দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং এবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করল এআই-চালিত এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (XR) ডিভাইস বাজারে। বুধবার কোম্পানিটি উন্মোচন করেছে তাদের নতুন প্রজন্মের ‘গ্যালাক্সি এক্সআর’ হেডসেট, যার লক্ষ্য অ্যাপল ও মেটার মতো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাজারে অংশীদারিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো।
গ্যালাক্সি এক্সআর: প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত
স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এক্সআর—যার পূর্ণরূপ ‘এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি’—ভার্চুয়াল, অগমেন্টেড ও মিক্সড রিয়েলিটির সমন্বয়ে তৈরি একটি উন্নত হেডসেট। এটি তৈরি হয়েছে গুগল ও মার্কিন চিপ জায়ান্ট কোয়ালকমের সহযোগিতায়। ডিভাইসটিতে ব্যবহৃত হয়েছে গুগলের জেমিনি জেনারেটিভ এআই, যা কথোপকথনের মাধ্যমে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, ব্যবহারকারী যদি হেডসেট পরে কোনো রেস্তোরাঁর সুপারিশ চান, তবে গ্যালাক্সি এক্সআর একটি থ্রিডি মানচিত্রে বিকল্পগুলো দেখাবে; সেখান থেকে বিস্তারিত জানতে রেস্তোরাঁর ভেতর ও মেনুও দেখা যাবে।

অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম
এই হেডসেট চালিত হচ্ছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের একটি সংস্করণে। ফলে ব্যবহারকারীরা গুগল ম্যাপস, নেটফ্লিক্সসহ জনপ্রিয় অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন এক্সআর অভিজ্ঞতার মধ্যেই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ‘নতুন যুগ’
স্যামসাংয়ের মোবাইল বিভাগের নির্বাহী সহসভাপতি জে কিম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “বিশ্ব এখন এআই বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করছে। স্যামসাং এমন এআই ডিভাইস তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে, যা ব্যবহারকারীর প্রেক্ষাপট বুঝে পেছন থেকে সহযোগিতা করবে এবং দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ করবে।”
প্রায় এক দশক ধরে স্যামসাং এক্সআর বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এবং গত চার বছর ধরে গুগলের সঙ্গে যৌথভাবে উন্নয়ন কাজ চালাচ্ছে।
বাজার ও মূল্য নির্ধারণ
বুধবার থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি শুরু হয়েছে গ্যালাক্সি এক্সআর হেডসেটের। এর দাম ধরা হয়েছে এক হাজার সাতশ নিরানব্বই ডলার—যা অ্যাপলের ভিশন প্রো (শুরু ৩,৪৯৯ ডলার) ও মেটার মেটাকোয়েস্ট থ্রি (শুরু ৪৯৯ ডলার)-এর মাঝামাঝি অবস্থানে।

জে কিম জানিয়েছেন, স্মার্টফোনই স্যামসাংয়ের মূল ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থাকবে, তবে এক্সআর ডিভাইস এই ইকোসিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণ।
আসছে এআই চশমা
স্যামসাং আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারবি পার্কার ও দক্ষিণ কোরিয়ার জেন্টল মনস্টার-এর সঙ্গে যৌথভাবে ‘এআই আইগ্লাস’ উন্মোচনের পরিকল্পনা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে হেডসেটের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রদর্শন করে পরে চশমা-ভিত্তিক পণ্য দিয়ে আরও বড় গ্রাহকগোষ্ঠীতে পৌঁছাতে চায়।
দ্রুত বাড়ছে এক্সআর বাজার
মার্কিন গবেষণা সংস্থা মার্কেট.ইউএসের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক এক্সআর বাজার ২০৩২ সালের মধ্যে ৫১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে—যা ২০২৫ সালের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি।
যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওমডিয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৪৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী এক্সআর ডিভাইস বিক্রি ২০০ মিলিয়ন ইউনিট ছাড়িয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নতুন প্রতিযোগিতা
বর্তমানে পরবর্তী প্রজন্মের হেডসেট ও চশমা প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলিই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। তবে বাজার এখন হেডসেট থেকে ধীরে ধীরে চশমা-ভিত্তিক ডিভাইসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
অ্যাপল গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ভিশন প্রো উন্মোচন করে, যা স্বাস্থ্যসেবা ও উৎপাদন খাতে জনপ্রিয়তা পেলেও এর উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে তা সীমিত। সম্প্রতি তারা নিজস্ব নতুন চিপযুক্ত আরেকটি মডেল প্রকাশ করেছে, যদিও ২০২৭ সালে প্রকাশের জন্য পরিকল্পিত পরবর্তী সংস্করণের উন্নয়ন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এখন কোম্পানির লক্ষ্য এআই-সমৃদ্ধ চশমা উন্নয়ন।
মেটাও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্সের এসিলরলুক্সোটিকার সঙ্গে যৌথভাবে রে-ব্যান ব্র্যান্ডের অধীনে স্মার্ট চশমা বিক্রি করছে। সেপ্টেম্বরের শেষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত নতুন সংস্করণে এআই-নিয়ন্ত্রিত ভয়েস ও আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে বার্তা ও ছবি দেখা যায়, যা ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ীই সক্রিয় হয়।
স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এক্সআর বাজারে প্রবেশ কেবল একটি নতুন প্রযুক্তি পণ্যের আগমন নয়—এটি বৈশ্বিক এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি প্রতিযোগিতায় এক নতুন যুগের সূচনা। যেখানে এআই-চালিত বুদ্ধিমত্তা ও মানব অভিজ্ঞতার মিশ্রণ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎকে আরও বাস্তব রূপ দিতে চলেছে।
#
স্যামসাং, গ্যালাক্সি এক্সআর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি, অ্যাপল ভিশন প্রো, মেটাকোয়েস্ট, প্রযুক্তি, সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















