১০:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
চীনের প্রযুক্তি উত্থান, অর্থনীতির ভেতরে গভীর ফাটল বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্নি নিরাপত্তা জোরদার, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবিগঞ্জের মাধবপুরে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ নতুন ড্রোন মডেলে নিষেধাজ্ঞা আরও কড়াকড়ি যুক্তরাষ্ট্রে, তালিকায় ডিজেআইসহ সব বিদেশি ড্রোন জবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন: নারী-বান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে জেসিডির ১৩ দফা ইশতেহার ক্রীড়াপ্রেমী প্রকৌশলী মাসুদ হাসান জামালীর ইন্তেকাল বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে রাজনীতির ঊর্ধ্বে বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা: ড. সালেহউদ্দিন হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, প্রাণ গেল পাঁচজনের রমজান সামনে রেখে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন সরকারের শুরুর উত্থান ধরে রাখতে পারল না ডিএসই, চট্টগ্রাম বাজারে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত

বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে রাজনীতির ঊর্ধ্বে বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা: ড. সালেহউদ্দিন

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ব্যবস্থাপনায় রাজনীতি ও বাণিজ্যকে আলাদা রাখার নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক স্বার্থ, প্রতিযোগিতামূলক দাম এবং জনগণের সুবিধাকেই বাণিজ্য সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে রাজনীতির প্রভাব নেই
মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতি রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালিত হয় না। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যদি ভারতের বাজারে তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়, তবে সেখান থেকেই আমদানি করা অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত। ভিয়েতনাম বা অন্য কোনো দেশ থেকে আনলে কেজিপ্রতি প্রায় দশ টাকা বেশি খরচ হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

নিত্যপণ্যের দাম ও ভোক্তার স্বার্থ অগ্রাধিকার
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা যেমনই থাকুক না কেন, প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য পাওয়া গেলে বাংলাদেশ সেখান থেকেই আমদানি করবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থই সরকারের প্রধান বিবেচ্য। রাজনৈতিক কারণে কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বাণিজ্যনীতি গ্রহণ করা হয়নি বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।

পেঁয়াজ আমদানিতে জটিলতা ও সমাধান
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে কিছু বিলম্বের বিষয়টি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় বাজারে উৎপাদন বেশি থাকলেও কৃষকেরা কম দামে পণ্য বিক্রি করতে না পারার খবর ছিল। এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে ভোক্তাদের স্বার্থে আমদানির বিষয়টি এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক বক্তব্য আর বাস্তব সম্পর্ক এক নয়
বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় ড. সালেহউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক ব্যস্ততার সময় কখনো কখনো কিছু বক্তব্য কঠোর মনে হতে পারে। তবে এসব বক্তব্য প্রকৃত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতিফলন নয়। কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেক সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল বিষয়ে গঠিত, যা সব সময় প্রকাশ্যে ধরা পড়ে না।

সম্পর্ক অবনতি নিয়ে উদ্বেগ নাকচ
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্কে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। সম্পর্ক খারাপ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দুই দেশই নিয়মিত যোগাযোগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে।

বাইরের উসকানি নিয়ে সতর্কতা
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, কোনো বাহ্যিক শক্তি যদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে চায়, তা কোনো দেশের স্বার্থে নয়। অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কোনো তিক্ততা চায় না। উভয় দেশই জাতীয় অনুভূতি ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখার বিষয়ে সচেতন।

কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয়ভাবে কূটনৈতিক যোগাযোগ রাখছেন। তিনি নিজেও ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি ভুল বোঝাবুঝি দূর করে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।

আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান
আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায়। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। পাশাপাশি ভুটান ও নেপালের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গেও ধীরে ধীরে সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন থেকে এগোতে পারে না। আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক যোগাযোগই দেশের উন্নয়নের পথনির্দেশক, যা সাময়িক রাজনৈতিক বক্তব্যের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের প্রযুক্তি উত্থান, অর্থনীতির ভেতরে গভীর ফাটল

বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে রাজনীতির ঊর্ধ্বে বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা: ড. সালেহউদ্দিন

০৮:০৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ব্যবস্থাপনায় রাজনীতি ও বাণিজ্যকে আলাদা রাখার নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক স্বার্থ, প্রতিযোগিতামূলক দাম এবং জনগণের সুবিধাকেই বাণিজ্য সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে রাজনীতির প্রভাব নেই
মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতি রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালিত হয় না। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যদি ভারতের বাজারে তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়, তবে সেখান থেকেই আমদানি করা অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত। ভিয়েতনাম বা অন্য কোনো দেশ থেকে আনলে কেজিপ্রতি প্রায় দশ টাকা বেশি খরচ হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

নিত্যপণ্যের দাম ও ভোক্তার স্বার্থ অগ্রাধিকার
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা যেমনই থাকুক না কেন, প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য পাওয়া গেলে বাংলাদেশ সেখান থেকেই আমদানি করবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থই সরকারের প্রধান বিবেচ্য। রাজনৈতিক কারণে কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বাণিজ্যনীতি গ্রহণ করা হয়নি বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।

পেঁয়াজ আমদানিতে জটিলতা ও সমাধান
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে কিছু বিলম্বের বিষয়টি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় বাজারে উৎপাদন বেশি থাকলেও কৃষকেরা কম দামে পণ্য বিক্রি করতে না পারার খবর ছিল। এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে ভোক্তাদের স্বার্থে আমদানির বিষয়টি এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক বক্তব্য আর বাস্তব সম্পর্ক এক নয়
বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় ড. সালেহউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক ব্যস্ততার সময় কখনো কখনো কিছু বক্তব্য কঠোর মনে হতে পারে। তবে এসব বক্তব্য প্রকৃত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতিফলন নয়। কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেক সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল বিষয়ে গঠিত, যা সব সময় প্রকাশ্যে ধরা পড়ে না।

সম্পর্ক অবনতি নিয়ে উদ্বেগ নাকচ
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্কে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। সম্পর্ক খারাপ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দুই দেশই নিয়মিত যোগাযোগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে।

বাইরের উসকানি নিয়ে সতর্কতা
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, কোনো বাহ্যিক শক্তি যদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে চায়, তা কোনো দেশের স্বার্থে নয়। অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কোনো তিক্ততা চায় না। উভয় দেশই জাতীয় অনুভূতি ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখার বিষয়ে সচেতন।

কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয়ভাবে কূটনৈতিক যোগাযোগ রাখছেন। তিনি নিজেও ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি ভুল বোঝাবুঝি দূর করে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।

আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান
আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায়। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। পাশাপাশি ভুটান ও নেপালের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গেও ধীরে ধীরে সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন থেকে এগোতে পারে না। আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক যোগাযোগই দেশের উন্নয়নের পথনির্দেশক, যা সাময়িক রাজনৈতিক বক্তব্যের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।