০১:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
জেমস ফক্সের ‘ক্রাফ্টল্যান্ড’—ব্রিটেনের হারিয়ে যাওয়া হস্তশিল্পের জীবন্ত ইতিহাস বিলুপ্তির তালিকায় নতুন নাম—একটি পাখি, একটি শুঁয়োপোকা ও একটি শ্রু প্রজাতি হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৬) কানাডায় অনিরাপদ বোধ করছেন ভারতীয়রা, উদ্বেগ জানালেন নয়াদিল্লির হাইকমিশনার নির্বাচন বানচালে হঠাৎ আক্রমণও হতে পারে জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি—ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি সহযোগিতা ঘিরে ট্রাম্প–লি বৈঠক; বৃহস্পতিবার চীনা প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ রেকর্ড বৃষ্টিপাতে ভিয়েতনামে ভয়াবহ বন্যা—নয়জনের মৃত্যু, নিখোঁজ পাঁচজন নেপাল ও তিব্বতে প্রচণ্ড তুষারঝড়ের কবলে হাজারো ট্রেকার; হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, পর্যটন বন্ধ ঘোষণা

জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ

দুই দশক পর ন্যায়বিচার

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দুই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যকে হত্যার প্রায় ২০ বছর পর অবশেষে আদালত চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ফরিদপুর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শফিউদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে, অন্যথায় ছয় মাসের অতিরিক্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।


পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে রায়

আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকায় আদালত অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করেন এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—আনোয়ার হোসেন (৫৩), কামরুল হাসান ওরফে কামরুজ্জামান (৪৫), মনিরুজ্জামান ওরফে মনির (৪০) এবং আবদুস সামাদ (৬০)। এরা সবাই বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।


হত্যাকাণ্ডের পটভূমি

আদালত সূত্রে জানা যায়, নিহত দুইজন হলেন তপন রায় (৩০) ও নিকলাল মাঝি (৩৫)। তারা বোয়ালমারী উপজেলার চর ধোপাপাড়া গ্রামের বিপুল কুমার বকচির বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন।

২০০৫ সালের ২৮ জুলাই গভীর রাতে (রাত আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে) অজ্ঞাত হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে তারা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


জেএমবির তৎপরতার সময়ের হামলা

ঘটনাটি ঘটে এমন এক সময়ে, যখন সারা দেশে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) তাদের কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাচ্ছিল। এ ঘটনার সঙ্গে সেই প্রেক্ষাপট যুক্ত রয়েছে বলে তৎকালীন তদন্তকারীরা ধারণা করেছিলেন।

নিহতদের বাড়ির মালিক বিপুল কুমার বকচি ওই দিনই বোয়ালমারী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।


দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর রায়

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সুলতান মাহমুদ ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ চারজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অবশেষে ২০২৫ সালে প্রায় দুই দশক পর রায় ঘোষণা হয়, যা স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায় ও মানবাধিকারকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে।


রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া

ফরিদপুর বিশেষ জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আজিজুর রহমান বলেন, “যদিও দীর্ঘ সময় লেগেছে, তবুও আমরা এই দ্বৈত হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার পেয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ রায়ে সন্তুষ্ট।”


উপসংহার

দুই খ্রিস্টান নাগরিক হত্যার এ রায় বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকল—যেখানে সময়ের বাধা পেরিয়ে অবশেষে ন্যায় প্রতিষ্ঠা পেল ভুক্তভোগীরা। এখন আদালতের নির্দেশে পলাতক চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।


#ফরিদপুর #খ্রিস্টানহত্যা #জেএমবি #যাবজ্জীবন #বাংলাদেশবিচারব্যবস্থা

জনপ্রিয় সংবাদ

জেমস ফক্সের ‘ক্রাফ্টল্যান্ড’—ব্রিটেনের হারিয়ে যাওয়া হস্তশিল্পের জীবন্ত ইতিহাস

জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ

০৯:৩৬:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

দুই দশক পর ন্যায়বিচার

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দুই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যকে হত্যার প্রায় ২০ বছর পর অবশেষে আদালত চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ফরিদপুর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শফিউদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে, অন্যথায় ছয় মাসের অতিরিক্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।


পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে রায়

আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকায় আদালত অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করেন এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—আনোয়ার হোসেন (৫৩), কামরুল হাসান ওরফে কামরুজ্জামান (৪৫), মনিরুজ্জামান ওরফে মনির (৪০) এবং আবদুস সামাদ (৬০)। এরা সবাই বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।


হত্যাকাণ্ডের পটভূমি

আদালত সূত্রে জানা যায়, নিহত দুইজন হলেন তপন রায় (৩০) ও নিকলাল মাঝি (৩৫)। তারা বোয়ালমারী উপজেলার চর ধোপাপাড়া গ্রামের বিপুল কুমার বকচির বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন।

২০০৫ সালের ২৮ জুলাই গভীর রাতে (রাত আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে) অজ্ঞাত হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে তারা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


জেএমবির তৎপরতার সময়ের হামলা

ঘটনাটি ঘটে এমন এক সময়ে, যখন সারা দেশে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) তাদের কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাচ্ছিল। এ ঘটনার সঙ্গে সেই প্রেক্ষাপট যুক্ত রয়েছে বলে তৎকালীন তদন্তকারীরা ধারণা করেছিলেন।

নিহতদের বাড়ির মালিক বিপুল কুমার বকচি ওই দিনই বোয়ালমারী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।


দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর রায়

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সুলতান মাহমুদ ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ চারজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অবশেষে ২০২৫ সালে প্রায় দুই দশক পর রায় ঘোষণা হয়, যা স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায় ও মানবাধিকারকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে।


রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া

ফরিদপুর বিশেষ জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আজিজুর রহমান বলেন, “যদিও দীর্ঘ সময় লেগেছে, তবুও আমরা এই দ্বৈত হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার পেয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ রায়ে সন্তুষ্ট।”


উপসংহার

দুই খ্রিস্টান নাগরিক হত্যার এ রায় বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকল—যেখানে সময়ের বাধা পেরিয়ে অবশেষে ন্যায় প্রতিষ্ঠা পেল ভুক্তভোগীরা। এখন আদালতের নির্দেশে পলাতক চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।


#ফরিদপুর #খ্রিস্টানহত্যা #জেএমবি #যাবজ্জীবন #বাংলাদেশবিচারব্যবস্থা