প্রথাগত ভুল ধারণার ভাঙন
স্কুল ও কলেজ জীবনে লেখক লরেন কলেনসো-সেম্পল শুনেছিলেন, জিম মানেই ওজন কমানো—আর ভারোত্তোলন কেবল পুরুষদের জন্য। “বডিবিল্ডারের মতো” হয়ে যাওয়ার ভয় তাঁকে দূরে রেখেছিল শক্তি প্রশিক্ষণ থেকে। কিন্তু এক দৌড়-সংক্রান্ত চোট ও তিন মাস পুনর্বাসনের পর, তিনি প্রথমবার হাতে নিলেন ডাম্বেল—আর সেখান থেকেই বদলে গেল দৃষ্টিভঙ্গি।
ভারোত্তোলন তাঁকে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও দৃঢ় করে তুলেছিল। তিনি বুঝলেন, “পুরুষ-নারীর শরীর আলাদা, তাই ব্যায়ামও আলাদা হতে হবে”—এই ধারণাটি আসলে বৈজ্ঞানিক নয়।
হরমোন তত্ত্বের ভুল বোঝাবুঝি
নারীদের জন্য বিশেষ ব্যায়াম পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় যুক্তি হলো হরমোন—বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন। সত্য হলো, পুরুষদের দেহে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ নারীদের তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি, যা কৈশোরে পেশি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ফলে শুরুর দিকের পার্থক্য থাকলেও, যখন নারী ও পুরুষ উভয়ই নিয়মিত ভারোত্তোলনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন, তখন তাঁদের পেশি বৃদ্ধির হার প্রায় সমান হয়—এমনটাই প্রমাণ করেছে সাম্প্রতিক PeerJ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা।
অর্থাৎ, পেশি বৃদ্ধির মূল উপাদান হলো প্রশিক্ষণের ধরণ ও ধারাবাহিকতা, লিঙ্গ নয়।

“সাইকেল সিঙ্কিং” ও ভ্রান্ত ব্যায়াম পরিকল্পনা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়েছে “সাইকেল সিঙ্কিং”—অর্থাৎ ঋতুচক্রের ধাপে ধাপে ব্যায়াম পরিবর্তন করার ধারণা। কেউ বলেন, এক সপ্তাহ ভারোত্তোলন, পরের সপ্তাহে যোগব্যায়াম, আবার কেউ বলেন ঋতুর আগে পুরো সপ্তাহ বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
কিন্তু বাস্তবে, এই পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। লরেনের মতে, এই প্রক্রিয়া নারীদের জন্য জটিল, অকার্যকর ও আত্মবিশ্বাসহীন করে তোলে। কারণ, ব্যায়ামের অগ্রগতি আসে ধারাবাহিকতার মাধ্যমে—প্রতি সপ্তাহে ব্যায়ামের ধরন বদলে ফেলা নয়।
যদি ঋতুকালীন অস্বস্তি থাকে, একদিন বিশ্রাম নেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বাকি সময় নিয়মিত ব্যায়ামই ফল দেয়।
মেনোপজ ও শক্তি রক্ষা
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশি ভর কমে, যা পুরুষ-নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে। অনেকেই মনে করেন, মেনোপজের সময় হরমোন থেরাপি বা সাপ্লিমেন্ট অপরিহার্য। কিন্তু গবেষণা বলছে, এই পর্যায়ে শক্তি প্রশিক্ষণই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
লরেন একে তুলনা করেছেন “অবসরের জন্য সঞ্চয়ের” সঙ্গে—এখন পেশিতে যত বিনিয়োগ করবেন, পরবর্তী জীবনে তার ফল তত ভালোভাবে পাবেন।
বিপণনের মায়াজাল
ফিটনেস শিল্প নারীদের লক্ষ্য করে তৈরি করেছে “টোনড বডি”, “লিন মাসল”–এর মতো বিভ্রান্তিকর শব্দ। এসব প্রোগ্রাম সাধারণত এমন হালকা ব্যায়াম বা ওজন ব্যবহারের পরামর্শ দেয় যা আসলে পেশি গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়।
লরেনের মতে, “বডিবিল্ডার হয়ে যাওয়ার ভয়” সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পেশি বাড়ানো একটি ধীর প্রক্রিয়া, যা বছরের পর বছর নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব হয়।
কার্যকর ব্যায়ামের মূল সূত্র
নারী বা পুরুষ—সবার জন্যই শক্তি গঠনের মূলনীতি এক: নিয়মিততা ও ধাপে ধাপে চ্যালেঞ্জ বাড়ানো। নির্দিষ্ট “জাদুকরী” ব্যায়াম বা রিপ সংখ্যার প্রয়োজন নেই।
৫ থেকে ২০ রিপের মধ্যে ভারোত্তোলন কার্যকর, তবে ওজন হতে হবে যথেষ্ট কঠিন—যাতে প্রতিটি সেটের শেষে মাত্র এক থেকে পাঁচ রিপ অবশিষ্ট থাকে। বড় মাংসপেশির ব্যায়াম যেমন স্কোয়াট বা লাঞ্জে ওজন বেশি ব্যবহার করা যায়, কিন্তু বাইসেপ কার্লের মতো একক পেশির ব্যায়ামে কম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বা রিপ সংখ্যা বাড়ান, তবে ব্যায়াম পরিবর্তন করবেন না—দুই থেকে তিন মাস একই অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া উন্নতির চাবিকাঠি।
নারীর শক্তি, বিজ্ঞানের ভিত্তিতে
লরেনের মতে, নারীদের জন্য ব্যায়ামকে জটিল করে দেখানোর সময় শেষ। “আমরা দুর্বল নই, আমাদের শরীর কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ সামলাতে পারে।”
তিনি বলেন, “সত্য হলো—আমাদের আলাদা নিয়মের দরকার নেই, দরকার নিয়মিততা, আত্মবিশ্বাস এবং প্রমাণভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি।”
#নারীস্বাস্থ্য #ফিটনেস #বিজ্ঞানভিত্তিকব্যায়াম #শক্তিপ্রশিক্ষণ #উইমেনসহেলথ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















