই ন্যাশনাল চার্টার’ স্বাক্ষরকে ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মতভেদ কাটেনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকের পরও অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো কোনো দৃশ্যমান সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি, ফলে শুক্রবারের অনুষ্ঠানের আগে নতুন সংকটের ইঙ্গিত মিলছে।


রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ছায়ায় জুলাই চার্টার স্বাক্ষর

বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের আহ্বানে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বৈঠক শেষে জানান, “জুলাই চার্টার নিয়ে নতুন সংকট” সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মতভেদ কমার পরিবর্তে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অংশগ্রহণকারীরা।


গণভোট ও সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে বিভক্তি

চার্টার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হবে কি না, এবং বিভিন্ন দলের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর মধ্যে মতভেদ কীভাবে মিটবে— এসব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।

জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) চার্টারে স্বাক্ষরের আগে কিছু শর্ত দিয়েছে। জামায়াত দাবি করেছে— নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি জানিয়েছে, চাইলে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট দুটোই আয়োজন করা যেতে পারে।

এনসিপি ও চারটি বামপন্থি দল প্রশ্ন তুলেছে— সংস্কার সংক্রান্ত মতভেদ নিরসনের প্রক্রিয়া কীভাবে কার্যকর হবে। এনসিপি আরও বলেছে, চার্টার বাস্তবায়নের জন্য স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশ বা আইনি আদেশ থাকা জরুরি।


বাম দলগুলোর স্বাক্ষর না করার ঘোষণা

বাম ধারার চারটি দল— কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাসদ (মার্কসবাদী)— ঘোষণা দিয়েছে তারা এই চার্টারে স্বাক্ষর করবে না।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন: “চারটি মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বিষয় এবং মতভেদের অস্পষ্টতা চার্টারটিকে গ্রহণযোগ্য করে না।”

তবে এসব সত্ত্বেও কমিশন আশাবাদী যে শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে চার্টার স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে।


ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়া ও প্রেক্ষাপট

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে— সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন খাতে পরিবর্তনের লক্ষ্যে।

ফেব্রুয়ারিতে এসব কমিশনের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৭টি সংস্কার ক্ষেত্রে পূর্ণ ঐকমত্য এবং বাকি ৬৭টি বিষয়ে ‘মতভেদের নোট’সহ মোট ৮৪টি পয়েন্ট চূড়ান্ত করে।

এর মধ্যে ৪৭টি পয়েন্ট সংবিধান-সংশোধননির্ভর, আর বাকি ৩৭টি আইন, অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য বলে জানানো হয়েছে।

৪০ পৃষ্ঠার এই চার্টারে সংস্কারের পটভূমি, বিস্তারিত প্রস্তাব, দলের অঙ্গীকার ও স্বাক্ষরের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা হয়েছে।


বৈঠকের উপস্থিতি ও সম্প্রচার

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে প্রায় ৭৫ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দার।

রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের মঈনুল হক আকন্দ, এনসিপির আখতার হোসেন, সিপিবির সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণফোরামের মিজানুর রহমান, বাসদের বজলুর রশিদ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর মাসুদ রানা, এলডিপির শহিদাত হোসেন সেলিমসহ মোট ৩২টি দল ও এক জোটের প্রতিনিধি অংশ নেন।


বিএনপির অবস্থান: নির্বাচন ও চার্টার আলাদা বিষয়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বৈঠক শেষে বলেন, “জুলাই চার্টারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনই আমাদের লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, “দেশ চায় সংস্কার, আমরাও চাই। ক্ষমতায় যে-ই আসুক, তাকে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে। গণভোটও হতে পারে, প্রয়োজনে নির্বাচনের দিনেই।”

সালাহউদ্দিন আরও জানান, প্রতিটি দল চার্টারে স্বাক্ষর করবে, যেখানে মতভেদের জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। ভোটে জয়ী দল তখন জনগণের ম্যান্ডেট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো বাস্তবায়ন করবে।


জামায়াতের দাবি: নভেম্বরে গণভোট আয়োজন

জামায়াতের নায়েবে-আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “গণভোটের সময় নিয়ে দলের ভেতরে কিছু মতবিরোধ আছে। আমরা বলেছি— গণভোট রাষ্ট্রীয় সংস্কার কমিশনের জন্য এটি জাতীয় নির্বাচনের অংশ নয়।”

তিনি প্রস্তাব করেন, নভেম্বর মাসেই গণভোট হলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সময় পাওয়া যাবে। তাহের বলেন, “একই দিনে গণভোট ও নির্বাচন হলে সাংবিধানিক কাঠামোতে জটিলতা তৈরি হবে।”

তিনি জানান, জামায়াত চার্টারের যে ধারাগুলোতে সম্মতি রয়েছে সেগুলোতে স্বাক্ষর করবে এবং গণভোট সংক্রান্ত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে দাখিল করবে।


এনসিপির শর্ত ও বাস্তবায়ন রূপরেখা দাবি

এনসিপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, “স্বাক্ষরের আগে বাস্তবায়নের রূপরেখা স্পষ্ট হওয়া দরকার। জনগণের কাছে পুরো প্রক্রিয়া পরিষ্কার না থাকলে চার্টারের উদ্দেশ্য সফল হবে না।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে প্রধান উপদেষ্টা চার্টার বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক বা সাংবিধানিক আদেশ জারি করবেন।

“আমরা চাই এটি শুধু প্রতীকী দলিল না হয়ে বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য হোক,” বলেন আখতার।


কমিশনের আশাবাদ ও উৎসবের প্রস্তুতি

বিরোধ সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে শুক্রবার এক ‘উৎসবমুখর পরিবেশে’ চার্টার স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি জানান, স্বাক্ষরে ব্যবহৃত কলম ও চার্টারের আসল কপি জাতীয় ইতিহাস জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে, যাতে এই দলিলটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে স্মরণীয় থাকে।

কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘সংকট’ সংবাদকে ‘ভ্রান্তি’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন, সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে শুক্রবারের অনুষ্ঠান আনন্দময় পরিবেশেই হবে।”


 ঐক্যের স্বাক্ষর না ভাঙনের বার্তা?

‘জুলাই চার্টার’ রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও স্বাক্ষরপূর্ব এই মতভেদ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন— শুক্রবারের অনুষ্ঠানে কি সত্যিই সব দল এক টেবিলে বসবে, নাকি জাতীয় ঐক্যের এই প্রচেষ্টা আরেকটি বিভক্তির দলিল হয়ে থাকবে?


#জুলাইচার্টার #রাজনীতি #মুহাম্মদইউনুস #গণভোট #সংস্কার #বিএনপি #জামায়াত #এনসিপি #অন্তর্বর্তীসরকার #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউক্রেন সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা: কেজিবি প্রধানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা

জুলাই চার্টার স্বাক্ষর ঘিরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা

১১:৩৩:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি হিসেবে ঘোষিত ঐতিহাসিক ‘জুলাই ন্যাশনাল চার্টার’ স্বাক্ষরকে ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মতভেদ কাটেনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকের পরও অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো কোনো দৃশ্যমান সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি, ফলে শুক্রবারের অনুষ্ঠানের আগে নতুন সংকটের ইঙ্গিত মিলছে।


রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ছায়ায় জুলাই চার্টার স্বাক্ষর

বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের আহ্বানে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বৈঠক শেষে জানান, “জুলাই চার্টার নিয়ে নতুন সংকট” সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মতভেদ কমার পরিবর্তে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অংশগ্রহণকারীরা।


গণভোট ও সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে বিভক্তি

চার্টার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা হবে কি না, এবং বিভিন্ন দলের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর মধ্যে মতভেদ কীভাবে মিটবে— এসব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।

জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) চার্টারে স্বাক্ষরের আগে কিছু শর্ত দিয়েছে। জামায়াত দাবি করেছে— নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি জানিয়েছে, চাইলে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট দুটোই আয়োজন করা যেতে পারে।

এনসিপি ও চারটি বামপন্থি দল প্রশ্ন তুলেছে— সংস্কার সংক্রান্ত মতভেদ নিরসনের প্রক্রিয়া কীভাবে কার্যকর হবে। এনসিপি আরও বলেছে, চার্টার বাস্তবায়নের জন্য স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশ বা আইনি আদেশ থাকা জরুরি।


বাম দলগুলোর স্বাক্ষর না করার ঘোষণা

বাম ধারার চারটি দল— কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাসদ (মার্কসবাদী)— ঘোষণা দিয়েছে তারা এই চার্টারে স্বাক্ষর করবে না।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন: “চারটি মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বিষয় এবং মতভেদের অস্পষ্টতা চার্টারটিকে গ্রহণযোগ্য করে না।”

তবে এসব সত্ত্বেও কমিশন আশাবাদী যে শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে চার্টার স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে।


ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়া ও প্রেক্ষাপট

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে— সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন খাতে পরিবর্তনের লক্ষ্যে।

ফেব্রুয়ারিতে এসব কমিশনের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৭টি সংস্কার ক্ষেত্রে পূর্ণ ঐকমত্য এবং বাকি ৬৭টি বিষয়ে ‘মতভেদের নোট’সহ মোট ৮৪টি পয়েন্ট চূড়ান্ত করে।

এর মধ্যে ৪৭টি পয়েন্ট সংবিধান-সংশোধননির্ভর, আর বাকি ৩৭টি আইন, অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য বলে জানানো হয়েছে।

৪০ পৃষ্ঠার এই চার্টারে সংস্কারের পটভূমি, বিস্তারিত প্রস্তাব, দলের অঙ্গীকার ও স্বাক্ষরের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা হয়েছে।


বৈঠকের উপস্থিতি ও সম্প্রচার

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে প্রায় ৭৫ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দার।

রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের মঈনুল হক আকন্দ, এনসিপির আখতার হোসেন, সিপিবির সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণফোরামের মিজানুর রহমান, বাসদের বজলুর রশিদ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর মাসুদ রানা, এলডিপির শহিদাত হোসেন সেলিমসহ মোট ৩২টি দল ও এক জোটের প্রতিনিধি অংশ নেন।


বিএনপির অবস্থান: নির্বাচন ও চার্টার আলাদা বিষয়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বৈঠক শেষে বলেন, “জুলাই চার্টারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনই আমাদের লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, “দেশ চায় সংস্কার, আমরাও চাই। ক্ষমতায় যে-ই আসুক, তাকে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে। গণভোটও হতে পারে, প্রয়োজনে নির্বাচনের দিনেই।”

সালাহউদ্দিন আরও জানান, প্রতিটি দল চার্টারে স্বাক্ষর করবে, যেখানে মতভেদের জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। ভোটে জয়ী দল তখন জনগণের ম্যান্ডেট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো বাস্তবায়ন করবে।


জামায়াতের দাবি: নভেম্বরে গণভোট আয়োজন

জামায়াতের নায়েবে-আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “গণভোটের সময় নিয়ে দলের ভেতরে কিছু মতবিরোধ আছে। আমরা বলেছি— গণভোট রাষ্ট্রীয় সংস্কার কমিশনের জন্য এটি জাতীয় নির্বাচনের অংশ নয়।”

তিনি প্রস্তাব করেন, নভেম্বর মাসেই গণভোট হলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সময় পাওয়া যাবে। তাহের বলেন, “একই দিনে গণভোট ও নির্বাচন হলে সাংবিধানিক কাঠামোতে জটিলতা তৈরি হবে।”

তিনি জানান, জামায়াত চার্টারের যে ধারাগুলোতে সম্মতি রয়েছে সেগুলোতে স্বাক্ষর করবে এবং গণভোট সংক্রান্ত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে দাখিল করবে।


এনসিপির শর্ত ও বাস্তবায়ন রূপরেখা দাবি

এনসিপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, “স্বাক্ষরের আগে বাস্তবায়নের রূপরেখা স্পষ্ট হওয়া দরকার। জনগণের কাছে পুরো প্রক্রিয়া পরিষ্কার না থাকলে চার্টারের উদ্দেশ্য সফল হবে না।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে প্রধান উপদেষ্টা চার্টার বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক বা সাংবিধানিক আদেশ জারি করবেন।

“আমরা চাই এটি শুধু প্রতীকী দলিল না হয়ে বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য হোক,” বলেন আখতার।


কমিশনের আশাবাদ ও উৎসবের প্রস্তুতি

বিরোধ সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে শুক্রবার এক ‘উৎসবমুখর পরিবেশে’ চার্টার স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি জানান, স্বাক্ষরে ব্যবহৃত কলম ও চার্টারের আসল কপি জাতীয় ইতিহাস জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে, যাতে এই দলিলটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে স্মরণীয় থাকে।

কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘সংকট’ সংবাদকে ‘ভ্রান্তি’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন, সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে শুক্রবারের অনুষ্ঠান আনন্দময় পরিবেশেই হবে।”


 ঐক্যের স্বাক্ষর না ভাঙনের বার্তা?

‘জুলাই চার্টার’ রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও স্বাক্ষরপূর্ব এই মতভেদ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন— শুক্রবারের অনুষ্ঠানে কি সত্যিই সব দল এক টেবিলে বসবে, নাকি জাতীয় ঐক্যের এই প্রচেষ্টা আরেকটি বিভক্তির দলিল হয়ে থাকবে?


#জুলাইচার্টার #রাজনীতি #মুহাম্মদইউনুস #গণভোট #সংস্কার #বিএনপি #জামায়াত #এনসিপি #অন্তর্বর্তীসরকার #সারাক্ষণরিপোর্ট