প্রদর্শনীর মূল ভাবনা
শারজাহে এমিরেটস ফাইন আর্টস সোসাইটি (ইএফএএস) আয়োজিত ‘ফেসেস’ শিরোনামের প্রতিকৃতি প্রদর্শনীতে ৫০ জনেরও বেশি শিল্পী অংশ নিয়েছেন। ‘ওয়ান হিউম্যান স্টোরি আনফোল্ডস’ থিমে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে ১০০টিরও বেশি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। এটি উদ্বোধন করা হয় ২৬ অক্টোবর। প্রদর্শনীটির কিউরেটর ও সংগঠক সালেম আল জুনিবি।
প্রতিকৃতির শিল্পভাষা
ব্রিটেনের টেট গ্যালারির ভাষায়, প্রতিকৃতি শুধু কোনো ব্যক্তির মুখচ্ছবির রেকর্ড নয়, বরং তার ক্ষমতা, মর্যাদা, সৌন্দর্য, সম্পদ, রুচি ও জ্ঞানের প্রতিফলনও বটে। এই ধারণাকে কেন্দ্র করেই প্রদর্শনীর প্রতিটি কাজ তৈরি করা হয়েছে।
শিল্পকর্মগুলো নানা ধাঁচের
শিল্পকর্মগুলো নানা ধাঁচের—রিয়েলিজম থেকে অ্যাবস্ট্রাক্ট পর্যন্ত। উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ হুসেইনের ‘ফাইরুজ’ (অ্যাক্রিলিক অন ক্যানভাস), রাওয়া আল তারতুরি’র ‘দ্য আফগান গার্ল’ (পেন্সিল অন পেপার), লায়লা দাহেরের ‘ফেক মাস্কস’ এবং কারিমা আল শমলির ‘কাশখা’ (অ্যাক্রিলিক অন ক্যানভাস)।
অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা
প্রখ্যাত এমিরাতি শিল্পী নাজাত মাকি তাঁর স্বপ্নিল ও রঙিন প্রাকৃতিক দৃশ্যের বিমূর্ত প্রকাশের জন্য পরিচিত। আরেক অংশগ্রহণকারী ফায়েজা মোহাম্মদ হাসান ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও পোশাকের মাধ্যমে এমিরাতি পরিচয়কে চিত্রিত করেন। কারিমা আল শমলিও নিয়মিতভাবে ইএফএএসের বার্ষিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
প্রতিকৃতির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট
প্রতিকৃতি শিল্প প্রাচীন মিশর থেকে শুরু, প্রায় ৫০০০ বছর আগে থেকেই এটি বিকশিত। তখন ছবি আঁকা বা ভাস্কর্যই ছিল কারও চেহারা ধারণের একমাত্র উপায়। উইকিপিডিয়ার তথ্যে জানা যায়, ফাইয়ুম অঞ্চলের শুকনো আবহাওয়ায় সংরক্ষিত কিছু প্রাচীন প্রতিকৃতি আজও টিকে আছে—যা মিশরীয় ও গ্রিক সংস্কৃতির সংমিশ্রণের প্রতিফলন।
আর্টফাইন্ডার ডটকমের মতে, প্রতিকৃতি শুধু কোনো ব্যক্তির মুখ নয়; বরং এটি তার সংস্কৃতি, মানসিকতা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি। ফটোগ্রাফির আগমন পরবর্তী যুগে শিল্পীরা প্রতিকৃতিকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, যাতে কেবল সৌন্দর্য নয়, অন্তর্নিহিত অনুভূতিও ফুটে ওঠে।
মানবিক অনুভূতির প্রতিফলন
একটি এআই বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রতিকৃতি কেবল চেহারার মিল নয়, বরং মানুষের আবেগ, আনন্দ-বেদনা ও আত্মার গভীরতা প্রকাশের শক্তিশালী মাধ্যম। স্ব-প্রতিকৃতির মাধ্যমে শিল্পীরা তাঁদের মানসিক অবস্থা, ভয় ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। শিল্পীর রঙের ব্যবহার, আলোছায়া ও মুখাবয়বের ভঙ্গি দর্শকের সঙ্গে এক মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
সালেম আল জুনিবির ভূমিকা
প্রদর্শনীর কিউরেটর সালেম আল জুনিবি একজন প্রখ্যাত এমিরাতি ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট এবং ইএফএএসের সাবেক সভাপতি। তিনি বহু প্রদর্শনী, প্রকাশনা ও বিচারকমণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত। তরুণ শিল্পীদের উৎসাহ ও সহায়তা প্রদানেও তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়।
ইএফএএসের লক্ষ্য ও ভূমিকা
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইএফএএস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি অলাভজনক শিল্প সংগঠন, যার মূল কার্যালয় শারজাহের আর্টস এরিয়ায়। এর শাখা রয়েছে আবুধাবি, রাস আল খাইমাহ ও খোরফাক্কানে। ইএফএএস আরব আর্ট অ্যাসোসিয়েশন ও প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিল্প সংস্থা (আইএএ/এআইএপি)-এর সদস্য।

সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হলো স্থানীয় শিল্পীদের সহায়তা, শিল্পশিক্ষা প্রচার এবং বার্ষিক প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে সমকালীন শিল্পচর্চাকে এগিয়ে নেওয়া। ইএফএএস একই সঙ্গে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংযোগ ঘটিয়ে এমিরাতি শিল্প আন্দোলনকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরছে।
‘ফেসেস’ প্রদর্শনীটি শুধু প্রতিকৃতির প্রদর্শন নয়, বরং মানুষের গল্প, সংস্কৃতি ও আবেগের মেলবন্ধন। শিল্পীরা এখানে মুখের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন মানবতার এক চিরন্তন কাহিনি—যা দর্শককে নিজের প্রতিফলন খুঁজে নিতে আহ্বান জানায়।
#শিল্পসংস্কৃতি #ইএফএএস #শারজাহ #প্রতিকৃতি_প্রদর্শনী #এমিরাতি_শিল্প
সারাক্ষণ রিপোর্ট 





















