শীতের তীব্র ঠান্ডার মধ্যেই ইউক্রেনজুড়ে আবারও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। প্রাক্বড়দিনে একযোগে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ জ্বালানি অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে মাত্র চার বছরের এক শিশু। হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে, থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবন।

প্রাক্বড়দিনে ব্যাপক হামলা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাশিয়া মোট ছয় শত পঁয়ত্রিশটি ড্রোন এবং আটত্রিশটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। লক্ষ্যবস্তু ছিল সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো। শীতের মধ্যে এই হামলা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। তার ভাষায়, পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকার সময়েই এই আঘাত প্রমাণ করে, মস্কোর যুদ্ধ থামানোর কোনো ইচ্ছা নেই।
শিশুর মৃত্যু ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
মধ্য ইউক্রেনের ঝিটোমির অঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনে ড্রোন আঘাত হানলে চার বছরের এক কন্যাশিশু গুরুতর আহত হয়। পরে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সে মারা যায়। একই দিনে কিয়েভ ও খমেলনিতস্কি এলাকাতেও প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর অঞ্চল ওদেসাতেও আবার হামলা চালানো হয়।

বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরবন্দি জীবন
ওদেসার এক গণিত শিক্ষিকা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় মোমবাতির আলোয় কাজ করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ এলেই আবার হামলায় সব নষ্ট হয়ে যায়, দুই থেকে তিন দিন অন্ধকারে কাটাতে হয়। তার ছাত্রছাত্রীরাও অনলাইনে পড়াশোনা করতে পারছে না। আরেক বাসিন্দা বলেন, সাত দিন বিদ্যুৎ না থাকা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ঘর দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়, ওষুধ ঠিক তাপমাত্রায় রাখাও কঠিন। শিশু অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় যন্ত্র চালানো যায় না, বিষয়টি সরাসরি স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত।
মেরামতের চেষ্টা ও সামরিক পরিস্থিতি
ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামতের কাজ চলছে, তবে জরুরি বিদ্যুৎ বিভ্রাট চালু রাখতে হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিদেনকো। হামলার সময় প্রতিবেশী পোল্যান্ড নিজেদের আকাশসীমা সুরক্ষায় যুদ্ধবিমান উড়িয়েছে।

অন্যদিকে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ধীরে হলেও অগ্রসর হচ্ছে বলে দাবি করেছে মস্কো। খারকিভ ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে কয়েকটি বসতি দখলের কথাও জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে যুদ্ধ অবসানের আলোচনা চললেও কোনো বড় অগ্রগতির ইঙ্গিত মিলছে না।



সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















