সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিয়ের প্রথম বছরই দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় পরিণত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে যেসব বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে তার প্রায় ৩০ শতাংশই শেষ হচ্ছে বিয়ের এক বছরের মধ্যেই। বিষয়টি নিয়ে মনোবিদ, পারিবারিক পরামর্শক ও আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে ।
প্রথম বছরের ভাঙনের চিত্র
ন্যায় মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে শারজাহ, আজমান, ফুজাইরাহ ও উম্ম আল কুয়াইন ফেডারেল আদালতে মোট দুই হাজার আটশো সাতান্নটি বিবাহবিচ্ছেদের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আটশো একান্নটি বিচ্ছেদ ঘটেছে বিয়ের প্রথম বছরেই, যা মোট সংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
এই বিচ্ছেদ শুধু একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তথ্য বলছে, তিনশো ছিয়ানব্বইটি ঘটনায় উভয় পক্ষই আমিরাতি, ছয়শো সাতাশটি ঘটনায় স্বামী আমিরাতি এবং বাকি ঘটনায় আমিরাতি নারীরা বিদেশি স্বামীদের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পথে গেছেন।
এমিরেটভিত্তিক পার্থক্য
২০২৪ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শারজাহতে সবচেয়ে বেশি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, মোট দুইশো সতেরোটি। এরপর আজমানে একশো সাতষট্টি, ফুজাইরাহতে সাতষট্টি এবং উম্ম আল কুয়াইনে বাইশটি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। শুধু ওই এক বছরেই চারটি এমিরেটে মোট চারশো তেহাত্তরটি বিচ্ছেদ হয়েছে, যা সমস্যার গভীরতা স্পষ্ট করে।

ভালোবাসা নয়, মিলের অভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমস্যার মূল কারণ ভালোবাসার অভাব নয়, বরং মানসিক ও বাস্তব জীবনের অমিল। মনোবিদ হিবা সালেম বলেন, বিয়ের আগে অনেক দম্পতি সংসারকে রোমান্টিক কল্পনায় সাজিয়ে নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ঝকঝকে গল্প আর সামাজিক চাপে সেই প্রত্যাশা আরও বাড়ে। বাস্তব জীবনের দায়িত্ব, মানসিক শ্রম ও সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা বুঝে ওঠার আগেই হতাশা তৈরি হয়।
প্রত্যাশা আর বাস্তবতার ফারাক
পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ক কোচ ডা. আমাল সালেম বসোহাইবের অভিজ্ঞতায়, অনেক দম্পতিই বলেন, তারা ভাবেননি বিয়ে এমন হবে। গণমাধ্যমে দেখা আদর্শ দাম্পত্য জীবনের সঙ্গে নিজের বাস্তব জীবনের তুলনা থেকে তৈরি হয় চাপ। এই প্রত্যাশা আর বাস্তবতার ব্যবধানই প্রথম বছরে বড় ধাক্কা দেয়।
যোগাযোগের সংকট ও মানিয়ে নেওয়ার চাপ
বিশেষজ্ঞরা জানান, সুস্থ যোগাযোগের অভাব দ্রুত বিবাদ বাড়িয়ে তোলে। বাসস্থান, অর্থনীতি ও পারিবারিক ভূমিকা নিয়ে ছোটখাটো মতবিরোধ শান্তভাবে সমাধান না হলে তা বিচ্ছেদের দিকে গড়ায়। প্রথম বছরটিকে তারা মানসিক মানিয়ে নেওয়ার সময় হিসেবে দেখেন, যেখানে ভিন্ন অভ্যাস, আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ একসঙ্গে মেলাতে গিয়ে দম্পতিরা চাপে পড়ে।
প্রবাসজীবন ও সামাজিক চাপ
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উচ্চচাপের প্রবাসী পরিবেশেও এই সংকট বাড়ছে। পরিবার ও আত্মীয়দের সরাসরি সহায়তা না থাকা, কাজের চাপ এবং সামাজিক প্রত্যাশা দম্পতির মানসিক শক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে প্রথম বছরের স্বাভাবিক সংকটকেও অনেকেই সম্পর্কের ব্যর্থতা বলে ধরে নেন।
সমাধানের পথে পরামর্শ
মনোবিদরা বিয়ের আগে পরামর্শ গ্রহণকে সময়ের দাবি বলে মনে করছেন। তাদের মতে, বিয়ের আগেই যোগাযোগের ধরন, সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব ও পারিবারিক সীমারেখা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকলে অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি দম্পতি পরামর্শকে লজ্জার বিষয় না ভেবে নিয়মিত মানসিক পরিচর্যার অংশ হিসেবে দেখার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
#সংযুক্তআরবআমিরাত #বিবাহবিচ্ছেদ #দাম্পত্যজীবন #পারিবারিকসংকট #প্রথমবছরেরচাপ #মানসিকস্বাস্থ্য
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















