আঙ্কারা সফর শেষে দেশে ফেরার পথে তুরস্কে একটি ছোট জেট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আরও চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। মঙ্গলবার এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছে লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার।
দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট
লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবেইবা এক বিবৃতিতে বলেন, আঙ্কারা থেকে সরকারি সফর শেষে ফেরার সময় এই বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে। তিনি এটিকে জাতি, সেনাবাহিনী ও দেশের জনগণের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বর্ণনা করেন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন লিবিয়ার স্থলবাহিনীর কমান্ডার, সামরিক শিল্প কর্তৃপক্ষের পরিচালক, সেনাপ্রধানের একজন উপদেষ্টা এবং তাঁর দপ্তরের একজন আলোকচিত্রী।
বিমান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর দুর্ঘটনা
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিমানটি আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আঙ্কারার হায়মানা জেলার কেসিক্কাভাক গ্রামের কাছে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। জানা গেছে, হায়মানা এলাকার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তবে তখন আর যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
তদন্ত শুরু, কারণ এখনো অস্পষ্ট
দুর্ঘটনার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তুরস্কের বিচারমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। লিবিয়ার জাতীয় ঐক্য সরকারও জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আঙ্কারায় একটি সরকারি প্রতিনিধি দল পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তদন্তের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়।
বিমানটির মালিকানা ও প্রযুক্তিগত তথ্য
লিবিয়ার রাজনৈতিক ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশে সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, বিমানটি মাল্টার একটি লিজ নেওয়া উড়োজাহাজ ছিল। এর মালিকানা ও প্রযুক্তিগত ইতিহাস সম্পর্কে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে এসব বিষয় তদন্তের আওতায় আনা হবে।
জাতীয় শোক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই ঘটনার পর লিবিয়াজুড়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্ঘটনার একদিন আগেই তুরস্কের পার্লামেন্ট লিবিয়ায় তুর্কি সেনা মোতায়েনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও জ্বালানি অনুসন্ধান নিয়ে একাধিক চুক্তি হয়েছে, যা আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে।
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নয়, বরং লিবিয়া ও তুরস্কের চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ একটি অধ্যায় হয়ে উঠেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















