যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের মেনিল ড্রয়িং ইনস্টিটিউটে চলছে এক অভিনব প্রদর্শনী—‘লাইনস অব রেজোলিউশন: ড্রয়িং অ্যাট দ্য অ্যাডভেন্ট অব টেলিভিশন অ্যান্ড ভিডিও’। ১৯৫০ থেকে ১৯৮০-এর দশকের মধ্যকার সময়কে কেন্দ্র করে এই প্রদর্শনীতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে টেলিভিশন পর্দা এবং ড্রয়িং বা অঙ্কনের সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে বিকশিত হয়েছে—কখনও সহযোগিতায়, কখনও সমালোচনায়।
প্রদর্শনীর মূল ধারণা
এই প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন শিল্প ইতিহাসবিদ আনা লাভাট ও কেলি মন্টানা। তাঁরা ড্রয়িং ও টেলিভিশনের সম্পর্ককে পাঁচটি ভাগে বিন্যস্ত করেছেন—
১. ‘স্ক্যানলাইনস’, যেখানে জার্মান ও আমেরিকান শিল্পীরা ইলেকট্রন বিমের চলাচল নিয়ে কাজ করেছেন।
২. ‘দ্য স্ক্রিন ইন দ্য স্টুডিও’, যেখানে টেলিভিশন স্ক্রিনকে ব্যক্তিগত শিল্পজগতে নিয়ে আসা হয়েছে।
৩. ‘মিররিং অ্যান্ড মনিটরিং’, যেখানে পর্দাকে আত্মপ্রতিকৃতি বা প্রতিফলনের আয়না হিসেবে দেখা হয়েছে।
৪. ‘ফিডব্যাক’, যেখানে শিল্পীরা নিজেদের প্রতিচ্ছবির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করেছেন।
৫. ‘ইন্টারফেরেন্স’, যেখানে টেলিভিশন বার্তার বিকৃতি বা ব্যাঘাত নিয়ে খেলা করা হয়েছে।
এই পাঁচটি কাঠামোর মধ্য দিয়ে কিউরেটররা এমন এক সময়কে ফুটিয়ে তুলেছেন, যখন ড্রয়িং শুধু কাগজে নয়, প্রযুক্তির পর্দাতেও রূপ নিচ্ছিল।
শিল্পকর্ম ও উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী
প্রদর্শনীর প্রায় ৬০টি কাজের মধ্যে কিছু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
- কে.ও. গ্যোৎজ, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নরওয়েতে রাডার প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন, তাঁর ‘স্ট্যাটিস্টিকাল মেট্রিক এক্সপেরিমেন্ট’ (১৯৬০) এবং ‘স্ট্যাটিস্টিকাল মেট্রিক মডুলেশন’ (১৯৬১) নামের ড্রয়িংগুলো মেশিনগত হলেও মানবিক ছোঁয়া ধরে রেখেছে।
- তাঁর ছাত্র সিগমার পোলকের ‘আনটাইটেল্ড (রাস্টার ড্রয়িং)’ (১৯৬৯) প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ।
- ফিলিপ গাস্টন-এর রিচার্ড নিকসনকে ব্যঙ্গ করে করা দুইটি ছোট ইঙ্ক ড্রয়িং রাজনৈতিক মন্তব্য হিসেবে স্থান পেয়েছে।
- রবার্ট রাউসেনবার্গ-এর ‘স্পিনার + গেম’ (১৯৫৮) ও ‘স্টিভ’স ড্রয়িং’ (১৯৬৬) এই প্রদর্শনীকে শিল্প-ইতিহাসের দিক থেকেও সমৃদ্ধ করেছে।
নাম জুন পাইক: ‘জেন ফর টিভি’
প্রদর্শনীর মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে কোরিয়ান-আমেরিকান শিল্পী নাম জুন পাইকের বিখ্যাত কাজ ‘জেন ফর টিভি’(১৯৬৩)।
এটি এক পরিবর্তিত টেলিভিশন সেট, যা পাশ ফিরিয়ে রাখা হয়েছে, স্ক্রিনে শুধু একটি উজ্জ্বল সাদা উল্লম্ব রেখা জ্বলজ্বল করছে। সেই রেখা যেন টেলিভিশনের সব চিত্রের মূল উৎস। কাজটি একই সঙ্গে ধ্যানমগ্ন ও সতর্কতামূলক—চোখে প্রশান্তি দিলেও এর ভেতরে প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের অদৃশ্য প্রতিফলন রয়েছে।
সমাজে টেলিভিশনের প্রভাব
এই প্রদর্শনীর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এটি দেখিয়েছে কীভাবে টেলিভিশন আধুনিক জীবনের প্রতিটি কোণায় প্রবেশ করেছে।
১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৯ শতাংশ পরিবারের টিভি ছিল; দশ বছর পর সেটি বেড়ে ৯০ শতাংশে দাঁড়ায়। বর্তমানে মাত্র ৩ শতাংশ পরিবার টিভিহীন।
প্রদর্শনীটি শেষ হয়েছে ১৯৮০-এর দশকে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেলিভিশনের ‘নেটওয়ার্ক যুগ’-এর অবসান ঘটেছিল। তবে প্রদর্শনীর আন্তর্জাতিক শিল্পীদের উপস্থিতি এবং ‘ড্রয়িং’-এর বিস্তৃত সংজ্ঞা এটিকে শুধু মার্কিন প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ রাখেনি।