দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন দীর্ঘ চার বছর। সেই অপেক্ষার শেষে ক্ষমতায় ফিরেই আগুনের গতিতে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই একের পর এক প্রশাসনিক পদক্ষেপে স্পষ্ট হয়ে যায়, এবারের মেয়াদে তিনি সময় নষ্ট করতে রাজি নন।
শুরুতেই ঝড়ের গতি
প্রথম দিনেই জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনা, বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত, শরণার্থী গ্রহণ বন্ধ এবং ক্যাপিটল হামলা মামলায় অভিযুক্তদের ক্ষমা—সব মিলিয়ে হোয়াইট হাউস যেন হঠাৎ করেই অচেনা ছন্দে হাঁটতে শুরু করে। সাবেক উপদেষ্টা জোসেফ গ্রোগানের ভাষায়, শুরুটা ছিল রেসের ঘোড়ার মতো, চোখে পড়ার মতো দ্রুত।
প্রশাসনে বড়সড় রদবদল
মাত্র এক মাসের মধ্যেই একাধিক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত আসে। সরকারি তদারকি সংস্থার প্রধানদের বরখাস্ত, আদালতের ভেতর অভিবাসন আটক, গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্ককে খোঁচা, প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ এবং গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য—সব মিলিয়ে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরেই অস্থিরতা তৈরি হয়। দুই মাস না পেরোতেই ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে পাঠানো এবং রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত ঘোষণা আন্তর্জাতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা
অভিবাসন প্রশ্নে ট্রাম্পের অবস্থান ছিল একেবারেই কঠোর। সীমান্তে আশ্রয়ের আবেদন সহজ করা আগের কর্মসূচি বন্ধ হয়, অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা বাতিল হয় লক্ষাধিক মানুষের। সীমান্ত রক্ষী ও অভিবাসন বাহিনীকে নামানো হয় শহর ও জনপদে। এর জেরে অনেক অভিবাসী পরিবার দৈনন্দিন জীবনে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। তবে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ প্রবেশ কমে যাওয়ায় সমর্থকদের কাছে এই নীতিই ট্রাম্পের বড় সাফল্য।

শুল্ক আর পররাষ্ট্রনীতির দোলাচল
শুল্ক নীতিতে ট্রাম্পের ওঠানামা বিশ্ববাজারকে দোলায় ফেলে। একের পর এক দেশকে লক্ষ্য করে উচ্চ শুল্ক ঘোষণা, আবার হঠাৎই তা স্থগিত বা প্রত্যাহার—এই অনিশ্চয়তায় ব্যবসায়ীরা পড়েন বিপাকে। তবু ট্রাম্পের দাবি, এই শুল্ক তাকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাড়তি শক্তি দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনা কমানো থেকে শুরু করে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে চাপ—সবখানেই শুল্ক ছিল তার হাতিয়ার।
সমালোচনা আর জনমতের চ্যালেঞ্জ
সমালোচনাও কম নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে সক্রিয় করার অভিযোগ, পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন—সব মিলিয়ে দুর্নীতির ছায়া বারবার উঠে এসেছে। জনমত জরিপে বছরের শুরুতে জনপ্রিয়তা তুলনামূলক বেশি থাকলেও গ্রীষ্মের পর তা কমতে থাকে। বড় শহরগুলোতে রাজ বিরোধী বিক্ষোভ এবং আংশিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভরাডুবি দেখিয়ে দেয়, জনসমর্থন ধরে রাখা সহজ হবে না।
সামনে কঠিন পথ
মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন অর্থনীতি আর জীবনযাত্রার ব্যয়। এই দুই ইস্যুতে ট্রাম্প কিভাবে অবস্থান নেন, তার ওপরই নির্ভর করবে দ্বিতীয় বছরের রাজনীতি। ইতিহাসে এই মেয়াদ কতটা স্থায়ী ছাপ রাখবে, তা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছেই
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















