০৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
আনোয়ার, ট্রাম্প এবং সম্পৃক্ততার কৌশল গণভোট বিতর্ক রেখেই সুপারিশ অদৃশ্য বিপদে পৃথিবী ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ সংকট আমেরিকার প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের বৈপরীত্য ও আত্মসমালোচনা,গৌরব ও পাপের দ্বৈত মুখোশ উন্মোচন ‘গ্রিন ট্রি সাপ’—সবুজ পাতার আড়ালে লুকানো নীরব সৌন্দর্য আরব আমিরাতের আল আইন জাদুঘর—পাথর যুগ থেকে ইসলামি যুগের ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন মিশরে সূচালো দাঁতওয়ালা ৮ কোটি বছর আগের সামুদ্রিক কুমিরের জীবাশ্ম আবিষ্কার আমেরিকার জন্মকথা—ইতিহাসের দ্বন্দ্ব, স্বাধীনতার গল্প ও মানবতার প্রতিচ্ছবি প্রযুক্তির অবক্ষয় ও পুনর্জাগরণের প্রশ্নে কোরি ডাক্টরোর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৫)

আরব আমিরাতের আল আইন জাদুঘর—পাথর যুগ থেকে ইসলামি যুগের ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন

ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্রে আল আইন জাদুঘর

যারা মানব সভ্যতার সূচনালগ্নে ফিরে গিয়ে মরু অঞ্চলের প্রাচীন জীবনধারা অনুভব করতে চান, তাদের জন্য আল আইন জাদুঘর এক অনন্য গন্তব্য। তিন লাখ বছরেরও প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন ধারণ করা এই ঐতিহাসিক জাদুঘরটি দীর্ঘ সংস্কার শেষে ২৪ অক্টোবর পুনরায় উদ্বোধন করা হয়েছে।

১৯৬৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান দেশের প্রথম জাদুঘর হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহাসিক সুলতান ফোর্টের পাশে অবস্থিত এই জাদুঘর আজও আমিরাতের সংস্কৃতি ও প্রত্নঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক।

মানব বসতির ধারাবাহিকতার সাক্ষ্য

জাদুঘরের প্রদর্শনীতে আল আইন অঞ্চলে মানব বসতির বিবর্তনের এক দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে—প্যালিওলিথিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত। দর্শনার্থীরা দেখতে পারেন কীভাবে মরুভূমির মানুষ সীমিত পানিসম্পদ ও কঠিন জলবায়ু সত্ত্বেও কৃষি, স্থাপত্য ও সমাজব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন।

‘ইন সিটু’ প্রত্নতত্ত্বের জীবন্ত উদাহরণ

আল আইন জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ ‘ইন সিটু’ প্রদর্শনী—যেখানে বহু নিদর্শন তাদের মূল অবস্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। জাদুঘরের নিচে রয়েছে প্রাচীন আফলাজ সেচ ব্যবস্থা এবং এক প্রাক-ইসলামিক যুগের কবরস্থান।

মূল ভবন নির্মাণের আগে এখানকার দুই শতাধিক প্রত্নস্থল আবিষ্কৃত হয়। তাদের অনেকগুলো জাদুঘরের ভেতরেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা ইতিহাসের প্রকৃত স্তরে দাঁড়িয়ে অতীতকে উপলব্ধি করতে পারেন।

আফলাজ কূপ: মরুর সেচ প্রযুক্তির বিস্ময়

খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ থেকে খ্রিষ্টীয় ৩০০ সাল পর্যন্ত সময়ের আফলাজ কূপগুলো লৌহ যুগের অসাধারণ প্রকৌশল উদ্ভাবন। এই ভূগর্ভস্থ জলপথগুলো এখনও আল আইনে সক্রিয়। মরুভূমিতে টিকে থাকার জন্য এগুলো ছিল প্রাচীন সভ্যতার বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতীক।

প্রাক-ইসলামিক যুগের সম্মানিত সমাধি

জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ একটি বিশাল প্রাক-ইসলামিক যুগের সমাধি, যেখানে সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে সমাহিত করা হয়েছিল। কবরের মধ্যে পাওয়া গহনা, তলোয়ার, তীরধনুক ও সোনার অলঙ্কার প্রমাণ করে তাঁর মর্যাদাপূর্ণ সামাজিক অবস্থান।

জীবনযাত্রা ও ঐতিহ্যের নিদর্শন

প্রদর্শনীতে রয়েছে প্রাচীন আমিরাতি সমাজের জীবনধারার নানা উপাদান—কান্দোরা (পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাক), রূপা জড়ানো শায়লা, ঐতিহ্যবাহী কফি বানানোর সরঞ্জাম, খলিজা পাত্র, মেরওয়াদ (সুগন্ধি কাঠি) এবং বিভিন্ন গহনা।

সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০–২০০০ সালের পাথরখোদাই প্রাণীর চিত্র, যা ১৯৬১ সালে ডেনিশ প্রত্নতত্ত্ব দল উম্ম আল নার দ্বীপে আবিষ্কার করেছিল।

শেখ জায়েদের কূটনৈতিক উপহার

জাদুঘরের বিশেষ অংশে প্রদর্শিত হচ্ছে শেখ জায়েদকে বিশ্বনেতাদের দেওয়া উপহারসমূহ, যা তাঁর কূটনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী। উল্লেখযোগ্য উপহারগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • • জাপানের সামুরাই হেলমেট, যাতে পৌরাণিক সিংহ-কুকুরের খোদাই,
  • • জাভার কেরিস ছুরি, সোনায় খোদিত কুরআনিক আয়াতসহ,
  • • রূপা ও সোনায় মোড়ানো স্পেনীয় জাহাজের প্রতিরূপ,
  • • স্পেনের রাজা হুয়ান কার্লোসের দেওয়া ‘অর্ডার অব ইসাবেলা দ্য ক্যাথলিক’ (১৯৮১)।

এছাড়া জর্ডানের উপহার হিসেবে রয়েছে জেরুজালেমের ডোম অব দ্য রকের মুক্তার প্রতিরূপ এবং অ্যাপোলো ১৭ মিশনের চাঁদের শিলা ও আমিরাতের পতাকা।

বাণিজ্য ও মানব অভিযাত্রার ইতিহাস

জাবেল হাফিত ও জাবেল মুন্দাসার এলাকায় পাওয়া নিদর্শন প্রমাণ করে, আল আইন ছিল আফ্রিকা থেকে মানব অভিবাসনের এক প্রাচীন পথ। বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চল হয়ে ওঠে সংস্কৃতি ও অর্থনীতির কেন্দ্র।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ সালের এক মুদ্রায় পাওয়া যায় আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের নাম। প্রদর্শনীতে আরও রয়েছে প্রাচীন গহনা, সৌন্দর্যচর্চার সরঞ্জাম, সুগন্ধি তৈরির পাত্র, ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র এবং উট বা ষাঁড়ের হাড়ে খোদিত কুরআনিক আয়াত।

সুলতান ফোর্ট: আল আইন গ্রামের হৃদয়

জাদুঘরের প্রাঙ্গণে অবস্থিত সুলতান ফোর্ট একসময় হারেৎ আল হোসন গ্রামের কেন্দ্র ছিল। কাঁদামাটির ইট ও খেজুর পাতার ছাউনি দিয়ে নির্মিত এই স্থাপনা আল আইনের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর জীবন্ত নিদর্শন।

100,000+: Dubai’s Zabeel Park rocks with ‘UAE’s largest Indian party’

 

#আল_আইন_জাদুঘর,# শেখ_জায়েদ, #প্রত্নতত্ত্ব,# আফলাজ_#সেচ_ব্যবস্থা, #সংযুক্ত_আরব_আমিরাত, #ইতিহাস,# সংস্কৃতি, #পর্যটন

জনপ্রিয় সংবাদ

আনোয়ার, ট্রাম্প এবং সম্পৃক্ততার কৌশল

আরব আমিরাতের আল আইন জাদুঘর—পাথর যুগ থেকে ইসলামি যুগের ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন

০৩:০০:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্রে আল আইন জাদুঘর

যারা মানব সভ্যতার সূচনালগ্নে ফিরে গিয়ে মরু অঞ্চলের প্রাচীন জীবনধারা অনুভব করতে চান, তাদের জন্য আল আইন জাদুঘর এক অনন্য গন্তব্য। তিন লাখ বছরেরও প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন ধারণ করা এই ঐতিহাসিক জাদুঘরটি দীর্ঘ সংস্কার শেষে ২৪ অক্টোবর পুনরায় উদ্বোধন করা হয়েছে।

১৯৬৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান দেশের প্রথম জাদুঘর হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহাসিক সুলতান ফোর্টের পাশে অবস্থিত এই জাদুঘর আজও আমিরাতের সংস্কৃতি ও প্রত্নঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক।

মানব বসতির ধারাবাহিকতার সাক্ষ্য

জাদুঘরের প্রদর্শনীতে আল আইন অঞ্চলে মানব বসতির বিবর্তনের এক দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে—প্যালিওলিথিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত। দর্শনার্থীরা দেখতে পারেন কীভাবে মরুভূমির মানুষ সীমিত পানিসম্পদ ও কঠিন জলবায়ু সত্ত্বেও কৃষি, স্থাপত্য ও সমাজব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন।

‘ইন সিটু’ প্রত্নতত্ত্বের জীবন্ত উদাহরণ

আল আইন জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ ‘ইন সিটু’ প্রদর্শনী—যেখানে বহু নিদর্শন তাদের মূল অবস্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। জাদুঘরের নিচে রয়েছে প্রাচীন আফলাজ সেচ ব্যবস্থা এবং এক প্রাক-ইসলামিক যুগের কবরস্থান।

মূল ভবন নির্মাণের আগে এখানকার দুই শতাধিক প্রত্নস্থল আবিষ্কৃত হয়। তাদের অনেকগুলো জাদুঘরের ভেতরেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা ইতিহাসের প্রকৃত স্তরে দাঁড়িয়ে অতীতকে উপলব্ধি করতে পারেন।

আফলাজ কূপ: মরুর সেচ প্রযুক্তির বিস্ময়

খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ থেকে খ্রিষ্টীয় ৩০০ সাল পর্যন্ত সময়ের আফলাজ কূপগুলো লৌহ যুগের অসাধারণ প্রকৌশল উদ্ভাবন। এই ভূগর্ভস্থ জলপথগুলো এখনও আল আইনে সক্রিয়। মরুভূমিতে টিকে থাকার জন্য এগুলো ছিল প্রাচীন সভ্যতার বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতীক।

প্রাক-ইসলামিক যুগের সম্মানিত সমাধি

জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ একটি বিশাল প্রাক-ইসলামিক যুগের সমাধি, যেখানে সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে সমাহিত করা হয়েছিল। কবরের মধ্যে পাওয়া গহনা, তলোয়ার, তীরধনুক ও সোনার অলঙ্কার প্রমাণ করে তাঁর মর্যাদাপূর্ণ সামাজিক অবস্থান।

জীবনযাত্রা ও ঐতিহ্যের নিদর্শন

প্রদর্শনীতে রয়েছে প্রাচীন আমিরাতি সমাজের জীবনধারার নানা উপাদান—কান্দোরা (পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাক), রূপা জড়ানো শায়লা, ঐতিহ্যবাহী কফি বানানোর সরঞ্জাম, খলিজা পাত্র, মেরওয়াদ (সুগন্ধি কাঠি) এবং বিভিন্ন গহনা।

সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০–২০০০ সালের পাথরখোদাই প্রাণীর চিত্র, যা ১৯৬১ সালে ডেনিশ প্রত্নতত্ত্ব দল উম্ম আল নার দ্বীপে আবিষ্কার করেছিল।

শেখ জায়েদের কূটনৈতিক উপহার

জাদুঘরের বিশেষ অংশে প্রদর্শিত হচ্ছে শেখ জায়েদকে বিশ্বনেতাদের দেওয়া উপহারসমূহ, যা তাঁর কূটনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী। উল্লেখযোগ্য উপহারগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • • জাপানের সামুরাই হেলমেট, যাতে পৌরাণিক সিংহ-কুকুরের খোদাই,
  • • জাভার কেরিস ছুরি, সোনায় খোদিত কুরআনিক আয়াতসহ,
  • • রূপা ও সোনায় মোড়ানো স্পেনীয় জাহাজের প্রতিরূপ,
  • • স্পেনের রাজা হুয়ান কার্লোসের দেওয়া ‘অর্ডার অব ইসাবেলা দ্য ক্যাথলিক’ (১৯৮১)।

এছাড়া জর্ডানের উপহার হিসেবে রয়েছে জেরুজালেমের ডোম অব দ্য রকের মুক্তার প্রতিরূপ এবং অ্যাপোলো ১৭ মিশনের চাঁদের শিলা ও আমিরাতের পতাকা।

বাণিজ্য ও মানব অভিযাত্রার ইতিহাস

জাবেল হাফিত ও জাবেল মুন্দাসার এলাকায় পাওয়া নিদর্শন প্রমাণ করে, আল আইন ছিল আফ্রিকা থেকে মানব অভিবাসনের এক প্রাচীন পথ। বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চল হয়ে ওঠে সংস্কৃতি ও অর্থনীতির কেন্দ্র।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ সালের এক মুদ্রায় পাওয়া যায় আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের নাম। প্রদর্শনীতে আরও রয়েছে প্রাচীন গহনা, সৌন্দর্যচর্চার সরঞ্জাম, সুগন্ধি তৈরির পাত্র, ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র এবং উট বা ষাঁড়ের হাড়ে খোদিত কুরআনিক আয়াত।

সুলতান ফোর্ট: আল আইন গ্রামের হৃদয়

জাদুঘরের প্রাঙ্গণে অবস্থিত সুলতান ফোর্ট একসময় হারেৎ আল হোসন গ্রামের কেন্দ্র ছিল। কাঁদামাটির ইট ও খেজুর পাতার ছাউনি দিয়ে নির্মিত এই স্থাপনা আল আইনের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর জীবন্ত নিদর্শন।

100,000+: Dubai’s Zabeel Park rocks with ‘UAE’s largest Indian party’

 

#আল_আইন_জাদুঘর,# শেখ_জায়েদ, #প্রত্নতত্ত্ব,# আফলাজ_#সেচ_ব্যবস্থা, #সংযুক্ত_আরব_আমিরাত, #ইতিহাস,# সংস্কৃতি, #পর্যটন