অন্ধকার থেকে জন্ম নেওয়া খাদ্য ব্র্যান্ড
স্কট টার্নার ও নিক লাগোনিয়া নামের দুই বন্ধু একসময় নিউ ইয়র্কের একটি ছোট জিমে যন্ত্রণা আর ঘামে ভেজা ওয়ার্কআউট করতেন। একসময় এই অভিজ্ঞতা থেকেই জন্ম নেয় তাঁদের নতুন ব্র্যান্ড Misery & Mayhem—উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ওটমিল, যার প্যাকেজিংয়ে আছে হেভি মেটাল ব্যান্ডের মতো আগুনঝরা ডিজাইন।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করা, যা একদিকে কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক, অন্যদিকে ব্যথা ও অধ্যবসায়ের গল্প বলে। নামের মতোই তাদের প্রেরণা এসেছিল ব্যথা, ঘাম ও সঙ্গীত থেকে—প্যান্টেরা, অজি ওসবার্ন, ফুল অব হেল-এর মতো ব্যান্ড যাদের সুরে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
হেভি মেটাল আর স্বাস্থ্যপণ্যের অদ্ভুত মেলবন্ধন
আজকাল ওটমিল, কফি বা পানি—সব জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে “ডুম ফুড” বা হেভি মেটাল অনুপ্রাণিত ব্র্যান্ডিং। কোম্পানিগুলো বুঝে ফেলেছে, সাধারণ স্বাস্থ্যসচেতন ক্রেতাদের পাশাপাশি এমন এক শ্রেণি আছে যারা একঘেয়েমি ভাঙতে চায়, যারা চায় তাদের সকালের নাশতায়ও বিদ্রোহের ছোঁয়া।
এই ট্রেন্ডের শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় Death Wish Coffee Co.-তে, যারা ২০১২ সালে খুলেছিল, খুলি চিহ্নিত কালো ব্যাগে তাদের “সবচেয়ে শক্তিশালী কফি”। পরবর্তীতে তারা হেভি মেটাল গিটারিস্ট জ্যাক ওয়াইল্ডের সঙ্গে তৈরি করে “Valhalla Java Odinforce Blend।”
এভাবেই ‘ডুম ফুড’ শুধু সঙ্গীতপ্রেমীদের নয়, বরং তাদেরও আকর্ষণ করছে যারা চায় দৈনন্দিন ক্লান্ত জীবনে কিছুটা উন্মাদনা ও শক্তি।
“লিকুইড ডেথ”—পানির বোতলে বিদ্রোহ
২০১৯ সালে শুরু হয় আরেক দুঃসাহসী ব্র্যান্ড, Liquid Death, যারা সাধারণ মিনারেল ওয়াটার বিক্রি করে, কিন্তু নাম দিয়েছে “Murder Your Thirst”—তোমার তৃষ্ণাকে হত্যা করো। তাদের কফিন-আকৃতির কুলার, হেভি মেটাল মিউজিক ভিডিও স্টাইলের বিজ্ঞাপন এবং মাসকট “Murder Man” দ্রুতই তাদের তরুণ প্রজন্মের প্রিয় করে তোলে।
ব্র্যান্ডটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইক সেসারিও নিজে হেভি মেটাল ব্যান্ডে বাজাতেন। তিনি স্বাস্থ্যপণ্যের চেনা নিরীহ ইমেজকে ভেঙে দিয়ে তৈরি করেছেন এমন এক বিপরীতধর্মী ব্র্যান্ড, যা হাস্যরস ও বিদ্রোহের সংমিশ্রণ।
২০২৪ সালে Liquid Death-এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার—একটি বোতলজাত পানির কোম্পানির জন্য অবিশ্বাস্য সাফল্য।
বয়স, স্বাস্থ্য আর “অন্ধকার হাস্যরস”
এই “ডার্ক” ব্র্যান্ডিংয়ের পেছনে আছে সময়ের পরিবর্তনও। যেমন, মেটালিকা ব্যান্ড এখন মদ ছেড়ে অর্গানিক খাবার খায়, ব্যায়াম করে। বয়স বাড়লেও মানুষ নিজেদের পুরনো রক-স্পিরিট ধরে রাখতে চায়—এই চাহিদার ওপরে দাঁড়িয়েই ডুম ফুডের জনপ্রিয়তা।

Death Wish Coffee-এর মার্কেটিং ডিরেক্টর জানান, তাদের বহু ক্রেতা আসলে কর্মজীবী নারী, নার্স বা মা, যারা ১২ ঘণ্টা কাজের পরও এই কফিতে খুঁজে পান একটুখানি “বিক্ষোভের আনন্দ”।
বিশেষজ্ঞ এমিলি কনটোয়া বলেন, এই ট্রেন্ড শুধুই সঙ্গীতপ্রেম নয়—এটি একপ্রকার আত্মপরিচয়ের প্রকাশ। অনেকে এই ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে খুঁজে পান নস্টালজিয়া, বিদ্রোহ ও আত্মমুক্তির প্রতীক।
বিপণনের অন্ধকার রসিকতা, নাকি বাস্তবতা?
যদিও কেউ কেউ এই প্রবণতাকে নিছক মার্কেটিং কৌশল বলছেন, তবু Liquid Death-এর ৭ মিলিয়নেরও বেশি ইনস্টাগ্রাম অনুসারী ও তাদের পণ্যের বিপুল বিক্রি প্রমাণ করে যে মানুষ “বিদ্রোহী” ব্র্যান্ড ভালোবাসে।
তাদের নতুন আইসড টি লাইন ইতোমধ্যেই অ্যামাজনের সবচেয়ে বিক্রিত পানীয়। প্রতিষ্ঠাতা দলের মতে, এটি মজা ও শ্রদ্ধার মিশ্রণ—তারা যে সংস্কৃতিকে ব্যঙ্গ করছে, সেটিকেই ভালোবাসে।
ভবিষ্যতের “ডুম ফুড”
যখন কফি, পানি ও ওটমিল পর্যন্ত হেভি মেটাল হয়ে উঠছে, তখন প্রশ্ন জাগে—এর পর কী? হয়তো আগামীতে “হাইপারপপ সালমন” বা “ফঙ্ক কুইনোয়া” দেখব, যেখানে নতুন প্রজন্মও তাদের খাবারে খুঁজবে সঙ্গীত, রাগ ও মুক্তির ছোঁয়া।
স্বাস্থ্যপণ্যের এই “অন্ধকার বিপ্লব” হয়তো কেবল শুরু।
#ডুম_ফুড #হেভি_মেটাল_ব্র্যান্ডিং #লিকুইড_ডেথ #ডেথ_উইশ_কফি #স্বাস্থ্যসংস্কৃতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















