মায়ামির উপকণ্ঠ ডোরাল শহরে ভেনিজুয়েলা থেকে আসা নির্বাসিতদের মধ্যে আবারও রাজনীতি নীরব কিন্তু গভীর আলোচনায় ফিরে এসেছে। শপিংমলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিমন বলিভারের ভাস্কর্য যেন এই শহরের দ্বন্দ্বের প্রতীক। এক সময় যাঁকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আদর্শের জনক হিসেবে ব্যবহার করেছে কারাকাসের শাসকগোষ্ঠী, ডোরালের নির্বাসিতরা এখন তাঁকেই নিজেদের ইতিহাসের অংশ হিসেবে নতুনভাবে দেখছে।
ডোরাল কেন আলাদা
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভেনেজুয়েলা বংশোদ্ভূত মানুষের বড় অংশ ফ্লোরিডায়। তার মধ্যেও ডোরাল শহর পরিচিত নির্বাসিতদের রাজধানী হিসেবে। এখানে রাজনীতি শুধু ভোটকেন্দ্র বা সভায় সীমাবদ্ধ নয়, ক্যাফে, দোকান আর পাড়ার আড্ডায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় এল আর পাসো ক্যাফেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তর্ক চলত ভেনেজুয়েলার ভবিষ্যৎ নিয়ে। এখন সেই টেবিলগুলো অনেকটাই চুপচাপ। কর্মীরা বলছেন, মানুষ কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। পরিবার ও স্বজনদের নিরাপত্তা, অভিবাসন কাগজপত্র হারানোর শঙ্কা এই নীরবতার বড় কারণ।
ট্রাম্প ও মাদুরো প্রসঙ্গ
এই নীরবতার ভেতরেও একটি বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে। অনেক নির্বাসিতের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পই নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর শেষ আশা। অস্থায়ী সুরক্ষা সুবিধা প্রত্যাহার কিংবা মানবিক অনুমতির কঠোরতা সত্ত্বেও তাঁদের ধারণা, মাদুরো অপসারণ হলে সব ক্ষোভ ভুলে যাওয়া যাবে। ডোরালের এক বাসিন্দা বলছেন, আমরা ভোট দিয়েছি, মিছিল করেছি, অনুরোধ করেছি, কিছুই বদলায়নি। এখন শক্ত অবস্থানই একমাত্র পথ।

বিভক্ত মনোভাব
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে সংশয় থাকলেও ডোরালের অভিজ্ঞতা আলাদা। এখানে অনেকেই মনে করেন, এই চাপ অনেক আগেই আসা উচিত ছিল। তবে সবাই এক মত নন। নতুন করে আসা অভিবাসীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি অনিশ্চিত। তাঁদের প্রশ্ন, আগেও বড় প্রতিশ্রুতি শোনা গেছে, শেষ পর্যন্ত কি আবার হতাশাই অপেক্ষা করছে।
নির্বাসিত সমাজের ভেতরের দূরত্ব
ডোরালের নির্বাসিত সমাজ একরকম নয়। পুরোনো প্রজন্ম যারা আগের শাসনামলে দেশ ছেড়েছে, তারা তুলনামূলক স্থিতিশীল জীবন গড়েছে। পরে আসা মানুষজন অর্থনৈতিক ধস থেকে পালিয়ে এসে অস্থায়ী সুরক্ষায় কাজ করছে। এই দুই ধারার মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট। তবুও মাদুরো সরকারের দমননীতি বাড়তে থাকায় অনেকের কাছে সামরিক চাপই শেষ বিকল্প বলে মনে হচ্ছে।
এই শহরে যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি অনেকের চোখে উসকানি নয়, বরং বহু প্রতীক্ষিত সম্ভাবনা। নির্বাসিতদের দীর্ঘ স্মৃতিতে বারবার ভাঙা প্রতিশ্রুতির ক্ষত আছে, তবুও বিশ্বাস রয়ে গেছে, হয়তো এবার ইতিহাস ভিন্ন হবে।
#ভেনেজুয়েলা #ডোরাল #নির্বাসিতজীবন #মাদুরো #ট্রাম্প #লাতিনরাজনীতি #যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাস
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















