পাকিস্তান সৃষ্টির পরে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার পদে ইস্তফা দেন তিনি।
করাচি বিমানবন্দর থেকে সবাইকে আনা হয় করাচি নৌবন্দরে, তাঁদের জন্য ঘরে ফেরার আহাজ অপেক্ষা করছে। সেখানে অনাভোলসহ অন্যান্যরা এসএস এন্ডারসন জাহাজে আরোহণ করেন। এক বছর পূর্বে ঠিক এই জাহাজে চেপেই তাঁরা ভারতবর্ষে এসেছিলেন। ফিরতি যাত্রায় জাহাজের পরিবেশ ছিল অত্যন্ত রমরমা আনন্দময়, সবাই কি হবে না হবে’র দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত, সৈনিকদের বাধ্যতামূলক লাইফ জ্যাকেট পরতে হচ্ছে না এবং বাড়তি পুরস্কার হিসেবে ছিল প্লেনের দু’ধারের ছোট্ট ছোট্ট জানালা দিয়ে দেখা- নতুন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য্যের একটি এই তাজমহলের চোখ জুড়ানো বুক ভরা অপরূপ সৌন্দর্য ও মাধুর্য।
জাহাজটি যখন নিউ ইয়র্ক বন্দরে নোঙর করল, দেখে যে জনাতীর্ণ বন্দর হযোফরানি করে তাঁদেরকে সম্বর্ধনা জানাচ্ছে। বীরের সম্মানে সম্মানিত হন তারা।
যুদ্ধ শেষে
প্রফেসর সরদার ফজলুল করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে। পড়াশুনো করেন। ১৯৪৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে তিনি বি.এ পাশ করেন এবং ১৯৪৬ সালে পুনরায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম.এ পাশ করেন। রাজনৈতিক আদর্শের বিরুদ্ধে যেতে চাননি বলে তিনি স্কলারশিপ নিয়ে বিলাতে পড়তে যেতে রাজি হননি। তাই যাননি। ১৯৪৬ সালে লেকচারার হিসেবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পরে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার পদে ইস্তফা দেন তিনি। তাঁর প্রগতিশীল রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য পাকিস্তান সরকার প্রফেসর করিমকে পাকিস্তানের ‘শত্রু’ বলে চিহ্নিত করে।
জীবনের বিভিন্ন সময়ে তাঁকে কারাবাস করতে হয় এবং তিনি সাকুল্যে দশ বছর কারাজীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৫৪ সালের ‘পাকিস্তান কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেমব্লি’র নির্বাচনে কারারুদ্ধ প্রফেসর করিম সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার এমন এক ব্যবস্থা নেন যাতে তিনি কখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতে সক্ষম না হন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ প্রফেসর করিমকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন তিনি বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় জেলখানায় কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক প্রফেসর সরদার আব্দুল করিমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনেন, প্রফেসর করিম পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিষ্ঠিত হন।
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৩)