খাদ্য বাণিজ্যে নবযুগের সূচনা
বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পানীয় শিল্প এখন এক বিপ্লবী রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে— যেখানে উদ্ভাবন, স্থায়িত্ব ও ভোক্তার পছন্দের পরিবর্তন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এই প্রেক্ষাপটে গালফুড ২০২৫ ফিরে এসেছে তার ৩০তম বর্ষপূর্তিতে, যা আকারে ও প্রভাবে আগের সব সংস্করণকে ছাড়িয়ে গেছে।
দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (DWTC) ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই মহা প্রদর্শনী। এবারের থিম ‘দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ইন ফুড’— যা বিশ্ব খাদ্য বাণিজ্য ও ব্যবসার ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাঁচ দিনে আনুমানিক ২০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের প্রত্যাশা রয়েছে, যা বৈশ্বিক খাদ্য বাণিজ্যের প্রায় এক শতাংশের সমান।
সর্ববৃহৎ আয়োজন: বিশ্ব খাদ্য বাণিজ্যের এক বিশাল মঞ্চ
গালফুড ২০২৫ হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংস্করণ, যেখানে ১২৯টি দেশ থেকে ৫,৫০০-এর বেশি প্রদর্শক এবং এক মিলিয়নেরও বেশি পণ্য প্রদর্শিত হবে।
১.৩ মিলিয়ন বর্গফুট এলাকা জুড়ে ২৪টি হলে বিস্তৃত এই প্রদর্শনীতে থাকবে অত্যাধুনিক খাদ্য উপাদান, নতুন স্বাদ ও উদ্ভাবনী পণ্য উদ্বোধন।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে কসোভো, মাদাগাস্কার, মরিশাস ও জাম্বিয়া।

দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বৈশ্বিক খাদ্য কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ৩০ বছরের যাত্রা নিয়ে দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্বাহী সহ-সভাপতি ট্রিক্সি লোহমিরমান্ড বলেন, “গালফুড কেবল একটি প্রদর্শনী নয়, এটি এমন একটি মঞ্চ যেখানে খাদ্য শিল্পের ভবিষ্যৎ তৈরি হচ্ছে।”
বিশ্ব খাদ্য বাণিজ্যের মিলনমেলা
গালফুড ২০২৫ শুধু প্রদর্শনী নয়, এটি বিশ্ব খাদ্য শিল্পের নেতৃবৃন্দের জন্য এক অনন্য নেটওয়ার্কিং কেন্দ্র।
‘গালফুড ডিসকভারি ট্যুর’-এর মাধ্যমে দর্শকরা অংশ নিতে পারবেন নানা থিমভিত্তিক অভিজ্ঞতায়— যেমন ‘গুরমে’, ‘অল্টারনেটিভ প্রোটিন ও প্ল্যান্ট-বেসড’, ‘ডিজিটালাইজেশন অ্যান্ড ট্রেসেবিলিটি’ এবং ‘মেড ইন দ্য এমিরেটস’। এসব সেশনে শিল্প বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যৎ খাদ্য প্রবণতা, প্রযুক্তি ও উৎপাদনের নতুন রূপ নিয়ে আলোচনা করবেন।
‘ফুড৫০০ সামিট’: শিল্পনেতাদের অভিজ্ঞতা ও কৌশল
এবারের নতুন সংযোজন ‘ফুড৫০০ সামিট’ — যেখানে একত্র হবেন বৈশ্বিক খাদ্য ও পানীয় খাতের সিইও, নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকরা। আলোচনার মূল বিষয় হবে— আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক রূপান্তর, স্থায়িত্ব, স্বাস্থ্য ও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা।
অর্কলা ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক ব্যবসার সিইও অশ্বিন সুব্রামনিয়াম বলেন, “গালফুড শুধু উদ্ভাবনের কেন্দ্র নয়, এটি আমাদের মতো সংস্থাগুলোর জন্য নতুন বাজার, ভোক্তার প্রবণতা ও সহযোগিতার সুযোগ উন্মোচন করে।”
তিনি জানান, এ বছর তারা দক্ষিণ ভারতীয় প্রবাসীদের জন্য ‘ইস্টার্ন ফাইভ-মিনিট ব্রেকফাস্ট’ সিরিজ এবং ‘ইস্টার্ন আরবিক স্পাইস’ পোর্টফোলিও সম্প্রসারণ করছে।

রন্ধনশৈলী ও আতিথেয়তায় নতুন দিগন্ত
গালফুড ২০২৫ কেবল বাণিজ্য নয়, এটি খাদ্য সংস্কৃতি ও আতিথেয়তার উৎসবও। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও রন্ধনশিল্পের শীর্ষ নির্বাহীরা অংশ নিচ্ছেন নতুন ধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে।
বাহি আজমান প্যালেস হোটেল ও কোরাল বিচ রিসোর্ট শারজাহের এরিয়া জেনারেল ম্যানেজার ইফতিখার হামদানি বলেন, “গালফুড আমাদের আতিথেয়তা খাতের জন্য এক অমূল্য সুযোগ— যেখানে বিশ্ব রন্ধনশৈলীর বৈচিত্র্য ও মানসম্পন্ন সেবার প্রতিশ্রুতি একসঙ্গে মেলে।”
খাদ্যের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে গালফুড
উদ্ভাবন, স্থায়িত্ব ও বৈশ্বিক বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গালফুড ২০২৫ খাদ্য শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। পরিবর্তনশীল ভোক্তা প্রবণতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের ধারণাকে বাস্তবে পরিণত করছে এই প্রদর্শনী।
দুবাই এখন বৈশ্বিক খাদ্য বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে, আর গালফুড সেই রূপান্তরের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে— যেখানে বিশ্বের খাদ্য শিল্পের আগামী পথরেখা নির্ধারিত হচ্ছে।
#গালফুড২০২৫ #দুবাই #খাদ্যবাণিজ্য #স্থায়িত্ব #উদ্ভাবন #বিশ্বঅর্থনীতি #রন্ধনশৈলী #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















