বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে এবং বাংলাদেশ প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সংকট কাটাতে সব রাজনৈতিক দলকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।
জামায়াতের জোট ও বিএনপির অবস্থান
ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফখরুল বলেন, বিএনপি সব গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে প্রস্তুত — এমনকি জামায়াতের সঙ্গেও, যদি তা জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে হয়। তিনি আরও জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে বিএনপির নির্বাচনী জোটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
ফখরুল বলেন, বিএনপি জোটসঙ্গীদের প্রতি আসন বণ্টনে উদার থাকবে, যদি তাদের যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী থাকে।
অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও গণভোট নিয়ে মন্তব্য
জামায়াতের সাম্প্রতিক প্রস্তাব — অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতি ও নির্বাচনের আগে গণভোট — বিষয়ে ফখরুল বলেন, “জামায়াতকে বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত, যাতে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়।”
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে সতর্কবার্তা
বিএনপি মহাসচিব স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা ইসলামি দলগুলোর জোট নিয়ে চিন্তিত নই। কিন্তু ধর্মকে রাজনীতি বা নির্বাচনে ব্যবহারের যে কোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করব। আমরা রাজনীতির জবাব রাজনীতি দিয়েই দেব, ধর্ম দিয়ে নয়।”
এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক
এনসিপির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। “এখনই কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের দল সব রাজনৈতিক দলের জন্য দরজা খোলা রাখে।”
জামায়াতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যদি জামায়াত আমাদের সঙ্গে আসতে চায়, আমরা বিবেচনা করব। তবে রাজনীতিতে সবসময়ই সরকার ও বিরোধী পক্ষের ভারসাম্য থাকতে হয় — এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”
জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা
ফখরুল জানান, নির্বাচনের পর বিএনপি তাদের জোটসঙ্গীদের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে। “আমরা ঘোষণা দিয়েছি, একযোগে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে একটি জাতীয় সরকার গঠন করব।”
প্রার্থী যাচাই ও আসন বণ্টন
ফখরুল বলেন, মাঠপর্যায়ে সমীক্ষা চালিয়ে প্রার্থী নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। “কে বিজয়ী হতে পারে, কে জনসমর্থন পাচ্ছে — এসব যাচাই চলছে। দীর্ঘ ১৫–১৬ বছর নির্বাচনের বাইরে থাকায় তরুণ ও অভিজ্ঞ উভয় প্রার্থীকে বিবেচনা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংসদীয় বোর্ড।”
তিনি জানান, একযোগে আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা দিতে বলা হয়েছে, যাতে বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করা যায়।
নির্বাচনী ইশতেহার ও সংস্কার পরিকল্পনা
বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার প্রায় চূড়ান্ত বলে জানান ফখরুল। এটি দলের ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে।
“আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শাসন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি,” বলেন তিনি।
তিনি যোগ করেন, “আমাদের চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছেন — ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৫ মাসে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে। তাছাড়া পরিবার কার্ড, কৃষক কার্ড ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করার বিস্তারিত পরিকল্পনাও রয়েছে।”
অর্থনীতি, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
ফখরুল বলেন, “দেশে গণতন্ত্র না থাকায় অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও রপ্তানি সব ক্ষেত্রেই পতন ঘটছে। অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, বাংলাদেশ প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে।”
তিনি সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানান — দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচনে অংশ নিতে। “ফলাফল যাই হোক, আমাদের তা মেনে নিতে হবে এবং একসঙ্গে দেশ পুনর্গঠনে কাজ করতে হবে।”
সংসদেই সমাধান, রাস্তায় নয়
ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জায়গা সংসদ, রাস্তায় নয়। গণতন্ত্র সংসদেই বিকশিত হয়, সহিংসতায় নয়। রাজনীতি যখন রাস্তায় নামে, তখন জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে স্পষ্ট — দলটি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরোধী, তবে গণতান্ত্রিক জোট ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফখরুলের ভাষায়, “গণতান্ত্রিক সরকার ও সুষ্ঠু নির্বাচনই দেশের সংকট সমাধানের প্রথম ধাপ।”
#ট্যাগ: বিএনপি, মির্জা_ফখরুল, জামায়াত, জাতীয়_নির্বাচন, রাজনীতি, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, এনসিপি, জাতীয়_সরকার, ইশতেহার, বাংলাদেশ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















