০৩:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে নির্বাচনের আগের পরিবেশ এখনো নাজুক: আইআরআই টাইফুন কালমায়গির তাণ্ডবে ফিলিপাইনে ১১৪ জনের মৃত্যু, ঝড়টি শক্তি সঞ্চয় করে ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর মৃত্যুর হিসাব এখনো চলছে: টাইফুন ‘টিনো’-র তাণ্ডব পেঁয়াজের দাম: দশ দিনেই দ্বিগুণ বাড়ার কারণ কী? আলাস্কায় টাইফুনে বিধ্বস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষায় মরিয়া চেষ্টা এআই যুগে নতুন প্রেমের খোঁজ: ডেটিং অ্যাপের রূপান্তর খারাপ রাষ্ট্রে ভালো নাগরিক হওয়ার সাহস: নৈতিক দায়িত্ব ও বিবেকের লড়াই মধ্যবয়সী নারীর শরীর ও মনকে ঘিরে নতুন ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য: ‘বিগ ওয়েলনেস’-এর উত্থান নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে সাহসী ডাচ ইহুদির প্রতিরোধ সংগ্রাম: মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে মানবতার জয়গান

বিশ্বের আড়ালে থাকা বিদ্যুৎখেকো শিল্প: শিল্পগ্যাস কোম্পানিগুলোর শক্তি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ

গুগল ও স্যামসাংয়ের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে লিন্ডে, পরিবেশবাদীরা বলছেন — ‘সবচেয়ে বড় গোপন দূষণ উৎস’


দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য গ্যাসের পেছনের শক্তিখরচ

আমাদের প্রতিদিন ব্যবহৃত টুথপেস্ট থেকে শুরু করে হাসপাতালের এমআরআই মেশিন — সবই নির্ভর করে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হিলিয়ামের মতো গ্যাসের ওপর। কিন্তু এসব গ্যাস উৎপাদন ও পরিবহনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত শক্তি-নির্ভর। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যখন ডেটা সেন্টার নির্মাণে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, তখন শিল্পগ্যাস খাত আরও বেশি বিদ্যুৎ ব্যয় করে যাচ্ছে — তবুও তা এখনো আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে।


তিন জায়ান্টের হাতে ৭০ শতাংশ বাজার

বিশ্বব্যাপী শিল্পগ্যাসের ১২ হাজার কোটি ডলারের বাজারের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি কোম্পানি — লিন্ডেএয়ার লিকুইড এবং এয়ার প্রোডাক্টস অ্যান্ড কেমিক্যালস। প্রচারণা সংস্থা অ্যাকশন স্পিকস লাউডার–এর নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝোঁক থাকলেও তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের অগ্রগতি এখনো অত্যন্ত ধীর।

প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক জর্জ হার্ডিং রলস বলেন, “এই খাতের বিদ্যুৎ ব্যবহার ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে।”


লিন্ডে: বিদ্যুৎ ব্যবহারে গুগল ও টোটালএনার্জির চেয়েও এগিয়ে

২০২৪ সালে লিন্ডের বিদ্যুৎ ব্যবহার গুগল, স্যামসাং এমনকি তেল কোম্পানি টোটালএনার্জির চেয়েও বেশি ছিল। অন্যদিকে, এয়ার লিকুইড ও এয়ার প্রোডাক্টসের শক্তি ব্যবহার ছিল শেল ও মাইক্রোসফটের কাছাকাছি। তবুও এই কোম্পানিগুলো সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত, কারণ তাদের গ্রাহক মূলত বিশ্বের বৃহত্তম রাসায়নিক, ইস্পাত ও তেল কোম্পানিগুলো।

শিল্পগ্যাস উৎপাদনের মূল যন্ত্র হলো এয়ার সেপারেশন ইউনিট (ASU), যা বিশাল কমপ্রেসরের সাহায্যে বাতাসকে তরলে পরিণত করে এবং এর উপাদানগুলো আলাদা করে। এই প্রক্রিয়াই খাতটির বিদ্যুৎ চাহিদার বড় উৎস, এবং কেবল চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রক্রিয়া থেকেই মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় ২ শতাংশ আসে।


কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ও প্রতিশ্রুতি

এই কোম্পানিগুলো হাইড্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড ও অ্যাসিটিলিনের মতো উচ্চ-শক্তিনির্ভর গ্যাসও উৎপাদন করে, যা রাসায়নিক উৎপাদন ও ওয়েল্ডিংয়ে ব্যবহৃত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরাসরি জ্বালানি ব্যবহারের (স্কোপ ১) ও বিদ্যুৎ ক্রয়ের (স্কোপ ২) নিঃসরণ যোগ করলে এই খাতের প্রভাব তেল কোম্পানি ও খুচরা জায়ান্টদের কাছাকাছি।

অ্যাকশন স্পিকস লাউডার–এর মতে, তিন কোম্পানির মধ্যে লিন্ডের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা সবচেয়ে দুর্বল। প্রতিষ্ঠানটি ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা বলেছে, কিন্তু ২০২৮ সালের লক্ষ্য শুধুমাত্র “নিঃসরণ ঘনত্ব” কমানোর ওপর — যা মোট নিঃসরণ কমার নিশ্চয়তা দেয় না।

তবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশ নিঃসরণ কমানোর একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। লিন্ডের সিইও সঞ্জীব লাম্বা বলেন, “আমরা বিদ্যুৎখেকো হলেও, এর মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে চাপ প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছি।”


নবায়নযোগ্য শক্তির দাবি ও বাস্তবতা

লিন্ডের ২০২৪ সালের টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ নিম্ন-কার্বন উৎস থেকে আসে। তবে প্রকৃত নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস মাত্র ১৪ শতাংশ। বাকিটা হিসাব করা হয়েছে গ্রিডের কার্বন তীব্রতা বিশ্লেষণ ও নবায়নযোগ্য ক্রেডিট কেনার মাধ্যমে — যা বাস্তবে নিঃসরণ কমায় না।

লাম্বা স্বীকার করেন, “আমরা কখনোই ক্রেডিট বা সার্টিফিকেট ব্যবস্থার বড় ভক্ত নই। তাই সরাসরি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ক্রয় দ্বিগুণ করেছি।” তবে অ্যাকশন স্পিকস লাউডার বলছে, লিন্ডের তথ্য প্রকাশের পদ্ধতি অস্বচ্ছ, ফলে প্রকৃত জলবায়ু প্রভাব যাচাই করা কঠিন।


প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থান: কে এগিয়ে?

এয়ার প্রোডাক্টস নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়েছে — ২০২৩ সালের ২৩ শতাংশ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৯০ শতাংশের বেশি করতে চায়। তবে তাদের প্রতিবেদনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে; কতটা শক্তি সরাসরি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসছে তা স্পষ্ট নয়।

এয়ার লিকুইড ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তাদের ৯০ শতাংশের বেশি এয়ার সেপারেশন ইউনিট ইতোমধ্যেই বিদ্যুতায়িত, যা জ্বালানি সাশ্রয়ী। তবুও তাদের উপ-প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি ব্যবহার ও নিঃসরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এখনো অস্বচ্ছ।


বিনিয়োগকারীদের চাপ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ

সবুজ প্রচারণা সংগঠন শেয়ার অ্যাকশন–এর এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্পগ্যাস কোম্পানিগুলোর নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের কৌশল দুর্বল এবং এটি তাদের খরচ ও শেয়ারহোল্ডার মুনাফা কমাচ্ছে।

এই বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ার অ্যাকশন ২.১ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ন্ত্রণকারী ২২ বিনিয়োগকারীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি লিন্ডেকে পাঠায়, যেখানে কোম্পানিকে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যের সঙ্গে কার্যক্রম সামঞ্জস্য করার আহ্বান জানানো হয়।

এয়ার লিকুইডের বিনিয়োগকারী ইকোফাই–এর বিশ্লেষক আলিক্স রোয়া বলেন, “আমরা কোম্পানির বোর্ডের কাছে নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে জবাব চেয়েছি। কিন্তু এখনো স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি।”


বিশ্বজুড়ে শিল্পগ্যাস কোম্পানিগুলো দৈনন্দিন জীবনের জন্য অপরিহার্য পণ্য সরবরাহ করলেও, তাদের বিশাল শক্তি ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণ এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়। নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে এই খাতের কোম্পানিগুলোই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে পারে — যদি তারা সত্যিই চায়।


#শিল্পগ্যাস #বিদ্যুৎব্যবহার #লিন্ডে #জলবায়ুপরিবর্তন #নবায়নযোগ্যশক্তি #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে

বিশ্বের আড়ালে থাকা বিদ্যুৎখেকো শিল্প: শিল্পগ্যাস কোম্পানিগুলোর শক্তি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ

১২:৩৫:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

গুগল ও স্যামসাংয়ের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে লিন্ডে, পরিবেশবাদীরা বলছেন — ‘সবচেয়ে বড় গোপন দূষণ উৎস’


দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য গ্যাসের পেছনের শক্তিখরচ

আমাদের প্রতিদিন ব্যবহৃত টুথপেস্ট থেকে শুরু করে হাসপাতালের এমআরআই মেশিন — সবই নির্ভর করে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হিলিয়ামের মতো গ্যাসের ওপর। কিন্তু এসব গ্যাস উৎপাদন ও পরিবহনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত শক্তি-নির্ভর। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যখন ডেটা সেন্টার নির্মাণে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, তখন শিল্পগ্যাস খাত আরও বেশি বিদ্যুৎ ব্যয় করে যাচ্ছে — তবুও তা এখনো আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে।


তিন জায়ান্টের হাতে ৭০ শতাংশ বাজার

বিশ্বব্যাপী শিল্পগ্যাসের ১২ হাজার কোটি ডলারের বাজারের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি কোম্পানি — লিন্ডেএয়ার লিকুইড এবং এয়ার প্রোডাক্টস অ্যান্ড কেমিক্যালস। প্রচারণা সংস্থা অ্যাকশন স্পিকস লাউডার–এর নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝোঁক থাকলেও তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের অগ্রগতি এখনো অত্যন্ত ধীর।

প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক জর্জ হার্ডিং রলস বলেন, “এই খাতের বিদ্যুৎ ব্যবহার ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে।”


লিন্ডে: বিদ্যুৎ ব্যবহারে গুগল ও টোটালএনার্জির চেয়েও এগিয়ে

২০২৪ সালে লিন্ডের বিদ্যুৎ ব্যবহার গুগল, স্যামসাং এমনকি তেল কোম্পানি টোটালএনার্জির চেয়েও বেশি ছিল। অন্যদিকে, এয়ার লিকুইড ও এয়ার প্রোডাক্টসের শক্তি ব্যবহার ছিল শেল ও মাইক্রোসফটের কাছাকাছি। তবুও এই কোম্পানিগুলো সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত, কারণ তাদের গ্রাহক মূলত বিশ্বের বৃহত্তম রাসায়নিক, ইস্পাত ও তেল কোম্পানিগুলো।

শিল্পগ্যাস উৎপাদনের মূল যন্ত্র হলো এয়ার সেপারেশন ইউনিট (ASU), যা বিশাল কমপ্রেসরের সাহায্যে বাতাসকে তরলে পরিণত করে এবং এর উপাদানগুলো আলাদা করে। এই প্রক্রিয়াই খাতটির বিদ্যুৎ চাহিদার বড় উৎস, এবং কেবল চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রক্রিয়া থেকেই মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় ২ শতাংশ আসে।


কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ও প্রতিশ্রুতি

এই কোম্পানিগুলো হাইড্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড ও অ্যাসিটিলিনের মতো উচ্চ-শক্তিনির্ভর গ্যাসও উৎপাদন করে, যা রাসায়নিক উৎপাদন ও ওয়েল্ডিংয়ে ব্যবহৃত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরাসরি জ্বালানি ব্যবহারের (স্কোপ ১) ও বিদ্যুৎ ক্রয়ের (স্কোপ ২) নিঃসরণ যোগ করলে এই খাতের প্রভাব তেল কোম্পানি ও খুচরা জায়ান্টদের কাছাকাছি।

অ্যাকশন স্পিকস লাউডার–এর মতে, তিন কোম্পানির মধ্যে লিন্ডের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা সবচেয়ে দুর্বল। প্রতিষ্ঠানটি ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা বলেছে, কিন্তু ২০২৮ সালের লক্ষ্য শুধুমাত্র “নিঃসরণ ঘনত্ব” কমানোর ওপর — যা মোট নিঃসরণ কমার নিশ্চয়তা দেয় না।

তবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশ নিঃসরণ কমানোর একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। লিন্ডের সিইও সঞ্জীব লাম্বা বলেন, “আমরা বিদ্যুৎখেকো হলেও, এর মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে চাপ প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছি।”


নবায়নযোগ্য শক্তির দাবি ও বাস্তবতা

লিন্ডের ২০২৪ সালের টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ নিম্ন-কার্বন উৎস থেকে আসে। তবে প্রকৃত নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস মাত্র ১৪ শতাংশ। বাকিটা হিসাব করা হয়েছে গ্রিডের কার্বন তীব্রতা বিশ্লেষণ ও নবায়নযোগ্য ক্রেডিট কেনার মাধ্যমে — যা বাস্তবে নিঃসরণ কমায় না।

লাম্বা স্বীকার করেন, “আমরা কখনোই ক্রেডিট বা সার্টিফিকেট ব্যবস্থার বড় ভক্ত নই। তাই সরাসরি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ক্রয় দ্বিগুণ করেছি।” তবে অ্যাকশন স্পিকস লাউডার বলছে, লিন্ডের তথ্য প্রকাশের পদ্ধতি অস্বচ্ছ, ফলে প্রকৃত জলবায়ু প্রভাব যাচাই করা কঠিন।


প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থান: কে এগিয়ে?

এয়ার প্রোডাক্টস নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়েছে — ২০২৩ সালের ২৩ শতাংশ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৯০ শতাংশের বেশি করতে চায়। তবে তাদের প্রতিবেদনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে; কতটা শক্তি সরাসরি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসছে তা স্পষ্ট নয়।

এয়ার লিকুইড ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তাদের ৯০ শতাংশের বেশি এয়ার সেপারেশন ইউনিট ইতোমধ্যেই বিদ্যুতায়িত, যা জ্বালানি সাশ্রয়ী। তবুও তাদের উপ-প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি ব্যবহার ও নিঃসরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এখনো অস্বচ্ছ।


বিনিয়োগকারীদের চাপ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ

সবুজ প্রচারণা সংগঠন শেয়ার অ্যাকশন–এর এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্পগ্যাস কোম্পানিগুলোর নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের কৌশল দুর্বল এবং এটি তাদের খরচ ও শেয়ারহোল্ডার মুনাফা কমাচ্ছে।

এই বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ার অ্যাকশন ২.১ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ন্ত্রণকারী ২২ বিনিয়োগকারীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি লিন্ডেকে পাঠায়, যেখানে কোম্পানিকে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যের সঙ্গে কার্যক্রম সামঞ্জস্য করার আহ্বান জানানো হয়।

এয়ার লিকুইডের বিনিয়োগকারী ইকোফাই–এর বিশ্লেষক আলিক্স রোয়া বলেন, “আমরা কোম্পানির বোর্ডের কাছে নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে জবাব চেয়েছি। কিন্তু এখনো স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি।”


বিশ্বজুড়ে শিল্পগ্যাস কোম্পানিগুলো দৈনন্দিন জীবনের জন্য অপরিহার্য পণ্য সরবরাহ করলেও, তাদের বিশাল শক্তি ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণ এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়। নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে এই খাতের কোম্পানিগুলোই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে পারে — যদি তারা সত্যিই চায়।


#শিল্পগ্যাস #বিদ্যুৎব্যবহার #লিন্ডে #জলবায়ুপরিবর্তন #নবায়নযোগ্যশক্তি #সারাক্ষণরিপোর্ট