মেরিনল্যান্ডের হুমকি ও সরকারের অবস্থান
কানাডার অন্টারিও প্রদেশের নিয়াগ্রা ফলসের মেরিনল্যান্ড পার্ক সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে — যদি সরকার তাদের তিমিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ না দেয়, তবে তারা বাধ্য হয়ে পড়বে ৩০টি বেলুগা তিমিকে হত্যা করতে। এই হুমকি দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
মেরিনল্যান্ড দাবি করছে, তারা তিমিগুলোকে চীনের চিমলং ওশান কিংডমে পাঠানোর অনুমতি না পেলে প্রাণীগুলোকে বাঁচানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে, অন্টারিও সরকার ও ফেডারেল প্রশাসন পরস্পরকে দায়ী করছে অনুমতি বাতিলের জন্য।
ফেডারেল সরকার এই ‘চাঁদাবাজি’ ধরনের চাপ প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে প্রাণী অধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, মেরিনল্যান্ডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য — তিমিদের বাঁচিয়ে রাখার একাধিক বিকল্প পথ এখনো রয়েছে।:বিকল্প আশ্রয়ের সম্ভাবনা
নোভা স্কোশিয়ার ‘হোয়েল স্যাংচুয়ারি প্রজেক্ট’ বর্তমানে নতুন আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যেখানে বেলুগাগুলোকে স্থানান্তর করা সম্ভব হতে পারে। একইভাবে আইসল্যান্ডেও একটি বেলুগা স্যাংচুয়ারি রয়েছে, যেখানে চীনের সামুদ্রিক উদ্যান থেকে উদ্ধারকৃত দুই তিমি — লিটল হোয়াইট ও লিটল গ্রে — বর্তমানে নিরাপদে বাস করছে।
এছাড়া কানাডার মধ্যেই একদল বিনিয়োগকারী মেরিনল্যান্ডের বর্তমান জায়গায় বড় ও গভীর ট্যাঙ্ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে প্রাণীগুলো আরও মানবিক পরিবেশে থাকতে পারে।
ভ্যাঙ্কুভার অ্যাকুয়ারিয়ামেও প্রয়োজন হলে আবার তিমিদের রাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব। স্থানীয় মেয়র ও পার্ক বোর্ডের অনুমতি পেলে এটি জরুরি আশ্রয় হিসেবে কাজ করতে পারে।
অন্যান্য দেশ ও সম্প্রদায়ের আগ্রহ
নিউফাউন্ডল্যান্ডের বারগিও শহরের মেয়র জানিয়েছেন, তারা তিমিগুলোকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত এবং তাদের পরিবহনের ব্যয় বহন করতেও আগ্রহী। ইনুইট সম্প্রদায়ও একটি প্রশিক্ষণভিত্তিক প্রকল্প প্রস্তাব করেছে, যার মাধ্যমে তিমিদের ধীরে ধীরে বন্যপ্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বিকল্প আশ্রয়ের প্রস্তাব এসেছে। কানেকটিকাটের মিস্টিক অ্যাকুয়ারিয়ামসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তিমিগুলোকে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, শর্ত হলো — ওখানে তাদের প্রজনন করা হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনে পাঠানোর চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা আইসল্যান্ডের মতো নিকটবর্তী গন্তব্য অনেক বেশি নিরাপদ, কারণ দীর্ঘ সমুদ্রপথে পরিবহনের সময় অনেক প্রাণীই টিকে থাকতে পারে না।
আইনি সুরক্ষা ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
কানাডার আইন অনুযায়ী বেলুগা তিমি ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর বিশেষ সুরক্ষা রয়েছে। অন্টারিওর ‘প্রোভিন্সিয়াল অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার সার্ভিসেস’ (PAWS) চাইলে মেরিনল্যান্ড থেকে প্রাণীগুলোকে জব্দ করতে পারে যদি প্রমাণ হয় যে তারা বিপদের মুখে রয়েছে।
এই আইনি প্রক্রিয়ায় প্রাণীগুলোকে তৎক্ষণাৎ সরিয়ে নেওয়ার দরকার নেই — বরং তাদের ‘আইনি হেফাজতে’ নেওয়া হয়, যতক্ষণ না তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ স্থানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এই সময়ে মেরিনল্যান্ডকে প্রাণীদের যত্নের ব্যয় বহন করতে হবে।
যদি মেরিনল্যান্ড দেউলিয়া ঘোষণা করে, তাহলে প্রাদেশিক সরকার অন্যান্য ঋণদাতাদের সঙ্গে আদালতের মাধ্যমে যত্নের খরচ উদ্ধার করতে পারবে। জমির মূল্য বিবেচনায়, সেই অর্থ আদায় হওয়া কঠিন হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের করণীয় ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
প্রাণীগুলোকে জব্দ করার পর সরকার ‘ওয়াইল্ড অ্যানিমাল অ্যান্ড প্ল্যান্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারপ্রোভিন্সিয়াল ট্রেড অ্যাক্ট’ অনুযায়ী দেশীয় বা আন্তর্জাতিক অনুমতির আবেদন করতে পারবে। এতে তিমিদের আইসল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, নোভা স্কোশিয়া বা নিউফাউন্ডল্যান্ডে পাঠানো সম্ভব হবে।
আইনবিদ ও প্রাণী অধিকারকর্মীদের মতে, মেরিনল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে এই প্রাণীগুলো থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। এখন তাদের প্রতি এমন হুমকি দেখানো নৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য। প্রতিষ্ঠানটি আর প্রাণীগুলোর অভিভাবক হওয়ার যোগ্য নয়।
সব প্রাণীর জন্য পুনর্বাসনের দাবি
সরকারের উচিত দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে তিমিগুলোকে সুরক্ষিত করা এবং স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। পাশাপাশি ডলফিন, সীল, সি লায়ন, হরিণ ও ভালুকসহ মেরিনল্যান্ডে আটকে থাকা অন্যান্য প্রাণীর পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও জরুরি।
সব প্রাণীরই একটি দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ পাওয়া উচিত — এবং সেই দায়িত্ব এখন রাষ্ট্রের।
# কানাডা, মেরিনল্যান্ড, বেলুগা তিমি, প্রাণী অধিকার, পরিবেশ, নোভা স্কোশিয়া, আইসল্যান্ড, প্রাণী সুরক্ষা আইন, সারাক্ষণ রিপোর্ট