২০২৫ সালে ফ্যাশন ও চলচ্চিত্র—এই দুটি সৃজনশীল শিল্পের সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রেড কার্পেট থেকে শুরু করে সিনেমার দৃশ্যপট, এমনকি ফ্যাশন হাউসের প্রচারণা—সব জায়গাতেই চলচ্চিত্র এখন ফ্যাশনের মূল অনুপ্রেরণা। একইসঙ্গে, ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলিও নিজেদের ভাবনা ও পরিচয় তুলে ধরছে সিনেমার পর্দায়।
কান উৎসবে ফ্যাশনের নতুন ভাষা
এই বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্তগুলোর একটি ছিল জুলিয়ান মুরের পোশাক। তিনি পরেছিলেন কালো রঙের একটি পোশাক, যার চামড়ার মোটা বোনা ফিতেটি ছিল বোটেগা ভেনেতার নতুন ডিজাইনার লুইস ট্রটারের হাতের কাজ। এভাবে রেড কার্পেটেই ট্রটারের নতুন কালেকশন আত্মপ্রকাশ করে, যা ফ্যাশন দুনিয়ায় এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ।
অন্যদিকে, অভিনেত্রী এল ফ্যানিং গুচ্চির পোশাকে হাজির হয়ে দর্শকদের চমকে দেন। তার টি-শার্টে লেখা ছিল “Joachim Trier Summer”, যা একদিকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান চলচ্চিত্রকারের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যদিকে ফ্যাশন ও সিনেমা—উভয়েরই বুদ্ধিদীপ্ত প্রচার।

র্যাম্পে চলচ্চিত্রের ছায়া
ভ্যালেনটিনোর শরৎ-শীতকালীন শো ছিল যেন এক চলচ্চিত্র দৃশ্য। ডেভিড লিঞ্চের সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত সেটে অভিনেত্রী নাওমি ওয়াটসের কন্যা কাই শ্রেইবার প্রথমবারের মতো র্যাম্পে হাঁটেন। এটি ছিল প্রজন্মান্তরের সংযোগের এক প্রতীকী মুহূর্ত।
ব্যালেনসিয়াগার প্রি-ফল কালেকশনেও দেখা যায় চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা—নিকোল কিডম্যান, ইজাবেল হুপার ও মিশেল ইয়োহ-এর ছবি ছাপানো ব্যান্ড-স্টাইল টি-শার্ট যেন অভিনেতাদের জনপ্রিয়তার প্রতি এক সম্মান।
সৃজনশীল সহযোগিতা ও পারফরম্যান্স
গিভেনচির ক্যাম্পেইনে পরিচালক হালিনা রেইনের উপস্থিতি এবং মডেল কাইয়া গারবারকে পোজ শেখানোর দৃশ্যটি ছিল যেন দুই শিল্পের শিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির প্রতিচ্ছবি। ফ্যাশন ও চলচ্চিত্রের এই পারফর্ম্যান্সভিত্তিক যোগাযোগ এখন সৃজনশীলতার নতুন ভাষা তৈরি করছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
নিউ ইয়র্কের মিউজিয়াম অ্যাট FIT-এর কস্টিউম কিউরেটর কলিন হিল বলেন, “চ্যানেলের হলিউড যাত্রা কিংবা ডিজাইনার অ্যাড্রিয়ানের কাজ প্রমাণ করে, ফ্যাশন ও চলচ্চিত্রের যুগলতা বহু পুরনো।” জোয়ান ক্রফোর্ড বা ক্যাথারিন হেপবার্নের পোশাক ডিজাইন করে অ্যাড্রিয়ান একসময় সিনেমাকে গ্ল্যামারের মাধ্যম বানিয়ে তুলেছিলেন।
আধুনিক কৌশল: সিনেমায় ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি
বর্তমানে চলচ্চিত্র ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর সবচেয়ে কার্যকর প্রচারণা মাধ্যম। ডিওরের নতুন পুরুষদের সংগ্রহে রবার্ট প্যাটিনসন, মিয়া গোথ, লাকিথ স্ট্যানফিল্ডসহ অনেক তারকা অংশ নিয়েছেন—যা ডিজাইনারের সাহসী সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
ডিওরের নতুন ‘বুক টোট’ দেখা যায় জেনিফার লরেন্স ও মাইকি ম্যাডিসনের হাতে, যারা নিজেরা সামাজিক মাধ্যমে অনুপস্থিত। অথচ তাঁদের উপস্থিতিই ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা বহন করে।

চলচ্চিত্র প্রযোজনায় ফ্যাশন হাউস
সেন্ট লরাঁ শুধু প্রচারণায় নয়, সরাসরি চলচ্চিত্র প্রযোজনাতেও যুক্ত। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তাদের ‘সেন্ট লরাঁ প্রোডাকশনস’ ইতিমধ্যেই পেদ্রো আলমোদোভার ও ডেভিড ক্রোনেনবার্গের মতো নির্মাতার সঙ্গে কাজ করে দুটি অস্কার জিতেছে।
নারীবাদী দৃষ্টিকোণ ও মিউ মিউ উইমেন’স টেলস
মিউ মিউর “Women’s Tales” উদ্যোগ নারীনির্মাতাদের দিয়ে শর্টফিল্ম তৈরি করায়, যা এখন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে নিয়মিত প্রদর্শিত হয়। প্রতিটি চলচ্চিত্রেই ব্যবহৃত হয় মিউ মিউর পোশাক, যা শিল্প ও ব্র্যান্ডের মেলবন্ধনের দৃষ্টান্ত।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সিনেমা ও ফ্যাশন
লেটারবক্সড অ্যাপ, যা মূলত চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম, সম্প্রতি বারবেরির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারকাদের প্রিয় সিনেমা-ভিত্তিক প্রচারণা চালিয়েছে। এটি প্রমাণ করছে—ফ্যাশন ও চলচ্চিত্র কেবল শিল্প নয়, ডিজিটাল প্রভাবেরও একটি সম্মিলিত ক্ষেত্র।
ফ্যাশন ও চলচ্চিত্র এখন একে অপরের ভাষা বুঝতে শিখেছে। উভয় ক্ষেত্রই কাহিনি, আবেগ ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে দর্শককে এক নতুন সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। ২০২৫ সালের এই সংযোগ হয়তো কেবল সূচনা—যেখানে ফ্যাশনের নকশা ও চলচ্চিত্রের দৃশ্য মিলে যাচ্ছে এক সমন্বিত শিল্পে।
# ফ্যাশন,# চলচ্চিত্র,# কান_#ফিল্ম_ফেস্টি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















