যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা যখন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর দিকে ঘোরানো হচ্ছে, ঠিক তখনই ভেনেজুয়েলা ঘিরে বাড়ছে আরেক সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কা। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটন নিকোলাস মাদুরো সরকারকে দ্রুত সরাতে সীমিত সামরিক অভিযানের পথ খোলা রাখছে। তবে এই পদক্ষেপ যতটা দ্রুত সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, ততটাই দীর্ঘ অস্থিরতার ঝুঁকি সামনে নিয়ে আসে।
মাদুরোর অবস্থান কতটা দুর্বল
নির্বাচনী কারচুপি ও আন্তঃদেশীয় মাদক পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে মাদুরোর অবস্থান বহুদিন ধরেই চাপে। যুক্তরাষ্ট্র ও একাধিক ইউরোপীয় দেশ সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল মানতে অস্বীকার করেছে। বিরোধী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে কূটনৈতিক সমর্থনও দেখানো হয়েছে। তবু অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, শুধু আন্তর্জাতিক চাপেই কারাকাসে ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটেনি।
ওয়াশিংটনের শক্তি প্রদর্শন
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন নৌ ও বিমান শক্তির উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যুদ্ধজাহাজ, ঘাঁটি সক্রিয়করণ এবং মাদকবিরোধী অভিযানের ঘোষণা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র চাপ বাড়াতে প্রস্তুত। ওয়াশিংটনের বক্তব্যে মাদক পাচার রোধের কথা বলা হলেও, ভেনেজুয়েলা সরকার এটিকে সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি হিসেবে দেখছে।
ভেনেজুয়েলার সামরিক বাস্তবতা
বিশ্লেষকদের ধারণা, সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে ভেনেজুয়েলার নিয়মিত বাহিনী দীর্ঘ সময় টিকতে পারবে না। তবে বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। দেশটির নিরাপত্তা কাঠামো বহু বছর ধরে অসম যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সীমিত সংখ্যক সশস্ত্র গোষ্ঠী ও বড় ধরনের নাশকতা চালাতে সক্ষম, বিশেষ করে অর্থনীতি ও অবকাঠামো যখন আগে থেকেই ভঙ্গুর।

গেরিলা ও আঞ্চলিক ঝুঁকি
সবচেয়ে বড় শঙ্কা তৈরি করছে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সীমান্তবর্তী মিলিশিয়াদের ভূমিকা। কলম্বিয়ার গেরিলা সংগঠন সহ নানা সশস্ত্র শক্তি ভেনেজুয়েলার ভেতরে সক্রিয়। মাদুরো পতনের পর এরা যদি সংঘাতে জড়ায়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। এতে শুধু ভেনেজুয়েলা নয়, পুরো লাতিন আমেরিকায় শরণার্থী সংকট ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দীর্ঘ অস্থিরতার আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, দ্রুত সামরিক সাফল্য এলেও তার পরের দিনটি হবে সবচেয়ে কঠিন। নতুন সরকার গঠনের প্রশ্ন, নিরাপত্তা বাহিনীর আনুগত্য এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর দমন সব মিলিয়ে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অতীতের ইরাক কিংবা ইউক্রেন অভিজ্ঞতা দেখায়, পরিকল্পিত স্বল্পমেয়াদি অভিযান অনেক সময় দীর্ঘ সংঘাতে রূপ নেয়।
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক দ্বিধা
লাতিন আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো সামরিক হস্তক্ষেপে অনীহা প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা, বাইরের আক্রমণ জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করবে। ফলে ভেনেজুয়েলা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলে ঐক্যের অভাব স্পষ্ট।
#ভেনেজুয়েলা #মাদুরো #যুক্তরাষ্ট্র #ভূরাজনীতি #ক্যারিবিয়ান #লাতিনআমেরিকা #আন্তর্জাতিকসংঘাত
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















