২০২৫ সালে এশিয়া জুড়ে একের পর এক চরম আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জীবন, অবকাঠামো ও অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ফেলেছে। শক্তিশালী ভূমিকম্প, বিরল ঘূর্ণিঝড়, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ হয়েছে আরও অনেকে। এই প্রতিবেদনে বছরের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দুর্যোগ ও তার পেছনের বাস্তবতা তুলে ধরা হলো।
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে বিধ্বংসী ভূমিকম্প
২০২৫ সালের ২৯ মার্চ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে আঘাত হানে সাত দশমিক সাত মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। এই ভূমিকম্পে প্রাণহানি ছাড়িয়ে যায় ষোলোশোর বেশি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের মান্দালয়ে উদ্ধারকর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আটকে পড়া মানুষদের বের করার চেষ্টা করেন। ভেঙে পড়া সড়ক ও সেতু, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং যোগাযোগব্যবস্থার বিপর্যয় পুরো অঞ্চলে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। বহু মানুষ একে প্রলয়ের সঙ্গে তুলনা করেন।
ইন্দোনেশিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও বন উজাড়ের ভয়াবহ মূল্য
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে আঘাত হানা এক বিরল ঘূর্ণিঝড় দেশটিতে বন উজাড়ের বিপজ্জনক পরিণতি নতুন করে সামনে এনেছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে সাতশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনার পর পরিবেশবিদ ও নাগরিক সমাজ বন উজাড় বন্ধ করা এবং বনভূমি ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারির দাবি জোরালো করেন। তাদের মতে, নির্বিচারে বন ধ্বংস প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আরও প্রাণঘাতী করে তুলছে।
ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়ের শেষ না হওয়া চক্র
মাত্র পাঁচ সপ্তাহের ব্যবধানে ছয়টি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছে ফিলিপাইন। নভেম্বর মাসে কালমাইগি ঘূর্ণিঝড়ের পর সেবু প্রদেশের লিলোয়ানে কাদায় ঢাকা রাস্তায় মানুষের দুর্ভোগ এই সংকটের প্রতীক হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্নীতি, প্রশাসনিক গাফিলতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মিলিয়ে দেশটির প্রাকৃতিক ঝুঁকিগুলো মানবসৃষ্ট ট্র্যাজেডিতে রূপ নিচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব এই দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
২০২৫ সালের এই ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে, এশিয়ায় চরম আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু প্রকৃতির সমস্যা নয়, এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে মানবসৃষ্ট সিদ্ধান্ত, পরিবেশ ধ্বংস ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা। সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে এই ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















