“সেখানে কিছুই ছিল না। এক গভীর ঘন বন, শান্ত ও অপূর্ব এক হ্রদের ধারে।” ছুটি কাটানোর ঘর বানানোর মতো বাজেট হাতে এসেও অ্যান্ড্রু মিচেল ও রেবেকা শ’ সেই আদিম প্রকৃতির স্বাদ হারাতে চাননি—ক্যাম্পিংয়ের সরলতা, প্রকৃতির ভেতর সরাসরি বসবাসের অভিজ্ঞতা। “আমরা বড় হয়েছি অ্যালগনকুইন পার্ক আর কিলার্নি পার্কে (অন্টারিও, কানাডা) লম্বা গ্রীষ্ম কাটিয়ে, ক্যানু বেয়ে দূরবর্তী ক্যাম্পসাইটে তাঁবু গেঁড়ে,” বলেন ৪০ বছর বয়সী সফটওয়্যার প্রকৌশলী মিচেল।
টরন্টোতে মূল বাড়ির উত্তরে জনপ্রিয় ছুটির অঞ্চল মাসকোকায় তাঁরা নানা কটেজ ঘুরে দেখেছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ হ্রদই ভিড়ে ঠাসা—বাড়িগুলো গাদাগাদি, মোটরবোটের কোলাহল। “আমরা এমন কিছু চাইছিলাম, যেন মনে হয় কোনো প্রাদেশিক উদ্যানের মাঝখানে ক্যানু ট্রিপে আছি—কেউকে দেখা যায় না, শোনা যায় না,” বলেন মিচেল। কয়েক বছর খোঁজার পর পছন্দের জমি মিলল—মাসকোকা অঞ্চলে ১৮০ একর (৭০ হেক্টর) দূরবর্তী, বনাচ্ছাদিত ভূমি; একটি ছোট হ্রদের মধ্যে পাথুরে উপদ্বীপ প্রসারিত।
“সেখানে কিছুই ছিল না,” মিচেল আবারও বলেন। “শান্ত, অপূর্ব এক হ্রদের ধারে ঘন, গভীর বন। স্নেহভরে আমরা একে বলি ‘মিডল অব দ্য বুশ’।”
২০১৮ সালে তাঁরা জমিটি কেনেন ১ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারে (বর্তমান মূল্যমান ধরলে প্রায় ৭১৫,০০০ মার্কিন ডলার)। তবে সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণে ঝাঁপাননি। প্রথম দু’বছর তাঁরা জায়গাটি ব্যবহার করেছেন ক্যাম্পিংয়ের জন্য—প্রবেশসড়ক তাঁদের ভূমিখণ্ডের কিনারায় এসে থেমে যাওয়ায় ক্যানু বেয়ে ভেতরে ঢুকতেন। “আমরা আগুন জ্বালানোর জায়গা করেছি, তাঁবুর স্থান বানিয়েছি—সবই,” বলেন মিচেল।

২০২০ সালে উপদ্বীপেই একটি কটেজ বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। নকশার দায়িত্ব দেওয়া হয় টরন্টোভিত্তিক ডুবেলডাম আর্কিটেকচার + ডিজাইনের স্থপতি হিদার ডুবেলডামকে।
জোড়া চাওয়া ছিল—আত্মীয়-বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে থাকার মতো যথেষ্ট বিস্তৃতি, আবার জায়গাটির কাঁচা সৌন্দর্য যতটা সম্ভব অক্ষুণ্ন রাখা; কোনো প্রদর্শনীবিলাস নয়।
গাছ কাটাকে ন্যূনতমে নামিয়ে আনা এবং হ্রদের ধারে ঘরের দৃশ্যমান উপস্থিতি কম রাখার লক্ষ্য নিয়ে ডুবেলডাম নকশা করলেন নিচু, সমতল ছাদওয়ালা দুইতলা, ৩,৫৮০ বর্গফুট (৩৩৩ বর্গমিটার) এক স্থাপনা—যেন ঘরটি প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকে। উপরের তলায় বসবাসের মূল পরিসর, নিচতলায় অধিকাংশ শয়নকক্ষ। “এটা এক ধরনের উল্টো বিন্যাস—লিভিং রুমটা যেন গাছের মগডালে ভেসে আছে,” বলেন ডুবেলডাম।
তিনি দুই তলার স্তরকে খানিকটা সরিয়ে দিয়েছেন, যাতে তৈরি হয় দুটি বহিরাঙ্গন—ভূতলায় বারান্দায় দোলনাসহ আশ্রয়ধর্মী বসার জায়গা, আর ওপরতলায় বড় এক বারান্দা, ভাঁজ করা যায় এমন জালপর্দায় ঘেরা, যা সরাসরি লিভিং রুমের সঙ্গে যুক্ত।
ঘর জুড়ে চারদিকে ডেকিং থাকায় প্রধান শয়নকক্ষ, আরও দু’টি শয়নকক্ষ এবং দুটি বাঙ্ক রুম—সব ক’টিতেই কাঁচের দরজা দিয়ে সরাসরি বাইরে যাওয়ার পথ। “মালিক ও অতিথিরা দরজা খুলেই বাইরে বেরিয়ে হ্রদের দিকে নেমে যেতে পারেন,” বলেন ডুবেলডাম—করিডোর পেরিয়ে আলাদা প্রবেশপথে ফিরে যেতে হয় না। চলাফেরায় অসুবিধা থাকা বয়োবৃদ্ধ আত্মীয়দের কথা মাথায় রেখে পার্কিং এলাকা থেকে সোজা দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য একটি র্যাম্প এবং একই তলায় সহজপ্রবেশ্য অতিথিকক্ষ রাখা হয়েছে—প্রয়োজনে একতলায় না নামিয়েই সব করা যায়। ব্যবহার না থাকলে এই অতিথিকক্ষই দম্পতির তিন সন্তানদের (বয়স ৫ থেকে ১০) জন্য খেলাঘর হিসেবে কাজ করে।

নির্মাণযানের প্রবেশ নিশ্চিত করতে তাঁরা বাড়ি পর্যন্ত ব্যক্তিগত সড়কও বানিয়েছেন—এখন আর ক্যানুতে চেপে পৌঁছানো বাধ্যতামূলক নয়। নিকটতম জনসাধারণের ইউটিলিটি অনেক দূরে হওয়ায় কটেজটি গ্রিডের বাইরে—নিজস্ব সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি স্টোরেজ, নলকূপ ও সেপটিক সিস্টেম রয়েছে।
বাইরের আবরণে কয়লার রঙে রঞ্জিত সিডার সাইডিং, আর ছাদের নিচের অংশে হেমলক প্যানেলিং। ভেতরে প্রাকৃতিক অথচ টেকসই উপকরণ—সাদা ওক কাঠের ফ্লোর ও রান্নাঘরের আলমারি, দেয়াল ও সিলিংয়ে হেমলক প্যানেলিং, আর লিভিং রুম ও স্ক্রিনযুক্ত বারান্দার দুটি কাঠ-জ্বালানি ফায়ারপ্লেসের চারপাশে কংক্রিট প্যানেল। থমাস জে. স্টেড কনস্ট্রাকশন ২০২১ সালের মে মাসে কাজ শুরু করে। শুরুতে সাইট–ওয়ার্কে দীর্ঘ সময় লেগেছে, সূক্ষ্ম বিবরণে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, শীতের প্রতিকূল আবহাওয়ায় নির্মাণসূচি বাধাগ্রস্তও হয়েছে—তাই কাজ শেষ হতে মার্চ পর্যন্ত সময় লেগেছে। নির্মাণব্যয় হয়েছে ২.৮ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (বর্তমান মূল্যমান ধরলে প্রায় ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















