নেদারল্যান্ডসের কর্তৃপক্ষ নেক্সপেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর চীন যে এক বছরের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তার কিছু অর্ডারে ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে বেইজিং। উদ্দেশ্য—বৈশ্বিক চিপ সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল রাখা। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও সাময়িকভাবে তাদের ‘৫০ শতাংশ সাবসিডিয়ারি রুল’ স্থগিত রাখবে বলে জানানো হয়েছে, যা নেক্সপেরিয়ার চিপ সরবরাহ পুনরায় শুরু করার পথ খুলে দিতে পারে।
উদ্যোগের সারসংক্ষেপ
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণকারী নেক্সপেরিয়ার কিছু অর্ডারে রপ্তানি ছাড় দেওয়া হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যে, এই ছাড় বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে নেক্সপেরিয়ার চিপের জোগান স্থিতিশীল করতেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে।
শি–ট্রাম্প বৈঠকের প্রতিফলন
বুসান, দক্ষিণ কোরিয়ায় বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর দ্বিপক্ষীয় বোঝাপড়ার কয়েকটি ইঙ্গিত মিলেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আলোচনার প্রেক্ষিতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির আওতায় নেক্সপেরিয়া আবার চিপ পাঠানো শুরু করতে পারে।

মার্কিন ‘৫০% সাবসিডিয়ারি রুল’ সাময়িক স্থগিত
সেপ্টেম্বরে ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের এই নিয়ম অনুযায়ী—ওয়াশিংটনের কালো তালিকাভুক্ত সংস্থার অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানায় থাকা যে কোনো কোম্পানির ওপর রপ্তানি বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হতো। নেক্সপেরিয়ার মালিক চীনা উইংটেক টেকনোলজি গত বছরের ডিসেম্বরেই কালো তালিকায় যোগ হয়। বৈঠকের পর চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওয়াশিংটন সাময়িকভাবে এই নিয়মের প্রয়োগ স্থগিত রাখবে।
নেদারল্যান্ডসের হস্তক্ষেপ ও চীনের পাল্টা পদক্ষেপ
৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তিতে নেদারল্যান্ডস নেক্সপেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়। জবাবে চীন ৪ অক্টোবর নেক্সপেরিয়া চায়না ও তাদের সাব–কন্ট্রাক্টরদের দেশে উৎপাদিত সমাপ্ত উপাদান রপ্তানিতে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বেইজিং এক বিবৃতিতে দ্য হেগের সিদ্ধান্তকে কোম্পানির বিষয়ে ‘অনুপযুক্ত হস্তক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে বলে, এতে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
নেক্সপেরিয়ার উৎপাদনভিত্তি ও সম্ভাব্য প্রভাব
নেক্সপেরিয়ার মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ চীনের গুয়াংদং প্রদেশের দোংগুয়ান কারখানায় সমাবেশ হয়। নিষেধাজ্ঞার পর সেখানে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে জানা যায়। জাপান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (জেএএমএ) জানায়, নেক্সপেরিয়া জাপানি গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের সরবরাহ নিশ্চিত করতে না–পারার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। ভক্সওয়াগেনও সতর্ক করেছে—নেক্সপেরিয়ার সরবরাহে বিঘ্ন হলে তাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গাড়ি নির্মাতাদের ওপর চাপ: যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে হোন্ডা
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিক্কেই এশিয়ার পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেক্সপেরিয়া–সংশ্লিষ্ট চিপ সংকটের জেরে হোন্ডার যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর কারখানাগুলোতে উৎপাদন সাময়িকভাবে থেমে গেছে। বিষয়টি ইঙ্গিত করে, অটোমোটিভ থেকে শুরু করে শিল্প, মোবাইল ও কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স—বিভিন্ন খাতে নেক্সপেরিয়ার সরবরাহ ব্যাহত হলে প্রভাব বিস্তৃত হতে পারে।
সময়ের ক্রমরেখা সংক্ষেপে
• ৩০ সেপ্টেম্বর: নেদারল্যান্ডস নেক্সপেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
• ৪ অক্টোবর: চীন নেক্সপেরিয়া চায়না ও সাব–কন্ট্রাক্টরদের ওপর এক বছরের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
• বুসান বৈঠকের পর: যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫০% সাবসিডিয়ারি রুল’ সাময়িক স্থগিতের ইঙ্গিত; ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির আওতায় নেক্সপেরিয়ার সরবরাহ পুনরারম্ভের সম্ভাবনা।
• সর্বশেষ: চীন নির্দিষ্ট অর্ডারে ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, যাতে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল থাকে।

পরিস্থিতির সারমর্ম
চীন–নেদারল্যান্ডস–যুক্তরাষ্ট্রের তিনপাক্ষিক চাপান–উতোরের মধ্যে নেক্সপেরিয়াকে ঘিরে বৈশ্বিক চিপ সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে বেইজিংয়ের সম্ভাব্য ছাড় ও ওয়াশিংটনের নিয়ম স্থগিত রাখা—উভয় পদক্ষেপই সরবরাহ সচল করার পথে ইতিবাচক সঙ্কেত দিচ্ছে। এখন নজর থাকবে—কোন অর্ডারগুলো ছাড়ের আওতায় আসবে, আর বাস্তবে কত দ্রুত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















