ভোলায় আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ইলিশ মাছ রক্ষা এবং উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় ছোট মাপের জেলেদের জন্য টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করা জরুরি। শুধু অস্থায়ী সহায়তা নয়, তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও বিকল্প আয়ের সুযোগই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
সেমিনারের আয়োজন ও অংশগ্রহণ
‘অস্থায়ী সহায়তার বাইরে ছোট মাপের জেলেদের নিরাপদ জীবিকা নিশ্চিত করতে টেকসই জীবিকা ও দক্ষতা উন্নয়নই মূল চাবিকাঠি’ শীর্ষক এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় কোস্ট ফাউন্ডেশনের ভোলা সেন্টারে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক সনৎ কুমার ভৌমিক, সভাপতিত্ব করেন সাধারণ পরিষদের সদস্য মোবাসসির উল্লাহ চৌধুরী এবং প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন।
জেলেদের জীবনসংকট ও সীমিত সহায়তা
বক্তারা জানান, ইলিশ সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছর মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রায় ৬০ শতাংশ নিবন্ধিত জেলে দুই থেকে তিন মাস কোনো আয় ছাড়াই কাটান।বর্তমানে প্রতিটি পরিবারকে ৪০ কেজি চাল দেওয়া হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং সময়মতো পৌঁছায় না। ফলে অনেক জেলে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। বক্তারা সময়মতো সরকারি সহায়তা, নগদ অর্থ প্রদান এবং দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থানের কর্মসূচি বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, নিরাপদ ও কার্যকর মাছ ধরার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি চালু করা দরকার। পাশাপাশি মাছ প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণাগার ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের দাবি তোলেন তারা।
তারা জেলে পরিবারের শতভাগ পরিবার পরিকল্পনা কাভারেজ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।
গবেষণালব্ধ তথ্য ও বিকল্প আয়ের পথ
কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মোস্ত. রাশিদা বেগম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, স্বল্পমেয়াদি সহায়তা ক্ষুধা মেটায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন আনে না। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি, যা জেলেদের মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা দেবে।
সনৎ কুমার ভৌমিক জানান, নদীতে বালুচর সৃষ্টি ও অভিবাসনপথ ব্যাহত হওয়ার কারণে ইলিশ উৎপাদন প্রতিবছর ৪.৫ থেকে ৫ শতাংশ কমছে। তিনি সরকারি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বিকল্প জীবিকার উদ্যোগ—যেমন ছাগল পালন, মৎস্যচাষ ও সবজি চাষ—বিশেষ করে নারী ও তরুণ জেলেদের জন্য চালুর পরামর্শ দেন।
নারী জেলে ও নেতৃবৃন্দের মতামত
নারী জেলে প্রতিনিধি রিমা বেগম ও আখলিমা বেগম বলেন, প্রকৃত জেলেরা অনেক সময় সরকারি সহায়তা পান না, অথচ ভুয়া কার্ডধারীরা তা ভোগ করেন। নারীদের আয়ের সঙ্গে যুক্ত করা গেলে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার প্রবণতা বাড়ে।
জেলে নেতা বশির মাঝি অভিযোগ করেন, প্রকৃত জেলেরা বাদ পড়লেও অনেক অজেলে সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন।
মানবাধিকার ও বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি
সাংবাদিক নিয়ামত উল্লাহ বলেন, স্থানভিত্তিক নিরাপদ বিকল্প জীবিকা পরিকল্পনা জরুরি। সাংবাদিক নজরুল হক আনু যোগ করেন, নির্ধারিত নদীসীমার বাইরে মাছ ধরলে জেলেদের গ্রেপ্তার করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
সরকারি অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রধান অতিথি মো. ইকবাল হোসেন জানান, নদী ও সাগরে এখন মাত্র ২৫-২৬ প্রজাতির মাছ টিকে আছে। সরকার বৈধ জাল, ভিজিএফ চাল এবং পশুপালনের মাধ্যমে বিকল্প আয়ের সুযোগ দিচ্ছে।
সভাপতি মোবাসসির উল্লাহ চৌধুরী বলেন, জেলে ডাটাবেস থেকে অজেলেদের নাম বাদ দিয়ে সহজ ঋণসুবিধা চালু করতে হবে, কারণ অনেক জেলে অনানুষ্ঠানিক ঋণের ফাঁদে পড়ে স্বাধীনভাবে মাছ বিক্রি করতে পারছেন না।
#ভোলা #ইলিশসংরক্ষণ #জেলেসংকট #কোস্টফাউন্ডেশন #উপকূলীয়জীবিকা #সারাক্ষণরিপোর্ট