ভারতের আদানি গ্রুপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডেটা সেন্টার নির্মাণে আগ্রাসীভাবে এগোতে চায়। এই ডেটা সেন্টার চালাতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোষ্ঠীর তরুণ উত্তরসূরি জিত আদানি।
ডেটা সেন্টারের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে
নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জিত আদানি বলেন, ডেটা সেন্টার এখন বিশাল খাত হয়ে উঠেছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ কাজ করার পরিকল্পনা ছিল, তার অনেকটাই আগেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যেই নতুন করে চাহিদা বাড়ছে। তাঁর মতে, কম খরচ ও জ্বালানি নীতিমালার পরিবর্তনের কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডেটা সেন্টার স্থাপনে ভারতের স্বাভাবিক সুবিধা রয়েছে।
পারমাণবিক জ্বালানিতে বড় বিনিয়োগের ইঙ্গিত
ডিজিটাল ও বিমানবন্দর খাতের দায়িত্বে থাকা জিত আদানি জানান, ভারতের পারমাণবিক জ্বালানি খাতে আদানি গ্রুপ বড় বিনিয়োগকারীদের একজন হতে চায়। সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া নতুন আইনের ফলে এই খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে আদানি পরিবারের নতুন প্রজন্ম
জিত আদানি, তাঁর ভাই করণ আদানি এবং দুই চাচাতো ভাই প্রণব ও সাগর—এই চারজনকে ভবিষ্যতে আদানি সাম্রাজ্যের নেতৃত্বে আসার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাঁদের বাবা গৌতম আদানি বর্তমানে ৬৩ বছর বয়সী।
বিমানবন্দর খাতে বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা
মুম্বাইয়ের নতুন নির্মিত বিমানবন্দর চালু হওয়ার প্রাক্কালে জিত আদানি জানান, আগামী পাঁচ বছরে বিমানবন্দর খাতে প্রায় এক লাখ কোটি রুপি বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। এই অর্থ নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ ও বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় হবে।

গুগলের ডেটা সেন্টারে সহযোগিতা
আদানি গ্রুপ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টার প্রকল্পে অবকাঠামো তৈরিতে সর্বোচ্চ ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে পারে। গুগল নিজেও আগামী পাঁচ বছরে ভারতে প্রায় দেড় ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
এক গিগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার ডেটা সেন্টার
জিত আদানির ভাষ্য অনুযায়ী, ভিজাগ, নবি মুম্বাই, নয়ডা ও হায়দরাবাদের মতো শহরে এক গিগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার ডেটা সেন্টার গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে। তবে আদানি গ্রুপ শুধু অবকাঠামো ও সহায়ক সুবিধা দেবে, নিজে ক্লাউড বা প্রসেসিং ইউনিটে বিনিয়োগ করবে না।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ওপর জোর
বিদ্যুৎ সরবরাহে আদানি গ্রুপ তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে প্রস্তুত। আদানি গ্রিন এনার্জি ইতিমধ্যেই দেশের সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। জিত আদানির দাবি, বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ সবুজ বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
ডেটা সেন্টারের চাহিদার সঙ্গে পারমাণবিক পরিকল্পনা
জিত আদানি জানান, ডেটা সেন্টারের বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়লে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারও বাস্তবসম্মত বিকল্প হয়ে উঠবে। দীর্ঘদিন ধরে এই খাতকে এড়িয়ে চলা হয়েছে, কিন্তু এখন সক্রিয়ভাবে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা আদানি গ্রুপের হাতে থাকলেও রিঅ্যাক্টর সরবরাহ বাইরের সংস্থার মাধ্যমে করা হবে।
নতুন আইন ও ভারতের লক্ষ্য
সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত নতুন আইনের লক্ষ্য ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮ গিগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ১০০ গিগাওয়াটে নেওয়া। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুতের মাত্র ৩ শতাংশ আসে পারমাণবিক উৎস থেকে।

ডেটা সেন্টার নিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়ছে
আদানি গ্রুপের পাশাপাশি রিলায়েন্স ও টাটা গোষ্ঠীর মতো বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অংশীদার হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টার গড়তে এগোচ্ছে। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে ১ দশমিক ৪ গিগাওয়াট ডেটা সেন্টার চালু রয়েছে, আরও ১ দশমিক ৪ গিগাওয়াট নির্মাণাধীন এবং প্রায় ৫ গিগাওয়াট পরিকল্পনার পর্যায়ে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ
জিত আদানির মতে, সঠিক কৌশল নিলে আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বজুড়ে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভারতে অন্তত ১০ গিগাওয়াট ডেটা সেন্টার স্থাপনে আগ্রহী করা সম্ভব। শুধু ডেটা সেন্টার থেকেই প্রায় ৫০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে বলে তাঁর ধারণা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















