দক্ষিণ ক্যারোলিনার ক্যাম্প সোয়াম্প রোডে এক সড়ক উত্তেজনার ঘটনার পর মাত্র চব্বিশ সেকেন্ডে উনত্রিশ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল। সেই গুলিতেই প্রাণ হারান তেত্রিশ বছরের স্কট স্পাইভি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ওয়েলডন বয়েড একটাই দাবি করে আসছেন, তিনি আত্মরক্ষায় গুলি চালিয়েছিলেন। কিন্তু দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন সব তথ্য, যা এই আত্মরক্ষার গল্প ও তদন্ত প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে ।
আত্মরক্ষার দাবি ও শুরু থেকেই সুবিধা
ঘটনার মুহূর্তেই বয়েড জরুরি নম্বরে ফোন করে বলেন, স্পাইভিই আগে গুলি চালিয়েছিল। একই কথা তিনি প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের কাছে বলেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, আগেই সড়কে ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং স্পাইভি গাড়ি থেকে অস্ত্র বের করেছিলেন। এই বক্তব্যকে প্রাথমিকভাবে সত্য ধরে নেয় পুলিশ। দক্ষিণ ক্যারোলিনার আত্মরক্ষা আইনের আওতায় বয়েডকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।

পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ
তদন্তে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছানোর পরও বয়েডকে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যক্ষদর্শীদের আলাদা রাখার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। এমনকি বয়েডকে তার মোবাইল ফোনও সঙ্গে রাখতে দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে তিনি আইনজীবী ও পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসব বিষয় তদন্তের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
ক্যামেরা বন্ধ, প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার কিছু সময় পরই পুলিশ সদস্যদের দেহ-ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো দৃশ্যমান রেকর্ড রাখা হয়নি। নিহত স্পাইভির মরদেহও অস্বাভাবিকভাবে তার গাড়িসহ সরিয়ে নেওয়া হয়, যা প্রমাণ সংরক্ষণে মারাত্মক ক্ষতি করেছে বলে সাবেক করোনাররা মন্তব্য করেছেন।
নতুন করে তদন্ত ও আইনি লড়াই
ঘটনার সাত মাস পর একবার এই হত্যাকাণ্ডকে আইনসম্মত আত্মরক্ষা বলা হলেও, গণমাধ্যমের অনুসন্ধানের পর বিশেষ কৌঁসুলি ও গ্র্যান্ড জুরি নতুন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে নিহতের পরিবার দেওয়ানি মামলা করেছে। সেখানে আদালত নির্ধারণ করবে, আদৌ এটি আত্মরক্ষার ঘটনা ছিল কি না।
প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বদলের ইঙ্গিত
সবচেয়ে কাছের প্রত্যক্ষদর্শী ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকমারো জানান, তিনি নিশ্চিত নন কে আগে গুলি চালিয়েছিল। তার বক্তব্য অনুযায়ী, স্পাইভির হাতে থাকা অস্ত্র তখন নিচের দিকে ছিল এবং তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। কিন্তু বয়েড গাড়ির ভেতর থেকেই বন্দুক তাক করে ছিলেন। এই বয়ান পুরো ঘটনার ব্যাখ্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
পুলিশের ঘনিষ্ঠতা ও প্রভাব
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বয়েড স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। বিনামূল্যে খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত যোগাযোগ, সবকিছুই তদন্তে বিশেষ সুবিধা এনে দিয়েছে বলে অভিযোগ। এই কারণেই শুরু থেকেই আত্মরক্ষার দাবি প্রশ্নহীনভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই মামলাটি এখন শুধু একটি সড়ক উত্তেজনার হত্যাকাণ্ড নয়, বরং পুলিশি তদন্তের স্বচ্ছতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বৃহত্তর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















