ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে চীনা প্রযুক্তি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে এবার সবচেয়ে কঠোর আইনি কাঠামো কার্যকর হলো। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষর করেছেন নতুন ক্ষমতা দেওয়া এক আইনে, যার মাধ্যমে চীনের নজরদারি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে পারে এমন প্রযুক্তি কোম্পানিতে মার্কিন অর্থপ্রবাহ নজরদারি ও প্রয়োজনে বন্ধ করা যাবে। এই উদ্যোগকে চীনঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতিতে বড় মোড় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
নতুন আইনের মূল উদ্দেশ্য
বার্ষিক জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনের অংশ হিসেবে যুক্ত এই বিধান চীনের পাশাপাশি কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোকেও নজরে রেখেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি তৈরি করে, অর্থাৎ বাণিজ্যিক হলেও যা সামরিক বা নজরদারিতে কাজে লাগতে পারে, তাদের ওপর এই আইন প্রযোজ্য হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ও উন্নত সেমিকন্ডাক্টরের মতো খাতকে বিশেষভাবে সংবেদনশীল হিসেবে ধরা হয়েছে।
আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগ ও রাজনৈতিক ঐকমত্য
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্ন যে মার্কিন অর্থ ও দক্ষতা চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করছে। কংগ্রেসে বড় ব্যবধানে পাস হওয়া এই আইন সেই উদ্বেগেরই প্রতিফলন। হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, কমিউনিস্ট চীনের আগ্রাসন শক্তিশালী করে এমন বিনিয়োগ বন্ধ করতেই হবে। সিনেটর জন করনিনের ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের প্রতিটি ডলার ভবিষ্যতে মার্কিন নাগরিকদের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

নতুন ক্ষমতা কীভাবে কার্যকর হবে
আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট প্রয়োজনে জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট চীনা প্রতিষ্ঠানে মার্কিন নাগরিকদের বড় অঙ্কের শেয়ার বা ঋণ বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করতে পারবেন। শুধু নিষেধাজ্ঞাই নয়, যেসব লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ করা হবে না, সেগুলোর ক্ষেত্রেও সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে জানাতে হবে। এতে হংকং ও ম্যাকাওভিত্তিক, রাষ্ট্রায়ত্ত বা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও নজরদারির আওতায় আসবে।
বিনিয়োগের পুরোনো ধারা ও নতুন বাস্তবতা
গত দুই দশকে মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, পেনশন ফান্ড ও বিভিন্ন তহবিল চীনের প্রযুক্তি খাতে বিপুল অর্থ ঢেলেছে। একসময় এটিকে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা হিসেবে দেখা হলেও সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টে অংশীদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নতুন আইন সেই প্রবণতা ঠেকাতেই তৈরি।
চীনের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের এক প্রতিনিধি বলেছেন, এই আইন জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাকে অতিরঞ্জিত করছে এবং স্বাভাবিক বিনিয়োগ প্রবাহ বিকৃত করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে মত হলো, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকাই এখন অগ্রাধিকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি বিনিয়োগ চীনে নেমে এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে, আর নতুন আইন সেই ধারা আরও জোরদার করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
#চীনযুক্তরাষ্ট্র #প্রযুক্তিনীতিরবদল #জাতীয়নিরাপত্তা #কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা #সেমিকন্ডাক্টর #মার্কিনবিনিয়োগ #ভূরাজনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















