যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের পাহাড়ঘেরা ছোট শহর লিভেনওর্থ। প্রতি ডিসেম্বরে এই শহর রূপ নেয় এক স্বপ্নিল ক্রিসমাস গ্রামে। ঝলমলে আলো, পর্যটকের ভিড়, উৎসবের কোলাহলেই চলে এখানকার জীবন ও জীবিকা। কিন্তু চলতি বছর সেই পরিচিত দৃশ্য ভেঙে পড়েছে। টানা ভয়াবহ ঝড় আর বৃষ্টিতে ক্রিসমাস মৌসুমেই কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শহরের অর্থনীতি।
ক্রিসমাস যাদের ভরসা
ক্যাসকেড পাহাড়ের কোলে, সিয়াটল থেকে প্রায় একশ বিশ মাইল দূরে অবস্থিত লিভেনওর্থকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিসমাস রাজধানী বলে ডাকেন। ডিসেম্বর এলেই শহরের কেন্দ্রে জ্বলে ওঠে লক্ষাধিক আলো। রেইনডিয়ার খামার, বাদাম ভাঙ্গা পুতুলের জাদুঘর, বাভারিয়ান ধাঁচের দোকান আর রেস্তোরাঁয় উপচে পড়ে পর্যটক। বছরে প্রায় ত্রিশ লাখের বেশি মানুষের আগমনে টিকে থাকে এই শহর।
ঝড়ে ভেঙে গেল স্বপ্নের মৌসুম
চলতি ডিসেম্বরে সেই স্বপ্ন ভেঙে দেয় প্রকৃতি। প্রথমে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া, এরপর টানা ভারী বৃষ্টি। মাত্র দশ দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়। পাহাড়ের বরফ গলে নদীর পানি ফুলে ওঠে। ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি, নদীতীরের পার্ক তলিয়ে যায়। গাছ ভেঙে পড়ে বাড়ি ও খামারের ওপর।
ফাঁকা শহর, বন্ধ রাস্তা
ক্রিসমাসের ঠিক আগের সপ্তাহে শহরের কেন্দ্র ছিল অস্বাভাবিকভাবে নীরব। যেখানে হাঁটারও জায়গা থাকত না, সেখানে খালি রাস্তা আর ফাঁকা পার্কিং। প্রধান সড়কের একটি অংশ ধসে যাওয়ায় সিয়াটল দিক থেকে আসার সবচেয়ে সহজ পথ বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, পাহাড়ি এই পথ মাসের পর মাস বন্ধ থাকতে পারে। এতে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।

অন্ধকারে ‘আলোর গ্রাম’
সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায়। টানা তিন দিন পুরো শহর অন্ধকারে ছিল। পরিচিত ‘আলোর গ্রাম’ নামটা যেন তখন বিদ্রুপ হয়ে ওঠে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাটে মোমবাতির আলোয় দিন কাটাতে হয়। অনেক ব্যবসায়ী বাধ্য হয়ে নষ্ট করে ফেলেন বিপুল পরিমাণ খাবার। কেউ কেউ কর্মীদের মধ্যে বা আশপাশের মানুষদের মধ্যে তা বিলিয়ে দেন।
ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হিসাব
রেইনডিয়ার খামারে শতফুট উঁচু গাছ ভেঙে পড়ে। ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে হাজার হাজার ডলার খরচ হয়। টানা তিন দিনের জন্য খামার বন্ধ থাকায় ফিরিয়ে দিতে হয়েছে বিপুল অগ্রিম টিকিটের টাকা। শহরের ক্রিসমাস পণ্যের দোকান গুলোতে বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। যে রেস্তোরাঁগুলোতে উৎসবের দিনে কত জন কর্মী দরকার হতো, সেখানে এখন একজন শিফট সামলাচ্ছেন। অনেক কর্মীর আয় নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে।

আবার ফিরবে কি উৎসব
তবু ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতার আভাস মিলছে। খামার ও কিছু পর্যটন কেন্দ্র আবার খুলেছে। একদিনেই শত শত মানুষ রেইনডিয়ার খামারের টিকিট বুক করেছেন। কয়েকটি হোটেলে ক্রিসমাসের আগের সপ্তাহান্তে সব কক্ষ ভরে গেছে। কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিনা মূল্যে থাকার ব্যবস্থাও করছেন।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, যে ডিসেম্বর একসময় ছিল শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়, সেই মাস কি আবার লিভেনওর্থের অর্থনীতির প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















