০১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
আমেরিকার জন্মকথা—ইতিহাসের দ্বন্দ্ব, স্বাধীনতার গল্প ও মানবতার প্রতিচ্ছবি প্রযুক্তির অবক্ষয় ও পুনর্জাগরণের প্রশ্নে কোরি ডাক্টরোর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৫) দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে আসিয়ান ঐক্যবদ্ধ কিস্তিতে কেনাকাটার নতুন যুগে তরুণ প্রজন্মের সহজ ঋণে গভীর ফাঁদ শ্রদ্ধাঞ্জলি: বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান এর ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী সিরাজগঞ্জ কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু সেনাপ্রধানের সাথে পাকিস্তানের এর জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান এর সৌজন্য সাক্ষাৎ ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শর্ত রাখল এনসিপি

সাজালেন মুফতি মোহেববুল্লাহ’র অপহরণ, তদন্তে বেরিয়ে এলো মিথ্যা নাটক

গাজীপুরের টঙ্গীতে এক খতিবের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। পরে জানা যায়, তিনি নিজেই পায়ে শিকল বেঁধে নিজের অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। পুলিশের তদন্তে পুরো ঘটনাটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।


অপহরণের গল্প আসলে সাজানো কাহিনি

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী নিজেই পায়ে শিকল বেঁধে নিজের অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মোহেববুল্লাহ যে সময় ও স্থান থেকে অপহরণের দাবি করেছিলেন, সেসব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং দেখা গেছে, তিনি নিজেই শিকল লাগিয়ে রাস্তায় শুয়ে ছিলেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করার পর যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ মনগড়া গল্প।


অপহরণের অভিযোগ ও মামলার বিবরণ

২৪ অক্টোবর মোহেববুল্লাহ টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২২ অক্টোবর সকালে হাঁটতে বের হলে একটি অ্যাম্বুলেন্স তাঁর পথরোধ করে, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯–এ কল করলে পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে তিনি গাজীপুরে নিজের বাসায় ফেরেন।


তদন্তে নতুন তথ্য

পুলিশ জানায়, মামলার তদন্ত দল বাদীর বাসা থেকে শুরু করে অভিযোগে উল্লেখিত স্থানগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। তিন ঘণ্টার মধ্যে কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়নি। এ ছাড়া যেসব স্থানের কথা বাদী বলেছেন, সেগুলোও যাচাই করে অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে।

২২ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে মোহেববুল্লাহকে পঞ্চগড়ের শেষ বাসস্টেশনে নামতে দেখা যায়। পরে তাঁকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ লাইনসের কাছে হাঁটতে দেখা যায়। এরপর তিনি অন্ধকার একটি জায়গায় গিয়ে রাস্তার পাশে প্রস্রাব করতে যান। অসুস্থতার কারণে তাঁর পোশাক ভিজে গেলে তিনি কাপড় খুলে ফেলেন। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি ছোট তালাযুক্ত শিকল পায়ে বেঁধে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে জেগে দেখেন, তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে আছেন।


মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত

পুলিশ জানায়, আশপাশের আলেমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলেন। পরবর্তীতে নিজেও এক ভিডিও বার্তায় স্বীকার করেন, “অনেক সময় আমার মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। এর আগেও এমন হয়েছিল।”


পুলিশ বলছে তদন্ত চলছে

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। মোহেববুল্লাহর বক্তব্য যাচাই-বাছাই চলছে। তিনি একা নাকি কারো প্ররোচনায় এ কাজ করেছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া, মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ও এস এম শফিকুল ইসলাম।


#: গাজীপুর_পুলিশ, অপহরণ_নাটক, মুফতি_মোহেববুল্লাহ, বাংলাদেশ_সংবাদ, আইন_ও_অপরাধ

জনপ্রিয় সংবাদ

আমেরিকার জন্মকথা—ইতিহাসের দ্বন্দ্ব, স্বাধীনতার গল্প ও মানবতার প্রতিচ্ছবি

সাজালেন মুফতি মোহেববুল্লাহ’র অপহরণ, তদন্তে বেরিয়ে এলো মিথ্যা নাটক

০৮:০০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গীতে এক খতিবের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। পরে জানা যায়, তিনি নিজেই পায়ে শিকল বেঁধে নিজের অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। পুলিশের তদন্তে পুরো ঘটনাটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।


অপহরণের গল্প আসলে সাজানো কাহিনি

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী নিজেই পায়ে শিকল বেঁধে নিজের অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মোহেববুল্লাহ যে সময় ও স্থান থেকে অপহরণের দাবি করেছিলেন, সেসব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং দেখা গেছে, তিনি নিজেই শিকল লাগিয়ে রাস্তায় শুয়ে ছিলেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করার পর যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ মনগড়া গল্প।


অপহরণের অভিযোগ ও মামলার বিবরণ

২৪ অক্টোবর মোহেববুল্লাহ টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২২ অক্টোবর সকালে হাঁটতে বের হলে একটি অ্যাম্বুলেন্স তাঁর পথরোধ করে, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯–এ কল করলে পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে তিনি গাজীপুরে নিজের বাসায় ফেরেন।


তদন্তে নতুন তথ্য

পুলিশ জানায়, মামলার তদন্ত দল বাদীর বাসা থেকে শুরু করে অভিযোগে উল্লেখিত স্থানগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। তিন ঘণ্টার মধ্যে কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়নি। এ ছাড়া যেসব স্থানের কথা বাদী বলেছেন, সেগুলোও যাচাই করে অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে।

২২ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে মোহেববুল্লাহকে পঞ্চগড়ের শেষ বাসস্টেশনে নামতে দেখা যায়। পরে তাঁকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ লাইনসের কাছে হাঁটতে দেখা যায়। এরপর তিনি অন্ধকার একটি জায়গায় গিয়ে রাস্তার পাশে প্রস্রাব করতে যান। অসুস্থতার কারণে তাঁর পোশাক ভিজে গেলে তিনি কাপড় খুলে ফেলেন। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি ছোট তালাযুক্ত শিকল পায়ে বেঁধে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে জেগে দেখেন, তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে আছেন।


মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত

পুলিশ জানায়, আশপাশের আলেমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলেন। পরবর্তীতে নিজেও এক ভিডিও বার্তায় স্বীকার করেন, “অনেক সময় আমার মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। এর আগেও এমন হয়েছিল।”


পুলিশ বলছে তদন্ত চলছে

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। মোহেববুল্লাহর বক্তব্য যাচাই-বাছাই চলছে। তিনি একা নাকি কারো প্ররোচনায় এ কাজ করেছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া, মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ও এস এম শফিকুল ইসলাম।


#: গাজীপুর_পুলিশ, অপহরণ_নাটক, মুফতি_মোহেববুল্লাহ, বাংলাদেশ_সংবাদ, আইন_ও_অপরাধ