০৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তপ্ত বিক্ষোভ, ব্যারিকেড ভেঙে ঢোকার চেষ্টা আইসিসিআরের দিগন্ত সিরিজে সংগীতের সন্ধ্যা কলকাতায় বাংলাদেশের সঙ্গে শুল্ক কমাতে বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করল জাপান চব্বিশ সেকেন্ডে উনত্রিশ গুলি, আত্মরক্ষার দাবি ঘিরে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে মার্কোস জুনিয়র ২০২৫ সালে কোনোমতে টিকে ছিলেন। ২০২৬ সালে কি তিনি পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজে পাবেন? ছুটির মৌসুমে ছাঁটাইয়ের শঙ্কা বাড়ছে, প্রস্তুত থাকাই এখন সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা রেনোয়ারের রেখার উৎসব: মর্গান লাইব্রেরিতে কাগজে ধরা এক শতকের শিল্পযাত্রা রক্তে আঁকা বিপ্লবের প্রতিচ্ছবি: মারাত হত্যাকাণ্ডে শিল্প, রাজনীতি ও মিথের পুনর্জন্ম কিশোর উদ্যোক্তার এআই বিপ্লব: স্কুলের বেঞ্চ থেকেই গড়ে উঠছে নতুন স্টার্টআপ জগৎ ভোক্তা নিত্যপণ্যে বিনিয়োগের আশ্রয়, তবে এখন চাই বাছাইয়ের বুদ্ধি

চিপের স্বনির্ভরতার স্বপ্নে আমেরিকার লাল ফিতার বাধা

মরুভূমির বুকে বিশাল এক শিল্পযজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরের উপকণ্ঠে গড়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্প। তাইওয়ানের শীর্ষ চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি এখানে গড়ে তুলছে একের পর এক কারখানা। লক্ষ্য একটাই—চিপ উৎপাদনে আমেরিকাকে আরও স্বনির্ভর করা। কিন্তু এই উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ এখন আটকে যাচ্ছে আমেরিকার জটিল আমলাতন্ত্র, স্থানীয় আপত্তি আর দক্ষ জনবলের সংকটে।

আমেরিকার মরুভূমিতে চিপ বিপ্লব

ফিনিক্সের উত্তরে প্রায় বারোশ একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই কারখানা কমপ্লেক্স ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রে। প্রায় একশ পঁয়ষট্টি বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প প্রকল্পগুলোর একটি। এখানকার চিপ ব্যবহৃত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ডেটা সেন্টার থেকে শুরু করে আধুনিক শিল্প ব্যবস্থায়। মার্কিন রাজনৈতিক নেতৃত্ব একে দেখছেন ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি আর মহামারির মতো সংকট মোকাবিলার নিরাপত্তা বলয় হিসেবে। তবে বাস্তবতা বলছে, এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমেরিকার অভিজ্ঞতার ঘাটতি স্পষ্ট।

Inside TSMC's Phoenix, Arizona expansion struggles - Rest of World

 

বিদেশি দক্ষতা ছাড়া অসম্ভব উদ্যোগ

টিএসএমসি আমেরিকান প্রতিষ্ঠান নয়। তবু এই প্রকল্পের মূল চালিকাশক্তি তারাই। তাদের সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার বহু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও ফিনিক্সে কারখানা গড়েছে। সব মিলিয়ে স্থানীয় অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চল্লিশ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। কারণ দুই হাজার তেরোর পর যুক্তরাষ্ট্রে বড় কোনো চিপ কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে দেশটির ভেতরে এই খাতে অভিজ্ঞতা প্রায় অনুপস্থিত।

লাল ফিতার জটিলতায় থমকে যাওয়া গতি

তাইওয়ানে যেখানে একটি কেন্দ্রীয় অনুমতিতেই কারখানা গড়া সম্ভব, সেখানে অ্যারিজোনায় টিএসএমসিকে শহর, কাউন্টি, রাজ্য ও ফেডারেল স্তরের হাজার হাজার অনুমোদনের মুখে পড়তে হয়েছে। কোথাও নিয়ম নেই, আবার কোথাও অতিরিক্ত কাগজপত্রের চাপ। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নিজস্ব নিয়ম তৈরি করে অনুমোদন নিতে হয়েছে, যার পেছনে ব্যয় হয়েছে কোটি কোটি ডলার। টিএসএমসির শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই বলেছেন, একটি অনুমতি পেতে এখানে তাইওয়ানের তুলনায় দ্বিগুণ সময় লাগে।

Mr. Wei and Mr. Trump, in suits, shake hands at a podium with an American flag in the background.

স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি

কারখানা মানেই কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, স্থানীয়দের দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। ফিনিক্সের আশপাশের আবাসিক এলাকায় বাস করা অনেকেই আশঙ্কা করছেন বিষাক্ত রাসায়নিক পরিবহন আর পানির সংকট নিয়ে। এমনই এক ঘটনায় চিপ প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান অ্যামকরকে স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে, স্থানীয় আন্দোলনের মুখে। এই সংঘাত দেখাচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি আর স্থানীয় স্বার্থের দ্বন্দ্ব কতটা তীব্র হতে পারে।

দক্ষ শ্রমিক সংকট ও শ্রম বিরোধ

চিপ উৎপাদন এক ধরনের শিল্পকৌশল। অতি সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি চালাতে প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রে সেই দক্ষতা সীমিত। তাই টিএসএমসি শুরুতে তাইওয়ান থেকে শত শত অভিজ্ঞ কর্মী নিয়ে আসে। এতে স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের আপত্তি তৈরি হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় কর্মী নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শ্রম বিরোধ থামেনি। এমনকি কয়েকজন কর্মী বৈষম্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির অভিযোগে মামলা করেছেন, যা প্রকল্পের ভাবমূর্তিতে নতুন চাপ যোগ করেছে।

রাজনীতি, ভর্তুকি আর ভবিষ্যৎ

চিপ শিল্পকে ঘরে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিপুল ভর্তুকি ঘোষণা করেছে। চিপস ও বিজ্ঞান আইনের আওতায় টিএসএমসি পেয়েছে বিলিয়ন ডলারের সহায়তা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব একে আমেরিকান শিল্প পুনরুজ্জীবনের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে। তবে বাস্তবতা হলো, শুধু ভর্তুকি বা শুল্ক দিয়ে দক্ষতা, অবকাঠামো আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা যায় না। ফিনিক্সের অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে, স্বনির্ভরতার পথে যুক্তরাষ্ট্রকে এখনও অনেক দূর যেতে হবে।

TSMC tops out second fabrication facility at Phoenix campus - Phoenix  Business Journal

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তপ্ত বিক্ষোভ, ব্যারিকেড ভেঙে ঢোকার চেষ্টা

চিপের স্বনির্ভরতার স্বপ্নে আমেরিকার লাল ফিতার বাধা

০৩:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

মরুভূমির বুকে বিশাল এক শিল্পযজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরের উপকণ্ঠে গড়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্প। তাইওয়ানের শীর্ষ চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি এখানে গড়ে তুলছে একের পর এক কারখানা। লক্ষ্য একটাই—চিপ উৎপাদনে আমেরিকাকে আরও স্বনির্ভর করা। কিন্তু এই উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ এখন আটকে যাচ্ছে আমেরিকার জটিল আমলাতন্ত্র, স্থানীয় আপত্তি আর দক্ষ জনবলের সংকটে।

আমেরিকার মরুভূমিতে চিপ বিপ্লব

ফিনিক্সের উত্তরে প্রায় বারোশ একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই কারখানা কমপ্লেক্স ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রে। প্রায় একশ পঁয়ষট্টি বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প প্রকল্পগুলোর একটি। এখানকার চিপ ব্যবহৃত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ডেটা সেন্টার থেকে শুরু করে আধুনিক শিল্প ব্যবস্থায়। মার্কিন রাজনৈতিক নেতৃত্ব একে দেখছেন ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি আর মহামারির মতো সংকট মোকাবিলার নিরাপত্তা বলয় হিসেবে। তবে বাস্তবতা বলছে, এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমেরিকার অভিজ্ঞতার ঘাটতি স্পষ্ট।

Inside TSMC's Phoenix, Arizona expansion struggles - Rest of World

 

বিদেশি দক্ষতা ছাড়া অসম্ভব উদ্যোগ

টিএসএমসি আমেরিকান প্রতিষ্ঠান নয়। তবু এই প্রকল্পের মূল চালিকাশক্তি তারাই। তাদের সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার বহু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও ফিনিক্সে কারখানা গড়েছে। সব মিলিয়ে স্থানীয় অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চল্লিশ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। কারণ দুই হাজার তেরোর পর যুক্তরাষ্ট্রে বড় কোনো চিপ কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে দেশটির ভেতরে এই খাতে অভিজ্ঞতা প্রায় অনুপস্থিত।

লাল ফিতার জটিলতায় থমকে যাওয়া গতি

তাইওয়ানে যেখানে একটি কেন্দ্রীয় অনুমতিতেই কারখানা গড়া সম্ভব, সেখানে অ্যারিজোনায় টিএসএমসিকে শহর, কাউন্টি, রাজ্য ও ফেডারেল স্তরের হাজার হাজার অনুমোদনের মুখে পড়তে হয়েছে। কোথাও নিয়ম নেই, আবার কোথাও অতিরিক্ত কাগজপত্রের চাপ। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নিজস্ব নিয়ম তৈরি করে অনুমোদন নিতে হয়েছে, যার পেছনে ব্যয় হয়েছে কোটি কোটি ডলার। টিএসএমসির শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই বলেছেন, একটি অনুমতি পেতে এখানে তাইওয়ানের তুলনায় দ্বিগুণ সময় লাগে।

Mr. Wei and Mr. Trump, in suits, shake hands at a podium with an American flag in the background.

স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি

কারখানা মানেই কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, স্থানীয়দের দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। ফিনিক্সের আশপাশের আবাসিক এলাকায় বাস করা অনেকেই আশঙ্কা করছেন বিষাক্ত রাসায়নিক পরিবহন আর পানির সংকট নিয়ে। এমনই এক ঘটনায় চিপ প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান অ্যামকরকে স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে, স্থানীয় আন্দোলনের মুখে। এই সংঘাত দেখাচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি আর স্থানীয় স্বার্থের দ্বন্দ্ব কতটা তীব্র হতে পারে।

দক্ষ শ্রমিক সংকট ও শ্রম বিরোধ

চিপ উৎপাদন এক ধরনের শিল্পকৌশল। অতি সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি চালাতে প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রে সেই দক্ষতা সীমিত। তাই টিএসএমসি শুরুতে তাইওয়ান থেকে শত শত অভিজ্ঞ কর্মী নিয়ে আসে। এতে স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের আপত্তি তৈরি হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় কর্মী নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শ্রম বিরোধ থামেনি। এমনকি কয়েকজন কর্মী বৈষম্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির অভিযোগে মামলা করেছেন, যা প্রকল্পের ভাবমূর্তিতে নতুন চাপ যোগ করেছে।

রাজনীতি, ভর্তুকি আর ভবিষ্যৎ

চিপ শিল্পকে ঘরে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিপুল ভর্তুকি ঘোষণা করেছে। চিপস ও বিজ্ঞান আইনের আওতায় টিএসএমসি পেয়েছে বিলিয়ন ডলারের সহায়তা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব একে আমেরিকান শিল্প পুনরুজ্জীবনের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে। তবে বাস্তবতা হলো, শুধু ভর্তুকি বা শুল্ক দিয়ে দক্ষতা, অবকাঠামো আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা যায় না। ফিনিক্সের অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে, স্বনির্ভরতার পথে যুক্তরাষ্ট্রকে এখনও অনেক দূর যেতে হবে।

TSMC tops out second fabrication facility at Phoenix campus - Phoenix  Business Journal