১১:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের পায়ে খুর দেখা গেল পেনএআইয়ের ‘অ্যাটলাস’ ব্রাউজার: গুগল ক্রোমের আধিপত্যে নতুন চ্যালেঞ্জ দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঋণ পরিশোধে অপমান সইতে না পেরে প্রাণ দিলেন মনির লালমনিরহাটে অবৈধভাবে বিক্রির জন্য মজুত ৪১৬ বস্তা সার জব্দ জমি নিয়ে সালিশে মারধর—হাতুড়ির আঘাতে প্রাণ গেল স্থানীয় মাতব্বরের স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামী পলাতক ধ্বসের কিনারে কেন শেয়ারবাজারের লেনদেন ও সূচক দুইই! লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ৩০৯ বাংলাদেশি— আরো ফেরানোর উদ্যোগ সাগর-রুনি হত্যা তদন্তে টাস্কফোর্সকে শেষবারের মতো ৬ মাস সময় দিল হাইকোর্ট

ডিজিটাল যুগে বেড়ে চলেছে অনলাইন সহিংসতা ও আত্ম-ক্ষতিকর কনটেন্ট—আইপিএসের এক বছরের গবেষণায় নতুন চিত্র

সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ (IPS) পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অসহমতনির্ভর যৌন কনটেন্ট, আত্ম-ক্ষতিকর আচরণের প্রচার, এবং লক্ষ্যভিত্তিক হয়রানি—এগুলোই নাগরিকদের চোখে সবচেয়ে ক্ষতিকর অনলাইন আচরণ হিসেবে বিবেচিত। ১৬ প্রকার অনলাইন ক্ষতির মধ্যে এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাবের মাত্রা সর্বোচ্চ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

গবেষণার কাঠামো

গবেষণাটি জুন ২০২৪ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত এক বছর ধরে পরিচালিত হয়। এতে আইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নীতি পর্যালোচনা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা এবং ৬০০ জন সিঙ্গাপুরিয়ান ও স্থায়ী বাসিন্দার ওপর জরিপ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট ও ইনফরমেশন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে করা এই গবেষণায় দেখা যায়, নাগরিকরা শিশু যৌন শোষণ, সহিংসতা বা সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত কনটেন্ট এবং সংগঠিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে সবচেয়ে গুরুতর অনলাইন ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

তবে ‘ডক্সিং’, ‘ইমপারসোনেশন’ ও ‘সাইবার বুলিং’-এর মতো ক্ষতির ক্ষেত্রে মতভেদ দেখা গেছে, যা বয়স ও সামাজিক পটভূমি অনুযায়ী ভিন্নতা দেখিয়েছে।

সবচেয়ে গুরুতর অনলাইন ক্ষতি

আইপিএসের সিনিয়র গবেষক ড. চিউ হান আই জানান, সব বয়স ও লিঙ্গের অংশগ্রহণকারীরা অসহমতনির্ভর যৌন কনটেন্টকে সবচেয়ে গুরুতর অনলাইন ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। অংশগ্রহণকারীদের মতে, ব্যক্তিগত বা অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশের হুমকি অনেক সময় পারিবারিক সহিংসতার রূপ নেয় এবং সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও তা অব্যাহত থাকে।

Singaporeans place equal onus on users and tech firms doing more to address online  harms: IPS study - CNA

দ্বিতীয় স্থানে এসেছে আত্মহত্যা, আত্ম-ক্ষতি বা খাদ্যবিকারের মতো বিপজ্জনক আচরণের প্রচার। ড. চিউ বলেন, এই ফলাফল গবেষক দলকেও বিস্মিত করেছে। অভিভাবক ও তরুণ পরামর্শদাতাদের মতে, এসব অনলাইন গ্রুপ তরুণদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে, যেখানে ‘কাটিং’ বা ‘প্রো-অ্যানোরেক্সিয়া’ কনটেন্ট শেয়ার করা হয়।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘স্বাভাবিকীকরণ’

গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণদের মধ্যে কিছু অনলাইন ক্ষতি “স্বাভাবিক” বলে ধরে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ড. চিউ বলেন, “অনেক তরুণ ট্রল বা কটূ মন্তব্যকে অনলাইন অভিজ্ঞতার স্বাভাবিক অংশ বলে মনে করে। এমনকি ‘ক্যাটফিশিং’-কেও তারা অনেক সময় নিছক মজা হিসেবে নেয়।”

সহ-গবেষক ড. ক্যারল সুন বলেন, এই স্বাভাবিকীকরণ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, যা তরুণদের আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্কেও ছাপ ফেলবে। অনলাইন আচরণের প্রভাব অফলাইন জীবনে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

সচেতনতা ও আইনি পদক্ষেপের আহ্বান

ড. চিউ মনে করেন, স্বাভাবিকীকরণের এই প্রবণতা রোধে প্রযুক্তি কোম্পানি, অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে আরও আলোচনার প্রয়োজন—কোন আচরণ সমাজে গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা জরুরি।

Non-consensual sexual content, promotion of risky actions among severe  online harms in Singapore - Asia News NetworkAsia News Network

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, অধিকাংশ নাগরিক শক্তিশালী আইন প্রণয়নের পক্ষে। ৭৯.৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি, এবং ৭৭.৪ শতাংশ চান ক্ষতিকর অনলাইন কনটেন্ট দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা।

অনলাইন সেফটি কমিশনের উদ্যোগ

১৫ অক্টোবর সংসদে উপস্থাপিত নতুন বিলের অধীনে একটি অনলাইন সেফটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা অসহমতনির্ভর ছবি প্রচার, শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত কনটেন্ট বা ডক্সিং-এর মতো অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিকার চাইতে পারবেন।

ড. সুন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ক্ষতিকর কনটেন্টের দ্রুত অপসারণ। তবে অনেকেই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের জটিল রিপোর্টিং প্রক্রিয়া ও ভিন্ন সংজ্ঞার কারণে বিভ্রান্ত হন।

নীতি ও নির্দেশিকা হালনাগাদের সুপারিশ

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, নীতিনির্ধারক ও প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্পষ্ট, নিয়মিত হালনাগাদ এবং সহজ ভাষায় রিপোর্টিং নির্দেশিকা প্রকাশ করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীরা জানেন অভিযোগের ধাপ, মূল্যায়নের মানদণ্ড ও সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে।

ড. সুনের ভাষায়, “সবার জন্য একরূপ নির্দেশনা জরুরি—যাতে মানুষ বুঝতে পারে কিভাবে সাহায্য চাওয়া যায় এবং কীভাবে ক্ষতিকর অনলাইন আচরণ থামানো সম্ভব।”

#সিঙ্গাপুর,# অনলাইন সেফটি, #আইপিএস গবেষণা, #যৌন কনটেন্ট,# সাইবার বুলিং, #সামাজিক মাধ্যম,# ডিজিটাল নিরাপত্তা, #সারাক্ষণ রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের পায়ে খুর দেখা গেল

ডিজিটাল যুগে বেড়ে চলেছে অনলাইন সহিংসতা ও আত্ম-ক্ষতিকর কনটেন্ট—আইপিএসের এক বছরের গবেষণায় নতুন চিত্র

০৭:৩৯:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ (IPS) পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অসহমতনির্ভর যৌন কনটেন্ট, আত্ম-ক্ষতিকর আচরণের প্রচার, এবং লক্ষ্যভিত্তিক হয়রানি—এগুলোই নাগরিকদের চোখে সবচেয়ে ক্ষতিকর অনলাইন আচরণ হিসেবে বিবেচিত। ১৬ প্রকার অনলাইন ক্ষতির মধ্যে এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাবের মাত্রা সর্বোচ্চ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

গবেষণার কাঠামো

গবেষণাটি জুন ২০২৪ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত এক বছর ধরে পরিচালিত হয়। এতে আইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নীতি পর্যালোচনা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা এবং ৬০০ জন সিঙ্গাপুরিয়ান ও স্থায়ী বাসিন্দার ওপর জরিপ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট ও ইনফরমেশন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে করা এই গবেষণায় দেখা যায়, নাগরিকরা শিশু যৌন শোষণ, সহিংসতা বা সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত কনটেন্ট এবং সংগঠিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে সবচেয়ে গুরুতর অনলাইন ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

তবে ‘ডক্সিং’, ‘ইমপারসোনেশন’ ও ‘সাইবার বুলিং’-এর মতো ক্ষতির ক্ষেত্রে মতভেদ দেখা গেছে, যা বয়স ও সামাজিক পটভূমি অনুযায়ী ভিন্নতা দেখিয়েছে।

সবচেয়ে গুরুতর অনলাইন ক্ষতি

আইপিএসের সিনিয়র গবেষক ড. চিউ হান আই জানান, সব বয়স ও লিঙ্গের অংশগ্রহণকারীরা অসহমতনির্ভর যৌন কনটেন্টকে সবচেয়ে গুরুতর অনলাইন ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। অংশগ্রহণকারীদের মতে, ব্যক্তিগত বা অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশের হুমকি অনেক সময় পারিবারিক সহিংসতার রূপ নেয় এবং সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও তা অব্যাহত থাকে।

Singaporeans place equal onus on users and tech firms doing more to address online  harms: IPS study - CNA

দ্বিতীয় স্থানে এসেছে আত্মহত্যা, আত্ম-ক্ষতি বা খাদ্যবিকারের মতো বিপজ্জনক আচরণের প্রচার। ড. চিউ বলেন, এই ফলাফল গবেষক দলকেও বিস্মিত করেছে। অভিভাবক ও তরুণ পরামর্শদাতাদের মতে, এসব অনলাইন গ্রুপ তরুণদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে, যেখানে ‘কাটিং’ বা ‘প্রো-অ্যানোরেক্সিয়া’ কনটেন্ট শেয়ার করা হয়।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘স্বাভাবিকীকরণ’

গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণদের মধ্যে কিছু অনলাইন ক্ষতি “স্বাভাবিক” বলে ধরে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ড. চিউ বলেন, “অনেক তরুণ ট্রল বা কটূ মন্তব্যকে অনলাইন অভিজ্ঞতার স্বাভাবিক অংশ বলে মনে করে। এমনকি ‘ক্যাটফিশিং’-কেও তারা অনেক সময় নিছক মজা হিসেবে নেয়।”

সহ-গবেষক ড. ক্যারল সুন বলেন, এই স্বাভাবিকীকরণ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, যা তরুণদের আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্কেও ছাপ ফেলবে। অনলাইন আচরণের প্রভাব অফলাইন জীবনে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

সচেতনতা ও আইনি পদক্ষেপের আহ্বান

ড. চিউ মনে করেন, স্বাভাবিকীকরণের এই প্রবণতা রোধে প্রযুক্তি কোম্পানি, অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে আরও আলোচনার প্রয়োজন—কোন আচরণ সমাজে গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা জরুরি।

Non-consensual sexual content, promotion of risky actions among severe  online harms in Singapore - Asia News NetworkAsia News Network

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, অধিকাংশ নাগরিক শক্তিশালী আইন প্রণয়নের পক্ষে। ৭৯.৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি, এবং ৭৭.৪ শতাংশ চান ক্ষতিকর অনলাইন কনটেন্ট দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা।

অনলাইন সেফটি কমিশনের উদ্যোগ

১৫ অক্টোবর সংসদে উপস্থাপিত নতুন বিলের অধীনে একটি অনলাইন সেফটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা অসহমতনির্ভর ছবি প্রচার, শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত কনটেন্ট বা ডক্সিং-এর মতো অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিকার চাইতে পারবেন।

ড. সুন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ক্ষতিকর কনটেন্টের দ্রুত অপসারণ। তবে অনেকেই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের জটিল রিপোর্টিং প্রক্রিয়া ও ভিন্ন সংজ্ঞার কারণে বিভ্রান্ত হন।

নীতি ও নির্দেশিকা হালনাগাদের সুপারিশ

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, নীতিনির্ধারক ও প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্পষ্ট, নিয়মিত হালনাগাদ এবং সহজ ভাষায় রিপোর্টিং নির্দেশিকা প্রকাশ করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীরা জানেন অভিযোগের ধাপ, মূল্যায়নের মানদণ্ড ও সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে।

ড. সুনের ভাষায়, “সবার জন্য একরূপ নির্দেশনা জরুরি—যাতে মানুষ বুঝতে পারে কিভাবে সাহায্য চাওয়া যায় এবং কীভাবে ক্ষতিকর অনলাইন আচরণ থামানো সম্ভব।”

#সিঙ্গাপুর,# অনলাইন সেফটি, #আইপিএস গবেষণা, #যৌন কনটেন্ট,# সাইবার বুলিং, #সামাজিক মাধ্যম,# ডিজিটাল নিরাপত্তা, #সারাক্ষণ রিপোর্ট