জামাইকা, হাইতি ও কিউবায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী ঝড় ‘হারিকেন মেলিসা’ অন্তত ৩৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এই দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রচণ্ড বেগে বয়ে যাওয়া এই ঝড়ে ঘরবাড়ি, সড়ক, বিমানবন্দর ও হাসপাতাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রেকর্ড শক্তিশালী ঝড়ে বিপর্যস্ত জামাইকা
২৮ অক্টোবর ক্যাটাগরি-৫ শক্তির ঝড় হিসেবে জামাইকায় আঘাত হানে মেলিসা। এটি দ্বীপটির ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং একাধিক হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেনজি জানান, এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে এবং আরও অনেকে সেখানে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “এটা জামাইকার জন্য সহজ পথ নয়; সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।”
ব্যাপক ক্ষতি ও অর্থনৈতিক প্রভাব
দুর্যোগ মডেলিং সংস্থা, এনকি রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, জামাইকায় ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৭.৭ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞ চাক ওয়াটসন বলেন, “এটি ১৯৮৮ সালের হারিকেন গিলবার্টের তুলনায়ও বেশি ধ্বংস ডেকে এনেছে। মেলিসা ছিল ধীরগতিসম্পন্ন ও বৃষ্টিসমৃদ্ধ ঝড়; যদি এটি দ্রুতগতির হতো, ক্ষয়ক্ষতি এতটা হতো না।”

অবকাঠামো ও পর্যটন খাতে বিপর্যয়
জামাইকার মন্টেগো বে অঞ্চলে বহু ভবনের ছাদ উড়ে গেছে এবং রাস্তা প্লাবিত হয়েছে। স্যাংস্টার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি টার্মিনাল আংশিকভাবে ডুবে গেছে। ফলে প্রায় ২৫ হাজার পর্যটক দ্বীপে আটকে পড়েছেন।
সরকার জানিয়েছে, বিমানবন্দরগুলো যত দ্রুত সম্ভব চালু করা হবে, যাতে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা যায়। এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনার উল্লেখ করে ম্যাকেনজি বলেন, “এই বিপর্যয়ের মধ্যেও একটি শিশুর জন্ম হয়েছে—আমরা তাকে ‘মেলিসা বেবি’ বলছি।”
হাইতি ও কিউবায় প্রাণহানি
হাইতির সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে অন্তত ২৫ জন নিহত ও ১৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় বন্যায় বহু ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। জামাইকায় মারা গেছেন অন্তত ৮ জন। তবে দেশটিতে অবস্থানরত সব আন্তর্জাতিক পর্যটক নিরাপদ আছেন বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
দুর্যোগ–পরবর্তী আন্তর্জাতিক সহায়তা
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, জামাইকা ও আশপাশের দেশগুলোতে ৮,২০০-এরও বেশি মার্কিন নাগরিক অবস্থান করছেন। দুর্যোগ–সহায়তা দলগুলোকে হাইতি, জামাইকা ও বাহামাসে পাঠানো হচ্ছে, যারা খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ডও ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নে বিশেষ দল পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। এদিকে, জামাইকার দুর্যোগ প্রস্তুতি দপ্তর ১ লাখ গদি, বালিশ, ও ৫ হাজার চেইনসো সরবরাহের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক উপগ্রহ–ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে সহায়তা দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের সহায়তা প্রতিশ্রুতি
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, জামাইকার সহায়তায় রয়্যাল নেভির একটি জাহাজ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, “জামাইকার ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্যগুলো সত্যিই ভয়াবহ।”
ক্ষতিগ্রস্তদের সামনে কঠিন পথ
ঝড়ের শক্তি কিছুটা কমলেও, ৩১ অক্টোবর উত্তর আটলান্টিকের শীতল জলে প্রবেশের আগে এটি এখনও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম ডাউটি বলেন, বাহামাসেও মেলিসা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
বীমা বিশেষজ্ঞ ফিরাস সালেহ বলেন, “জামাইকার অনেক বাড়ি ও ছোট ব্যবসার কোনো বীমা নেই, যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলবে।”
সবশেষে, জামাইকার রাজধানী কিংস্টন সরাসরি আঘাত না পাওয়ায় দেশটি আরও ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
#হারিকেন_মেলিসা,# জামাইকা,# হাইতি, #কিউবা, #ক্যারিবীয়_#দুর্যোগ, আবহাওয়া, #আন্তর্জাতিক_সহায়তা,# সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















