০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
তরুণ কর্মজীবীর আর্থিক পরিকল্পনা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৩) টিম কারির স্মৃতিকথা ‘ভ্যাগাবন্ড’-এ জীবনের রঙিন অধ্যায় সুপার হেডলাইন: ভারতের সংবিধান বেঞ্চেরও বিশেষ ক্ষমতা আছে— মন্তব্য পাকিস্তানের বিচারপতি মাজহার দিওয়ালির রঙে শিল্পা ও শমিতা শেঠির বোনেদের মজা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৪) ভারতের ঋণসীমার আওতায় ‘চুক্তি বাতিলের তালিকা ভুল’— পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন অ-পরিশোধিত ঋণে চাপে ২৪ ব্যাংক ঝুঁকিতে, অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় বড় ধাক্কা ১.৫৬ কোটি টাকা বকেয়া ও গ্যাস চুরির অভিযোগে আনন্ত জলিলের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন পর্নোগ্রাফি মামলায় দম্পতির পাঁচ দিনের রিমান্ড

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলা—চার সপ্তাহের জন্য শুনানি স্থগিত

নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার আপিল শুনানি আপাতত বন্ধ থাকছে। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেছে। এই মামলার পটভূমি, বিচার প্রক্রিয়া ও শাস্তির রায় দেশের বিচারব্যবস্থায় অন্যতম নজির হয়ে আছে।


আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে চার সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি রাখার নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।


২০১৪ সালের ভয়াবহ অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে সাতজনকে অপহরণের তিন দিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার চালক ইব্রাহিম।


দুটি পৃথক মামলা

ঘটনার পর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেন। অপরদিকে আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে এই দুটি মামলার বিচার একসঙ্গে পরিচালিত হয়।


বিচারিক আদালতের রায়

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত নূর হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।


হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল

আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। বিজি প্রেস থেকে পেপারবুক প্রস্তুত করে ২০১৭ সালের মে মাসে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। একই বছরের ২২ মে থেকে শুনানি শুরু হয়ে ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয়।


হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়

২০১৭ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে এবং বাকি ১১ জনের শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড বহাল রাখেন আদালত।


মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫ জন

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—

  • নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন
  • র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ
  • মেজর (অব.) আরিফ হোসেন
  • লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা
    এছাড়া র‌্যাবের আরও ১১ সাবেক সদস্য যেমন এমদাদুল হক, হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, শিহাব উদ্দিন প্রমুখকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা

যাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়, তারা হলেন র‌্যাবের সাবেক সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর, সার্জেন্ট এনামুল কবির এবং নূর হোসেনের নয় সহযোগী—মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী, জামাল উদ্দিন সরদার, সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান।


অন্যান্য দণ্ডপ্রাপ্তরা

বিচারিক আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি ৯ জনও র‌্যাবের বরখাস্ত সদস্য। তাদের মধ্যে কেউ ১৭ বছর, কেউ ১০ বছর, আবার কেউ ৭ বছরের সাজা পেয়েছেন।


দেশের অন্যতম আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান। সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ নির্দেশে চার সপ্তাহের জন্য শুনানি স্থগিত থাকায় মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আরও কিছুটা বিলম্বিত হলো। তবুও, নিহতদের পরিবারের প্রত্যাশা—ন্যায়বিচারের শেষ ধাপ যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়।

#নারায়ণগঞ্জ_৭_খুন #আদালত #আপিল_বিভাগ #নূর_হোসেন #র‌্যাব #বিচার_প্রক্রিয়া #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

তরুণ কর্মজীবীর আর্থিক পরিকল্পনা

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলা—চার সপ্তাহের জন্য শুনানি স্থগিত

০৬:৫৩:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার আপিল শুনানি আপাতত বন্ধ থাকছে। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেছে। এই মামলার পটভূমি, বিচার প্রক্রিয়া ও শাস্তির রায় দেশের বিচারব্যবস্থায় অন্যতম নজির হয়ে আছে।


আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে চার সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি রাখার নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।


২০১৪ সালের ভয়াবহ অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে সাতজনকে অপহরণের তিন দিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার চালক ইব্রাহিম।


দুটি পৃথক মামলা

ঘটনার পর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেন। অপরদিকে আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে এই দুটি মামলার বিচার একসঙ্গে পরিচালিত হয়।


বিচারিক আদালতের রায়

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত নূর হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।


হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল

আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। বিজি প্রেস থেকে পেপারবুক প্রস্তুত করে ২০১৭ সালের মে মাসে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। একই বছরের ২২ মে থেকে শুনানি শুরু হয়ে ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয়।


হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়

২০১৭ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে এবং বাকি ১১ জনের শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড বহাল রাখেন আদালত।


মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫ জন

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—

  • নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন
  • র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ
  • মেজর (অব.) আরিফ হোসেন
  • লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা
    এছাড়া র‌্যাবের আরও ১১ সাবেক সদস্য যেমন এমদাদুল হক, হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, শিহাব উদ্দিন প্রমুখকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা

যাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়, তারা হলেন র‌্যাবের সাবেক সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর, সার্জেন্ট এনামুল কবির এবং নূর হোসেনের নয় সহযোগী—মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী, জামাল উদ্দিন সরদার, সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান।


অন্যান্য দণ্ডপ্রাপ্তরা

বিচারিক আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি ৯ জনও র‌্যাবের বরখাস্ত সদস্য। তাদের মধ্যে কেউ ১৭ বছর, কেউ ১০ বছর, আবার কেউ ৭ বছরের সাজা পেয়েছেন।


দেশের অন্যতম আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান। সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ নির্দেশে চার সপ্তাহের জন্য শুনানি স্থগিত থাকায় মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আরও কিছুটা বিলম্বিত হলো। তবুও, নিহতদের পরিবারের প্রত্যাশা—ন্যায়বিচারের শেষ ধাপ যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়।

#নারায়ণগঞ্জ_৭_খুন #আদালত #আপিল_বিভাগ #নূর_হোসেন #র‌্যাব #বিচার_প্রক্রিয়া #সারাক্ষণরিপোর্ট