০৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশীকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রাণঘাতী শঙ্খিনী সাপ ( ব্যান্ডেড ক্রাইট): রঙিন সৌন্দর্যের আড়ালে লুকানো মারাত্মক বিষ সৃজনশীলতা ও সাহিত্যের উৎসব: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে লিট-কার্নিভাল ২০২৫ হাঙ্গেরির রাজনৈতিক সংকট, ভিক্টর অরবান ও প্রোপাগান্ডার চ্যালেঞ্জ  কুড়িগ্রামের নয়টি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষায় কেউ পাস করেনি রাফাহ খুলতে ইসরায়েল–মিসরের সমন্বয়, অস্থির যুদ্ধবিরতির মাঝে সতর্ক অগ্রগতি ভারতের কুইক-কমার্সে জেপ্টোর ৪৫০ মিলিয়ন ডলার—গতি নয়, লাভজনক ‘ডেনসিটি’ই লক্ষ্য” কেয়া পায়েলের জীবন কাহিনী: শৈশব থেকে অভিনয়ের সাফল্যের পথে অবকাশ শেষে রবিবার খুলছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত- প্রথম কার্যদিবসে সৌজন্য সাক্ষাৎ ট্রাম্পের গাজা ভাষণ: ক্যাম্প ডেভিডে কার্টারের ঐতিহাসিক আহ্বানের প্রতিধ্বনি

নেপালে অগ্নিকাণ্ড: একটি সমন্বিত ধ্বংসাত্মক অভিযান

নেপালে বিশাল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা

২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সরকারের বিরোধী প্রতিবাদে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর, দেশব্যাপী সুনির্দিষ্টভাবে সংগঠিত অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একদিনের মধ্যে, নেপালের বহু প্রশাসনিক ভবন, রাজপ্রাসাদ, আদালত, মন্ত্রণালয়, স্কুল এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ভবনগুলো পুড়ে যায়। এর পাশাপাশি, রাজনৈতিক এলিটের সাথে সম্পর্কিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রাক্তন ও বর্তমান রাজনীতিবিদদের বাড়িগুলোকেও লক্ষ্য করা হয়।

অগ্নিসংযোগের এই ব্যাপক অভিযানটি নেপালের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য এক দুর্দান্ত ধ্বংসের মতো ছিল। এদের মধ্যে বেশ কিছু কাঠামো ছিল সরকারি এবং সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এমনকি এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে, আক্রমণকারীরা “প্রস্তুত-থাকা তালিকা” অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়, যেখানে সমাজের দুর্নীতির সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের তথ্য প্রকাশিত হয়। এর পরের দিন, বেশিরভাগ এই ব্যক্তিদের বাড়ি পুড়ে যায়।

এই আগুনগুলো শুধু সাধারণ আগুন ছিল না, কারণ সেগুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এর আক্রমণ এতটাই বিস্তৃত ছিল যে এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রচারণার ফলাফল বলে সন্দেহ হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ জানান, এ ধরনের আক্রমণগুলি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হতে পারে না যদি না তার আগে যথেষ্ট পরিমাণে প্রস্তুতি নেয়া না হয়।

সরকার এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা

এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সরকারি বাহিনী ছিল প্রায় অদৃশ্য এবং নেপাল সেনাবাহিনীও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। সরকারের বিভিন্ন শাখা যেমন নির্বাহী, আইনসভার এবং বিচারিক শাখাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, যার মধ্যে ১১০টি পুলিশ স্টেশনও পুড়ে যায়। তবে, এই ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি, কিন্তু অনুমান করা হচ্ছে যে এটি নেপালের মোট জিডিপির এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্ষতি করেছে।

তদন্তের অগ্রগতি এবং অজ্ঞতা

এই অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত শুরু হলেও, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে ঘটনাটি পুনরায় নির্মাণ করা অনেক কঠিন হবে যদি না আগুনের শাবল পরীক্ষা করা হয় এবং গন্ধ বিশ্লেষণ করা হয়। তবে, নেপালের পুলিশ ল্যাব এখনো এই তদন্তের জন্য কিছু গ্রহণ করেনি। পুলিশ কর্মকর্তা পবন ধুঙ্গানা জানান যে, তার দল এই ঘটনার তদন্তে অংশগ্রহণ করতে পারেনি এবং আগুনের debris থেকে তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা এখন অনেক কম।

তদন্তের দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, তবে বিচারিক পদ্ধতির দীর্ঘসূত্রিতা দেখে অনেকেই উদ্বিগ্ন যে এই তদন্ত শেষ হতে ৭ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।

আক্রমণকারীদের প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা

গবেষকরা জানাচ্ছেন যে, আক্রমণকারীরা বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। তাদের হাতে ছিল পেট্রোল বোমা এবং অন্যান্য অগ্নিসংযোগকারী উপাদান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বড় বড় বিল্ডিংগুলোর দ্রুত আগুন ধরানো এবং সেই আগুনের ব্যাপকতা বিশেষ ধরনের দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণ নয়।


এই ধ্বংসাত্মক অভিযানটির পিছনে যে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে, তা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে উঠছে। তদন্তকারীরা এবং বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে গভীরভাবে খুঁজে দেখতে চান, তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, এই ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে।
জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতের ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশীকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা

নেপালে অগ্নিকাণ্ড: একটি সমন্বিত ধ্বংসাত্মক অভিযান

০৩:২৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

নেপালে বিশাল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা

২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সরকারের বিরোধী প্রতিবাদে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর, দেশব্যাপী সুনির্দিষ্টভাবে সংগঠিত অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একদিনের মধ্যে, নেপালের বহু প্রশাসনিক ভবন, রাজপ্রাসাদ, আদালত, মন্ত্রণালয়, স্কুল এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ভবনগুলো পুড়ে যায়। এর পাশাপাশি, রাজনৈতিক এলিটের সাথে সম্পর্কিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রাক্তন ও বর্তমান রাজনীতিবিদদের বাড়িগুলোকেও লক্ষ্য করা হয়।

অগ্নিসংযোগের এই ব্যাপক অভিযানটি নেপালের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য এক দুর্দান্ত ধ্বংসের মতো ছিল। এদের মধ্যে বেশ কিছু কাঠামো ছিল সরকারি এবং সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এমনকি এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে, আক্রমণকারীরা “প্রস্তুত-থাকা তালিকা” অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়, যেখানে সমাজের দুর্নীতির সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের তথ্য প্রকাশিত হয়। এর পরের দিন, বেশিরভাগ এই ব্যক্তিদের বাড়ি পুড়ে যায়।

এই আগুনগুলো শুধু সাধারণ আগুন ছিল না, কারণ সেগুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এর আক্রমণ এতটাই বিস্তৃত ছিল যে এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রচারণার ফলাফল বলে সন্দেহ হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ জানান, এ ধরনের আক্রমণগুলি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হতে পারে না যদি না তার আগে যথেষ্ট পরিমাণে প্রস্তুতি নেয়া না হয়।

সরকার এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা

এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সরকারি বাহিনী ছিল প্রায় অদৃশ্য এবং নেপাল সেনাবাহিনীও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। সরকারের বিভিন্ন শাখা যেমন নির্বাহী, আইনসভার এবং বিচারিক শাখাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, যার মধ্যে ১১০টি পুলিশ স্টেশনও পুড়ে যায়। তবে, এই ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি, কিন্তু অনুমান করা হচ্ছে যে এটি নেপালের মোট জিডিপির এক-তৃতীয়াংশের বেশি ক্ষতি করেছে।

তদন্তের অগ্রগতি এবং অজ্ঞতা

এই অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত শুরু হলেও, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে ঘটনাটি পুনরায় নির্মাণ করা অনেক কঠিন হবে যদি না আগুনের শাবল পরীক্ষা করা হয় এবং গন্ধ বিশ্লেষণ করা হয়। তবে, নেপালের পুলিশ ল্যাব এখনো এই তদন্তের জন্য কিছু গ্রহণ করেনি। পুলিশ কর্মকর্তা পবন ধুঙ্গানা জানান যে, তার দল এই ঘটনার তদন্তে অংশগ্রহণ করতে পারেনি এবং আগুনের debris থেকে তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা এখন অনেক কম।

তদন্তের দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, তবে বিচারিক পদ্ধতির দীর্ঘসূত্রিতা দেখে অনেকেই উদ্বিগ্ন যে এই তদন্ত শেষ হতে ৭ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।

আক্রমণকারীদের প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা

গবেষকরা জানাচ্ছেন যে, আক্রমণকারীরা বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। তাদের হাতে ছিল পেট্রোল বোমা এবং অন্যান্য অগ্নিসংযোগকারী উপাদান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বড় বড় বিল্ডিংগুলোর দ্রুত আগুন ধরানো এবং সেই আগুনের ব্যাপকতা বিশেষ ধরনের দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণ নয়।


এই ধ্বংসাত্মক অভিযানটির পিছনে যে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে, তা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে উঠছে। তদন্তকারীরা এবং বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে গভীরভাবে খুঁজে দেখতে চান, তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, এই ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে।