চীনের পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের উদ্বেগ ও বাস্তব সংকট মোকাবিলায় শিশু যত্নসেবা নিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ের একটি খসড়া আইন সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এই আইন কার্যকর হলে তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের যত্ন, সুরক্ষা ও সেবার ক্ষেত্রে একটি শক্ত আইনি ভিত্তি তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আইনের প্রাথমিক পাঠ সংসদে
চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের চতুর্দশ মেয়াদের স্থায়ী কমিটির উনিশতম অধিবেশনে শিশু যত্নসেবা সংক্রান্ত এই খসড়া আইন প্রথম পাঠের জন্য উপস্থাপন করা হয়। আটটি অধ্যায় ও ছিয়াত্তরটি ধারায় গঠিত প্রস্তাবিত আইনে সাধারণ নীতিমালা, শিশু যত্নকেন্দ্র, সেবাদাতা কর্মী, সেবা প্রদান পদ্ধতি, সুরক্ষা ব্যবস্থা, তদারকি ও আইনি দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই আইন
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর শিশু যত্নসেবা নিয়ে এটি হবে প্রথম পূর্ণাঙ্গ জাতীয় আইন। এর মাধ্যমে শিশুদের জন্য নিরাপদ, মানসম্মত ও সাশ্রয়ী যত্নসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবারগুলোর আর্থিক ও মানসিক চাপ কমানো সম্ভব হবে। জনসংখ্যা ও উন্নয়ন গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষকেরা বলছেন, এটি জন্মহার সহায়ক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
বর্তমান চিত্র ও চ্যালেঞ্জ
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দুই হাজার তেইশ সালের শেষ নাগাদ সারা দেশে প্রায় সাতচল্লিশ লক্ষের বেশি শিশু যত্নসেবার আসন তৈরি হয়েছে। তবু বাস্তবতা হলো, তিন বছরের কম বয়সী শিশু থাকা পরিবারের বড় একটি অংশ এখনো প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, এমন পরিবারের অন্তত ত্রিশ শতাংশের বেশি ডে কেয়ার বা শিশু যত্নকেন্দ্রের সেবার প্রয়োজন অনুভব করে, অথচ ভর্তি হার আট শতাংশেরও কম। ব্যয় বেশি, কেন্দ্রের স্বল্পতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ বড় বাধা হয়ে আছে।

সরকারি ভূমিকা জোরদারের চেষ্টা
খসড়া আইনে বাজারনির্ভর ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারের দায়িত্ব ও ভূমিকা স্পষ্ট করার কথা বলা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিশু যত্নসেবার পরিসর বাড়ানো, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের আইনি সুরক্ষা দেওয়া এবং মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও জোরদার করার লক্ষ্য রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে আগে যেসব প্রদেশ ও শহর নিজস্ব নিয়ম করেছে, জাতীয় আইন সেগুলোর জন্যও একটি统一 কাঠামো তৈরি করবে।
জন্মহার সহায়ক বৃহত্তর উদ্যোগ
এই আইন প্রণয়ন চীনের বৃহত্তর জন্মহার সহায়ক পরিকল্পনার অংশ। ইতিমধ্যে একাধিক প্রদেশে ছোট শিশু থাকা পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। অর্থনৈতিক সহায়তা, সময়ভিত্তিক সুবিধা, সেবার সহজলভ্যতা ও সামাজিক সংস্কৃতি—এই চার স্তম্ভকে শক্ত করতেই নতুন আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকেরা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















