শরীরের প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে অনেকেই এখন ফোন হাতে নেন। কিন্তু চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন—এই অভ্যাস হেমোরয়েড বা অর্শের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, টয়লেটে বসে স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে হেমোরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।
টয়লেটে ফোন: বিপদের নতুন কারণ
সামাজিক মাধ্যমে পরিচিত ড. আলোক কানোজিয়া (ড. কে) সম্প্রতি “অন পারপাস উইথ জে শেঠি” পডকাস্টে বলেন, “টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহারের কারণে মানুষের হেমোরয়েড হচ্ছে।”
গবেষণাটি পিয়ার রিভিউড জার্নাল PLOS One-এ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে ফোন ব্যবহারের সময় দীর্ঘায়িত হলে টয়লেটে বসে থাকার সময়ও বেড়ে যায়, ফলে রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
তবে সব বিশেষজ্ঞই এ বিষয়ে একমত নন।
বিশেষজ্ঞদের মতভেদ
জর্জিয়া মেডিক্যাল কলেজের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সতীশ রাও বলেন, “মানুষ সত্যিই এখন টয়লেটে ফোন নিয়ে যায়, কিন্তু শুধু বসে থাকলেই হেমোরয়েড হবে—এমন দাবি অতিরঞ্জিত।”
মায়ো ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, হেমোরয়েড হলো মলদ্বার ও নিম্ন রেকটামের ফোলা শিরা। সাধারণত টয়লেট ব্যবহারের সময় এসব শিরা রক্তে পূর্ণ হয়, পরে আবার খালি হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় চাপ প্রয়োগ বা জোর করলে এসব শিরা দুর্বল হয়ে ফেটে যায়, তখনই অর্শের সমস্যা দেখা দেয়।
রাও বলেন, “একটানা পাঁচ মিনিট বেশি বসে থাকা তেমন প্রভাব ফেলে না, মূল সমস্যা হয় অতিরিক্ত চাপ বা জোর প্রয়োগের ফলে।”
গবেষণার সীমাবদ্ধতা
ড. রাও গবেষণাটির পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, গবেষণার অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত ৫০ বছরের কাছাকাছি বয়সী ছিলেন, যাদের অনেকেরই আগেই হেমোরয়েড হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের বেশিরভাগেরই কোলনোস্কপি করা হয়েছিল, যা সাধারণত ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে সুপারিশ করা হয়। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, ৫০ বছরের বেশি বয়সী প্রতি দুইজনের একজন হেমোরয়েডে আক্রান্ত হন।
তবুও গবেষকরা বলেন, টয়লেটে পাঁচ মিনিটের বেশি ফোনে সময় না কাটানোই ভালো, কারণ এটি অভ্যাসগতভাবে সময় বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
যদিও ফোন ব্যবহারের সঙ্গে সরাসরি হেমোরয়েডের সম্পর্ক নিশ্চিত নয়, তবু চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন এটি প্রতিরোধে সচেতন হতে।
মায়ো ক্লিনিকের মতে, হেমোরয়েড প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো—
- • উচ্চমাত্রার আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া বা ফাইবার সাপ্লিমেন্ট নেওয়া
- • পর্যাপ্ত পানি পান করা
- • টয়লেটে অতিরিক্ত সময় না কাটানো এবং জোর প্রয়োগ থেকে বিরত থাকা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ যেমন হাইড্রোকরটিসন বা উইচ হ্যাজেল দিয়ে চিকিৎসা সম্ভব। তবে ব্যথা, রক্তপাত বা বারবার সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন ড. রাও।
স্মার্টফোন আমাদের জীবন সহজ করেছে, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ক্ষতি অনিবার্য। তাই প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে প্রযুক্তির উপর নির্ভর না করাই ভালো। বিশেষজ্ঞদের মতে, “টয়লেটে ফোন নয়—সচেতনতা ও স্বল্প সময়ই হতে পারে সুস্থ অভ্যাসের মূল।”