যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ড্রোন মডেল আমদানি ও বিক্রির ক্ষেত্রে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন। সোমবার এক ঘোষণায় এফসিসি জানায়, চীনের ডিজেআই, অটেলসহ সব বিদেশে তৈরি ড্রোন ও এর গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে এসব প্রতিষ্ঠানের নতুন কোনো ড্রোন মডেল বা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি বা আমদানির জন্য এফসিসির অনুমোদন পাবে না।
এফসিসির ‘কভার্ড লিস্ট’-এ যুক্ত হওয়ার প্রভাব
এফসিসির কভার্ড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ হলো, ডিজেআই, অটেলসহ অন্যান্য বিদেশি ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নতুন কোনো ড্রোন মডেলের অনুমোদন নিতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রে ড্রোন বিক্রি বা আমদানির ক্ষেত্রে এফসিসির অনুমোদন বাধ্যতামূলক হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত কার্যত নতুন ড্রোন বাজারে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিল।
চীনা ড্রোনের বিরুদ্ধে অবস্থান আরও কঠোর
এই সিদ্ধান্তকে চীনা ড্রোনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের অবস্থানের বড় ধরনের কঠোরতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর চীনা ড্রোন আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। নতুন সিদ্ধান্ত সেই প্রক্রিয়াকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিল।
পুরোনো ড্রোন ব্যবহারে কোনো বাধা নেই
এফসিসি স্পষ্ট করেছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে আগে অনুমোদিত কোনো ড্রোন মডেলের আমদানি, বিক্রি বা ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে না। যেসব ড্রোন গ্রাহকরা আগে বৈধভাবে কিনেছেন, সেগুলো ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারবেন। ইতিমধ্যে কেনা ড্রোনের ওপর এই বিধিনিষেধের কোনো প্রভাব পড়বে না।
ডিজেআইয়ের প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিজেআই এফসিসির সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, যদিও আলাদাভাবে তাদের লক্ষ্য করা হয়নি, তবে কোন তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাহী শাখা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত জানানো হয়নি। ডিজেআই আগেই বলেছিল, কভার্ড লিস্টে যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের নতুন ড্রোন মডেল আনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ড্রোন বাজারের অর্ধেকের বেশি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ডিজেআই।

হোয়াইট হাউসের পর্যালোচনা ও নিরাপত্তা শঙ্কা
এফসিসি জানায়, রোববার হোয়াইট হাউসের উদ্যোগে নির্বাহী শাখার বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে করা এক পর্যালোচনার ফলাফল তারা পেয়েছে। ওই পর্যালোচনায় বলা হয়, বিদেশি ড্রোন ও যন্ত্রাংশ অননুমোদিত নজরদারি, সংবেদনশীল তথ্য পাচার, সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য নানা হুমকি তৈরি করতে পারে। তবে ভবিষ্যতে পেন্টাগন চাইলে নির্দিষ্ট কোনো ড্রোন বা ড্রোন শ্রেণিকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করে এই বিধিনিষেধের বাইরে রাখতে পারবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের ওপর জোর
চলতি বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা ড্রোন কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতা কমাতে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবিরোধী শাখার জ্যেষ্ঠ পরিচালক সেবাস্টিয়ান গোরকা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তায় ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং সেগুলো অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্বেগ
ডিজেআই জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার আটশোর বেশি অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জরুরি সেবা সংস্থার মধ্যে আশির বেশি শতাংশ ড্রোন কার্যক্রমে ডিজেআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তাদের মতে, সাশ্রয়ী ও কার্যকর ড্রোন প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার হারালে এসব সংস্থার কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
রাজনৈতিক সমর্থন ও আইনি লড়াই
আসন্ন অলিম্পিক ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ড্রোনের অপব্যবহার নিয়েও উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প প্রশাসন ও এফসিসি। রিপাবলিকান প্রতিনিধি রিক ক্রফোর্ড এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেন, চীনা ড্রোনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় ব্যাপক প্রবেশ বহু বছর ধরে পাল্টা গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে এবং সস্তা পণ্যের বিনিময়ে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলা যায় না।
এর মধ্যেই চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিকভিশন ওয়াশিংটনের আপিল আদালতে এফসিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অন্যদিকে, সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক বেইজিংয়ের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে প্রতিরক্ষা দপ্তরের তালিকা থেকে নিজেদের নাম সরানোর জন্য ডিজেআইয়ের আবেদনও খারিজ করে দেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















