রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ুদূষণ এখন ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় হাইকোর্ট আগের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনা তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে এবং অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়ারও আদেশ দিয়েছে।
বায়ুদূষণের ভয়াবহতা ও হাইকোর্টের পদক্ষেপ
দ্রুত নগরায়ণ, যানজট, শিল্পায়ন এবং নানা দূষণকারী উপাদানের অতিরিক্ত ব্যবহারে দেশের বায়ুর মান ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট আগের দেওয়া নয় দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের শুনানি ও আদেশ
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি উর্মি রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আবেদনকারীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি জানান, বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)’ সংগঠনের পক্ষে আইনজীবী সরওয়ার আহাদ চৌধুরী সম্পূরক আবেদনটি দায়ের করেন।
পূর্বের অগ্রগতি ও বর্তমান গাফিলতি
মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের পূর্ব নির্দেশনায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পর গত বছর ঢাকার বায়ুর মান কিছুটা উন্নত হয়েছিল। কিন্তু নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে গাফিলতির কারণে এখন আবারও দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে। বায়ুর ক্ষতিকর উপাদান মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসসহ বিভিন্ন অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
গবেষণায় উদ্বেগজনক তথ্য
সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকার বায়ুদূষণ নাগরিক জীবনের জন্য গভীর ঝুঁকির বার্তা বহন করছে। আদালত এ অবস্থায় নাগরিকদের জীবন রক্ষার্থে নয় দফা নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন এবং সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে বলেন।
২০১৯ সালের রুল ও ২০২০ সালের নয় দফা নির্দেশনা
২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটের পর হাইকোর্ট রুল জারি করে। এরপর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি আদালত নয় দফা নির্দেশনা দেন, যার মধ্যে রয়েছে:
১. ঢাকা শহরে মাটি, বালি ও বর্জ্য পরিবহনকারী ট্রাক বা গাড়ি ঢেকে রাখা।
২. নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি, বালি, সিমেন্ট, পাথর ইত্যাদি ঢেকে রাখা।
৩. সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত রাস্তায় পানি ছিটানো।
৪. রাস্তা, কালভার্ট, কার্পেটিং ও খোঁড়াখুঁড়ির কাজে টেন্ডার শর্ত মানা নিশ্চিত করা।
৫. কালো ধোঁয়া নির্গতকারী যানবাহন জব্দ করা।
৬. মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির চলাচল বন্ধ করা।
৭. অবৈধ ইটভাঁটা বন্ধ করা।
৮. পরিবেশ লাইসেন্সবিহীন টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা।
৯. দোকান ও মার্কেটের বর্জ্য ব্যাগে সংরক্ষণ ও নিয়মিত অপসারণে সিটি করপোরেশনের তদারকি নিশ্চিত করা।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
হাইকোর্ট মনে করে, এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকার বায়ুদূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে এবং নাগরিকরা সুস্থ, বসবাসযোগ্য পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারবেন।
#বায়ুদূষণ #হাইকোর্ট #পরিবেশ #জনস্বাস্থ্য #ঢাকা #নির্দেশনা #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















