ব্রিটেনে ঘরের মাটিতে সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা আবারও সামনে এসেছে। ইউরোপজুড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং অবকাঠামোতে নাশকতার আশঙ্কা দেশটির নীতিনির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। সরকার বলছে, সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক সংস্থাকে এক ছাতার নিচে এনে সমাজভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়া হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞ ও সংসদীয় নেতাদের মতে, প্রস্তুতির গতি এখনও অত্যন্ত ধীর ।
শীতল যুদ্ধের পর অবহেলা, আবার প্রস্তুতির ডাক
উনিশশো বিরানব্বই সালে শীতল যুদ্ধের অবসানের পর ব্রিটেন ঘরের প্রতিরক্ষায় নিবেদিত শেষ সামরিক কাঠামো ভেঙে দেয়। সেই সময় শান্তির যুগের ধারণায় সামরিক ব্যয় কমানো হয়। তিন দশক পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। ন্যাটোর শীর্ষ নেতৃত্ব সতর্ক করেছে যে সংঘাত দরজায় কড়া নাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার পুরো সমাজকে যুক্ত করে প্রতিরোধ গড়ার কথা বলছে।
কী ধরনের হুমকি সামনে

স্থল আক্রমণকে তাৎক্ষণিক আশঙ্কা বলা না হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবকাঠামোতে নাশকতা, সাইবার আক্রমণ, ড্রোন হামলা এবং সমুদ্রতলের কেবল কেটে দেওয়ার মতো হাইব্রিড হুমকি বাস্তব। ইউক্রেন যুদ্ধ দেখিয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্র কেবল সীমান্তে সীমাবদ্ধ থাকে না।
সংসদীয় কমিটির উদ্বেগ
সংসদের প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান তানমান জিৎ সিং ধেসি বলেছেন, সশস্ত্র হামলা প্রতিরোধের পাশাপাশি বিস্তৃত হুমকি মোকাবিলায় দেশ প্রস্তুত নয়। তাঁর ভাষায়, ঘরের প্রতিরক্ষা কর্মসূচি বরফের গতিতে এগোচ্ছে।
উত্তর ইউরোপের সঙ্গে তুলনা
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষকরা মনে করছেন, ফিনল্যান্ড সহ বাল্টিক ও নর্ডিক দেশগুলোর তুলনায় ব্রিটেন অনেক পিছিয়ে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক সেবা ও বেসামরিক প্রশিক্ষণের সংস্কৃতি রয়েছে। ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ সক্ষমতা ও ঘাঁটি বিক্রির কারণে দ্রুত বাহিনী গঠন কঠিন হতে পারে।

ব্যয় বৃদ্ধি, তবে বাস্তবায়নে দেরি
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার চলতি বছর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে অর্থনীতির মোট আয়ের দুই দশমিক পাঁচ শতাংশে নেওয়ার ঘোষণা দেন। কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনায় যুদ্ধের প্রস্তুতিতে যাওয়ার কথা বলা হয় এবং নতুন ঘরোয়া প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের সুপারিশ আসে। তবে এই বাহিনী কেমন হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে এখনও সময় লাগবে।
পুলিশ ও বেসামরিক ভূমিকা
নিয়মিত সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রতিরক্ষায় পুলিশের ভূমিকা বাড়ছে। রাসায়নিক হামলার অনুকরণে মহড়া হয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ঘরোয়া প্রতিরক্ষার জন্য আলাদা দায়িত্ব তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা, ড্রোন হামলা কিংবা নতুন যুদ্ধ শুরু হলে পুলিশ কীভাবে সহায়তা দেবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে, যদিও এই সমন্বয় এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে।

ইতিহাসের ছায়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বেচ্ছাসেবী হোম গার্ড কিংবা পরমাণু হুমকির যুগের সিভিল ডিফেন্স কর্পস ব্রিটেনকে একসময় প্রস্তুত করেছিল। শীতল যুদ্ধের পর সেগুলো বিলুপ্ত হয়। এখন আবার সেই অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন কাঠামো ভাবা হচ্ছে।
সরকারের অবস্থান
সরকার জানিয়েছে, সামরিক ও বেসামরিক প্রচেষ্টার সমন্বয়, জাতীয় স্থিতিশীলতা বাড়ানো এবং আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা জোরদারে এক বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি বিনিয়োগ করা হবে। সংসদে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বিল আনার কথাও বলা হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















