ভালোবাসাই সাংস্কৃতিক বাধা ভাঙার শক্তি
খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অধ্যাপক দাতুক ড. এ. রাজাক মোহাইদিন আবারও ফিরেছেন তাঁর জনপ্রিয় চরিত্র ‘মামি জারুম’-এর নতুন অভিযানে। নতুন সিনেমার নাম ‘আনাক মামি জারুম দালকা চিন্তা কেরাবু’, যেখানে ভালোবাসা দুই ভিন্ন সংস্কৃতির সেতুবন্ধন হিসেবে উঠে এসেছে। রাজাক বলেন, “এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে, ভালোবাসা সব সংস্কৃতিক বাধা জয় করতে পারে।”
পেনাং থেকে কেলান্তান—দুই সংস্কৃতির মেলবন্ধন
সিনেমাটি একটি রোমান্টিক কমেডি, যেখানে পেনাং-এর ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের তরুণ ও কেলান্তানের এক তরুণীর প্রেম কাহিনি ফুটে উঠেছে। রাজাক জানান, “চিত্রগ্রহণ শুরু হবে ৩ নভেম্বর পেনাং-এ, এরপর ২৫ দিনের শুটিং শেষে আমরা যাব কেলান্তান।”
এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পেনাং ও কেলান্তানের সংস্কৃতির পার্থক্য ও মিল একসঙ্গে তুলে ধরা হবে। রাজাক বলেন, “দুই অঞ্চলের রীতিনীতির মজার সাংস্কৃতিক ধাক্কা দর্শকদের হাসাবে, কিন্তু মূল বার্তা হলো—ভালোবাসা সব সীমা অতিক্রম করতে পারে।”

নতুন চরিত্রে নতুন প্রজন্মের ‘মামি জারুম’
২০০২ সালের ‘মামি জারুম’ ও ২০০৩ সালের ‘মামি জারুম জুনিয়র’-এর সফলতা দর্শকদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। রাজাক জানান, ‘দুয়ং ২’ শেষ করার পরই দর্শকরা তাঁকে ‘মামি জারুম’-এর আরেকটি সিক্যুয়েল করার আহ্বান জানান। তবে তিনি এবার নতুনভাবে গল্প সাজিয়েছেন—নতুন দুই মামি জারুমকে ঘিরে, যাঁদের তরুণ আত্মীয়দের ভালোবাসার গল্পই কেন্দ্রবিন্দু।
রাজাক বলেন, “এটি সিক্যুয়েল নয়, বরং একটি স্পিন-অফ, যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়।” নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছেন নানা আসরি, শাতিরা আমান্ডা, লেলা তেতে, ফাইজ ও ইউলেট ইউচা। অভিজ্ঞ অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছেন রোজিতা চে ওয়ান, শিলা মাম্বো, সাইফুল আপেক ও সাবরি ইউনুস।
মামি ইউনিভার্স ও পেনাং সংস্কৃতির উদযাপন
রাজাকের সিনেমাগুলোর একটি অনন্য জগত রয়েছে—যাকে তিনি বলেন ‘মামি মুভি ইউনিভার্স’। এতে রয়েছে ‘আনাক মামি’, ‘মেনান্তু মামি’, ‘চুচু মামি’, ‘মামি জারুম’, ‘নানা তানজুং’—সবগুলোতেই পেনাং-এর ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের রসবোধ, সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাস ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, “৯০-এর দশকে আমি টিভি৩-এ কিছু টেলিফিল্ম তৈরি করি, সেখান থেকেই মামি সিনেমার ধারণা তৈরি হয়।”
এই নতুন চলচ্চিত্রে রাজাক দর্শকদের পেনাং-এর বাইরে কেলান্তানে নিয়ে যাচ্ছেন, যাতে দর্শকরা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মিল ও বৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারেন।
ভালোবাসা, পরিবার ও পরিচয়ের গল্প
রাজাকের ভাষায়, “‘আনাক মামি জারুম দালকা চিন্তা কেরাবু’ মূলত পরিবার, পরিচয় ও পরিবর্তনের গল্প।”
তিনি বলেন, “চলচ্চিত্রে পেনাং ও কেলান্তানের দুই সংস্কৃতি সংগীতের মাধ্যমে এক হয়েছে—পেনাং-এর ‘বোরিয়া’ এবং কেলান্তানের ‘দিকির বারাত’।”
এতে দেখানো হয়েছে কিভাবে দুই ভিন্ন সমাজ, ভাষা ও ঐতিহ্যের মানুষ ভালোবাসার মাধ্যমে একে অপরের কাছাকাছি আসে।

প্রযুক্তি ও নতুন যুগের ছোঁয়া
এই চলচ্চিত্রে একটি নতুন উপাদান যুক্ত হয়েছে—সোশ্যাল মিডিয়া। রাজাক বলেন, “আজ সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করে, তাই আমাদের চরিত্রগুলোও ক্রমাগত অনলাইনে সংযুক্ত থাকবে।”
তিনি আরও জানান, “পুরোনো মামি চরিত্রগুলোর পরিবর্তে এবার গসিপপ্রিয় দুই খালা চরিত্রে অভিনয় করছেন রোজিতা ও শিলা, যাঁরা তাঁদের ভাতিজার প্রেমে সহায়ক হয়ে ওঠেন।”
পরিচালক রাজাক: শিক্ষা থেকে পূর্ণকালীন নির্মাতা
ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ার (UKM) স্নাতক রাজাক ১৯৯১ সালে UiTM-এ গণযোগাযোগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্র, নাটক ও অ্যানিমেশন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯৭ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হ্যালাম ইউনিভার্সিটি থেকে চলচ্চিত্র পরিচালনায় মাস্টার্স এবং ২০১৪ সালে Universiti Utara Malaysia থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
আজ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৫০টি চলচ্চিত্র। ২০১২ সালে মালয়েশিয়া বুক অব রেকর্ডসে তিনি স্থান পান ‘একজন শিক্ষাবিদের সর্বাধিক পরিচালিত চলচ্চিত্র’-এর জন্য।
নতুন সিনেমা, নতুন পরিকল্পনা
রাজাক বর্তমানে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘৮ বিট স্টুডিও’ পরিচালনা করছেন। ‘দুয়ং ২’ ও ‘আনাক মামি জারুম দালকা চিন্তা কেরাবু’ এই স্টুডিওর প্রথম দুটি প্রযোজনা। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ঈদুল ফিতরের পর তিনি নতুন একটি থ্রিলার ‘পুকাউ’ নির্মাণ করবেন।
রাজাক বলেন, “আমার সিনেমা আমার সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষের রঙিন বৈচিত্র্যকে ভালোবাসার এক উপহার।”

গল্পের মূলধারা
চলচ্চিত্রে দেখা যাবে পেনাং-এর বোরিয়া দলের নেতা জায়েদ (নানা আসরি) এবং কেলান্তানের দিকির বারাত দলের নেত্রী আইশাহ (শাতিরা আমান্ডা)-এর প্রেম ও প্রতিযোগিতা। এই দুই শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গীত ও সংস্কৃতির টানাপোড়েনের মাঝেই জন্ম নেবে আন্তঃসংস্কৃতিক ভালোবাসার গল্প।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















