‘দ্য রকি হরর পিকচার শো’-এর কিংবদন্তি অভিনেতা টিম কারি এবার নিজের জীবনের গল্প শোনালেন নতুন স্মৃতিকথা ‘ভ্যাগাবন্ড’-এ। মঞ্চ ও পর্দার চরিত্রগুলোর বাইরেও তাঁর জীবন ছিল সমান রোমাঞ্চকর। ব্রিটিশ এই অভিনেতা তাঁর পেশাগত জীবন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং ২০১২ সালে স্ট্রোকের পর তাঁর শারীরিক সংগ্রামের কথা খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন বইটিতে।
শৈশব ও অভিনয়ের শুরু
নৌবাহিনীর এক যাজকের সন্তান হিসেবে টিম কারি ছোটবেলা থেকেই ইংল্যান্ডজুড়ে ঘুরেছেন। সেই ঘুরে বেড়ানো জীবনই তাঁর নামকরণের উৎস—‘ভ্যাগাবন্ড’। বইটিতে তিনি ফিরে গেছেন প্রথম দিকের অভিনয়জীবনে, যেখানে একের পর এক চরিত্র তাঁকে তৈরি করেছে আজকের কিংবদন্তিতে।
‘রকি হরর’-এ আত্মবিশ্বাস খোঁজা
‘দ্য রকি হরর শো’-এর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কারি সম্প্রতি নানা অনুষ্ঠানে আলোচনায় ছিলেন। বইয়ে তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে ১৯৭৩ সালে ‘ড. ফ্র্যাঙ্ক-এন-ফারটার’ চরিত্রটি তাঁর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে ওঠে। ‘দ্য মেইডস’ নাটকের পুরোনো ভিক্টোরিয়ান করসেট ব্যবহার করে, নিজের পছন্দের কালো হিল থেকে বানিয়েছিলেন চরিত্রের বিখ্যাত প্ল্যাটফর্ম জুতা। চরিত্রটির উচ্চারণও তিনি নিয়েছিলেন এক বৃদ্ধা নারীর কাছ থেকে যিনি বাসে রানির মতো কথা বলার চেষ্টা করছিলেন।
নিউ ইয়র্কে উন্মুক্ত জীবন ও বন্ধুত্ব
সত্তরের দশকের শেষ দিকে নিউ ইয়র্কে থাকাকালীন টিম কারি একসময় সংগীতশিল্পী হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাঁর সঙ্গী ছিলেন ক্যারোল কিং, শেয়ার, কার্লি সাইমন, জেমস টেইলর প্রমুখ তারকা। বিখ্যাত ক্লাব স্টুডিও ৫৪-তে এক রাতে ট্রুম্যান ক্যাপোট ছিলেন ডিজে, আর অ্যান্ডি ওয়ারহল এসেছিলেন তাঁর প্রতি আকর্ষণ নিয়ে। কারি রসিকভাবে লেখেন, “আমি প্রায় পেরুর অর্ধেক কোকেইন খেয়েছি”, তবুও জানান, আসলে কখনোই এই অভ্যাসে আনন্দ পাননি এবং তবুও সহজেই তা ছাড়তে পেরেছিলেন।
রাজপরিবারের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত
কারির মা তাঁর খ্যাতিতে খুব একটা উচ্ছ্বসিত ছিলেন না, তবে রাজপরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দ পেয়েছিলেন। ৮০-এর দশকে ‘দ্য পাইরেটস অব পেনজ্যান্স’-এ অভিনয়ের সময় রানীমাতার জন্মদিনে কেক কাটতে গিয়ে তিনি ছুরি না পেয়ে নিজের তলোয়ার ব্যবহার করেছিলেন। পরে প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে সাক্ষাতে ডায়ানা মজা করে বলেন, “রকি হরর শো দেখে আমার শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ হয়েছে।” কারি লেখেন, “রাজা চার্লস বলতে এখনও অদ্ভুত লাগে, যেন টাকায় তাঁর মুখ দেখাটা অবাস্তব লাগে।”
টম ক্রুজের সঙ্গে ‘লেজেন্ড’ অভিজ্ঞতা
‘লর্ড অব ডার্কনেস’ চরিত্রে অভিনয় করা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতাগুলোর একটি। ‘লেজেন্ড’ ছবিতে প্রস্থেটিক মেকআপের ভারে প্রায় নরকযন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন তিনি। তবু সহ-অভিনেতা টম ক্রুজ সম্পর্কে তাঁর মত ছিল মিশ্র—“তাঁর প্রতিভায় তেমন মুগ্ধ হইনি, তবে মানুষ হিসেবে খুবই মনোযোগী ও ভদ্র ছিলেন।”
সহ-অভিনেতাদের নিয়ে স্মৃতিকথা
‘ভ্যাগাবন্ড’-এ টিম কারি খোলামেলা মন্তব্য করেছেন তাঁর বহু সহ-অভিনেতা সম্পর্কে। সিলভেস্টার স্ট্যালোনের ড্রেসিং রুমে “অতি যাতায়াতপূর্ণ পরিবেশের” কথা রসিকতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন তিনি। আবার ‘হোম অ্যালোন ২’-এর সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, পরিচালক ক্রিস কলম্বাস কোথায়—কারণ ট্রাম্প তাঁর বান্ধবী মার্লা ম্যাপলসকে পরিচয় করাতে চেয়েছিলেন “অসাধারণ প্রতিভাবান অভিনেত্রী” হিসেবে।
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘মাপেট ট্রেজার আইল্যান্ড’-এ কাজ করাই ছিল তাঁর সবচেয়ে আনন্দের অভিজ্ঞতা—“কারণ এই মাপেটগুলো আসল অভিনেতার মতো, সবার আলাদা চরিত্র, দুর্বলতা, আর মানবিক গুণ আছে।” প্রিয় মাপেট চরিত্র? “গনজো—সব সময় অন্যায়ের শিকার, অথচ কখনো তা প্রাপ্য নয়।”
‘ভ্যাগাবন্ড’ কোনো কেলেঙ্কারিমূলক হলিউড আত্মকথা নয়; বরং এক ভ্রমণসঙ্গীর মতো, যিনি পাঠককে নিয়ে যান এক জীবনের রঙিন যাত্রায়—রাজনীতি, সংগীত, মঞ্চ, প্রেম ও প্রেরণার গল্পে ভরা এক টিম কারির দুনিয়ায়।
#টিমকারি #ভ্যাগাবন্ড #রকি_হরর #হলিউড #সারাক্ষণরিপোর্ট