০৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে নির্বাচনের আগের পরিবেশ এখনো নাজুক: আইআরআই টাইফুন কালমায়গির তাণ্ডবে ফিলিপাইনে ১১৪ জনের মৃত্যু, ঝড়টি শক্তি সঞ্চয় করে ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর মৃত্যুর হিসাব এখনো চলছে: টাইফুন ‘টিনো’-র তাণ্ডব পেঁয়াজের দাম: দশ দিনেই দ্বিগুণ বাড়ার কারণ কী? আলাস্কায় টাইফুনে বিধ্বস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষায় মরিয়া চেষ্টা এআই যুগে নতুন প্রেমের খোঁজ: ডেটিং অ্যাপের রূপান্তর খারাপ রাষ্ট্রে ভালো নাগরিক হওয়ার সাহস: নৈতিক দায়িত্ব ও বিবেকের লড়াই মধ্যবয়সী নারীর শরীর ও মনকে ঘিরে নতুন ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য: ‘বিগ ওয়েলনেস’-এর উত্থান নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে সাহসী ডাচ ইহুদির প্রতিরোধ সংগ্রাম: মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে মানবতার জয়গান

নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে সাহসী ডাচ ইহুদির প্রতিরোধ সংগ্রাম: মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে মানবতার জয়গান

সাহসী প্রতিরোধ যোদ্ধা সেলমা ভান দে পেরে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে ডাচ প্রতিরোধ আন্দোলনে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করা ইহুদি তরুণী সেলমা ভান দে পেরে ১০৩ বছর বয়সে লন্ডনে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে লন্ডনে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস দূতাবাস।

১৯৪০ সালের মে মাসে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেলমা দেখেন নাৎসি বাহিনী তাঁর দেশ নেদারল্যান্ডস দখল করছে। মাত্র চার দিনে নয় মিলিয়নের কম জনসংখ্যার এই দেশ সম্পূর্ণভাবে নাৎসিদের নিয়ন্ত্রণে আসে। পশ্চিম ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় এখান থেকেই সর্বাধিক সংখ্যক ইহুদিকে নির্বাসিত করা হয়।


প্রতারণা, সাহস আর ছদ্মবেশে টিকে থাকার গল্প

নির্বাসন এড়াতে প্রথমে সেলমা অসুস্থতার ভান করেন, পরে নার্স সেজে কাজ নেন, এবং শেষ পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য গ্লাভস তৈরির কাজে যুক্ত হন। পরে তিনি ডাচ প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন, নিজের নাম ও পরিচয় বদলে ফেলেন, এবং স্বর্ণকেশী চেহারায় নিজেকে উপস্থাপন করেন যাতে তাঁকে ইহুদি হিসেবে চেনা না যায়।

২০২০ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী “মাই নেম ইজ সেলমা”-তে তিনি লেখেন,
“আমি ভাগ্যবান ছিলাম—শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম। জানতাম না ঠিক কতটা সক্ষম, কিন্তু মনে হয়েছিল আমি এতটুকু দৃঢ় যে শুধু লুকিয়ে থাকা নয়, আরও কিছু করতে পারব।”

লন্ডনের টাইমস লিটারারি সাপ্লিমেন্ট-এ লেখিকা ক্যারোলিন মুরহেড লিখেছিলেন, “তাঁর স্থিরতা ও সাহস দেখে বিস্মিত না হওয়া অসম্ভব।”


 প্রতিরোধে গুপ্তচরবৃত্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান

‘উইলহেলমিনা বুটার’ ও ‘মার্গারেটা ভান ডের কুইট’ নামে ছদ্মনামে কাজ করে সেলমা জাল পরিচয়পত্র তৈরি করতেন, ইহুদি পরিবারগুলিকে খ্রিস্টানদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতেন এবং প্রতিরোধ সদস্যদের কাছে গোপন তথ্য পৌঁছে দিতেন।

একবার তিনি প্যারিসের নাৎসি সদর দফতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন, যেখানে জার্মান প্রহরীদের সঙ্গে কথাবার্তা ও হাস্যরস করে তিনি ভেতরে ঢুকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোপন বার্তা পৌঁছে দেন।


বন্দিত্ব ও মৃত্যুর মুখে বেঁচে ফেরা

১৯৪৪ সালের জুনে জার্মান পুলিশ তাঁকে উট্রেখটের এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে তাঁকে নেদারল্যান্ডসের হারজোগেনবুশ (ভুখত) কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়, যেখানে বন্দিদের দিয়ে গ্যাসমাস্ক তৈরি করানো হতো। সেলমা সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে সেই গ্যাসমাস্কগুলি নষ্ট করার কাজ করতেন।

পরে তাঁকে পাঠানো হয় জার্মানির উত্তরাঞ্চলের নারী বন্দিদের সবচেয়ে বড় শিবির রাভেনসব্রুকে। সেখানে তিনি মারধর, রোগব্যাধি, অনাহার ও দাসত্বের মতো পরিস্থিতি সহ্য করেন। তাঁকে বিমানযন্ত্রাংশ তৈরির কারখানায় কাজ করতে হতো।

১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে সুইডিশ রেড ক্রস তাঁকে মুক্ত করে। কিন্তু মুক্তির পথে থাকা ট্রাকগুলিকে ভুলবশত শত্রুপক্ষের কনভয় ভেবে রয়্যাল এয়ার ফোর্স হামলা চালায়, যেখানে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

 


পরিবারের মর্মান্তিক পরিণতি

যুদ্ধশেষে সুইডেন হয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছে সেলমা জানতে পারেন, তাঁর বাবা, মা, বোন, দাদি, খালা, চাচা ও দুই কাজিন সবাই নাৎসিদের হাতে নিহত হয়েছেন।

১৯২২ সালের ৭ জুন আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেন সেলমা ভেলম্যান (পরবর্তীতে ভান দে পেরে)। তাঁর বাবা বারেন্ড লেভি ভেলম্যান ছিলেন একসময় অভিনেতা ও গায়ক, আর মা ফেমেতিয়ে স্পিয়র ছিলেন মিলিনার (টুপি প্রস্তুতকারক)। ছোটবেলায় সেলমা দীর্ঘদিন প্লিউরিসি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কাটান, তবুও তিনি পড়াশোনায় ভালো ছিলেন এবং বড় হয়ে একটি বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোরে চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন।

নাৎসি আক্রমণের পর ১৯৪০ সালের জুনে তাঁকে শ্রমশিবিরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তখন তাঁর বাবা নির্বাসিত হন, মা ও বোন আত্মগোপনে যান, আর সেলমা যোগ দেন প্রতিরোধে।


যুদ্ধোত্তর জীবন ও অবদান

মুক্তির পর ইংল্যান্ডে গিয়ে তিনি সমাজবিজ্ঞান ও গণিত পড়ান, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে নৃবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন এবং বিবিসির ডাচ ভাষা পরিষেবায় কাজ শুরু করেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ফ্লেমিশ সাংবাদিক হুগো ভান দে পেরের, যাঁর সঙ্গে তিনি ১৯৫৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক ছেলে হয়, নাম জোসেলিন।

১৯৭৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর সেলমা সংস্কৃতি-বিষয়ক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৮৩ সালে নেদারল্যান্ডস সরকার তাঁকে রেজিস্ট্যান্স মেমোরিয়াল ক্রস পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর তিনি রাভেনসব্রুকে ফিরে যেতেন, শিক্ষার্থীদের যুদ্ধের বিভীষিকা স্মরণ করিয়ে দিতে।


ক্ষমা নয়, কিন্তু ঘৃণাও নয়

২০২১ সালে পিবিএস উপস্থাপক ক্রিশ্চিয়ান আমানপুর তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি যুদ্ধের প্রতি ক্ষোভ অনুভব করেন?
সেলমার উত্তর ছিল গভীর ও মানবিক—
“ক্ষোভ? শব্দটা কঠিন। না, আমি ক্ষুব্ধ নই, তবে যারা সেই ভয়ঙ্কর কাজগুলো করেছে, তাদের ক্ষমা করি না। তারা ভয়ঙ্কর মানুষ ছিল এবং মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য ছিল। কিন্তু আমি জার্মানদের ঘৃণা করি না; আমি তেমন অসহিষ্ণু হতে পারি না।”


এক অমর উত্তরাধিকার

সেলমা ভান দে পেরে—এক তরুণী, যিনি মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে বাঁচার পাশাপাশি মানবতার মর্যাদাও রক্ষা করেছিলেন। তাঁর জীবন প্রমাণ করে, ইতিহাসের অন্ধতম সময়েও একজন মানুষের সাহস আলো জ্বালাতে পারে।


#SelmaVanDePerre #HolocaustSurvivor #WWII #DutchResistance #History #Courage #Humanity #SarakKhonReport #WorldWar2 #Inspiration

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে

নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে সাহসী ডাচ ইহুদির প্রতিরোধ সংগ্রাম: মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে মানবতার জয়গান

০১:২৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

সাহসী প্রতিরোধ যোদ্ধা সেলমা ভান দে পেরে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে ডাচ প্রতিরোধ আন্দোলনে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করা ইহুদি তরুণী সেলমা ভান দে পেরে ১০৩ বছর বয়সে লন্ডনে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে লন্ডনে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস দূতাবাস।

১৯৪০ সালের মে মাসে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেলমা দেখেন নাৎসি বাহিনী তাঁর দেশ নেদারল্যান্ডস দখল করছে। মাত্র চার দিনে নয় মিলিয়নের কম জনসংখ্যার এই দেশ সম্পূর্ণভাবে নাৎসিদের নিয়ন্ত্রণে আসে। পশ্চিম ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় এখান থেকেই সর্বাধিক সংখ্যক ইহুদিকে নির্বাসিত করা হয়।


প্রতারণা, সাহস আর ছদ্মবেশে টিকে থাকার গল্প

নির্বাসন এড়াতে প্রথমে সেলমা অসুস্থতার ভান করেন, পরে নার্স সেজে কাজ নেন, এবং শেষ পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য গ্লাভস তৈরির কাজে যুক্ত হন। পরে তিনি ডাচ প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন, নিজের নাম ও পরিচয় বদলে ফেলেন, এবং স্বর্ণকেশী চেহারায় নিজেকে উপস্থাপন করেন যাতে তাঁকে ইহুদি হিসেবে চেনা না যায়।

২০২০ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী “মাই নেম ইজ সেলমা”-তে তিনি লেখেন,
“আমি ভাগ্যবান ছিলাম—শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম। জানতাম না ঠিক কতটা সক্ষম, কিন্তু মনে হয়েছিল আমি এতটুকু দৃঢ় যে শুধু লুকিয়ে থাকা নয়, আরও কিছু করতে পারব।”

লন্ডনের টাইমস লিটারারি সাপ্লিমেন্ট-এ লেখিকা ক্যারোলিন মুরহেড লিখেছিলেন, “তাঁর স্থিরতা ও সাহস দেখে বিস্মিত না হওয়া অসম্ভব।”


 প্রতিরোধে গুপ্তচরবৃত্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান

‘উইলহেলমিনা বুটার’ ও ‘মার্গারেটা ভান ডের কুইট’ নামে ছদ্মনামে কাজ করে সেলমা জাল পরিচয়পত্র তৈরি করতেন, ইহুদি পরিবারগুলিকে খ্রিস্টানদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতেন এবং প্রতিরোধ সদস্যদের কাছে গোপন তথ্য পৌঁছে দিতেন।

একবার তিনি প্যারিসের নাৎসি সদর দফতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন, যেখানে জার্মান প্রহরীদের সঙ্গে কথাবার্তা ও হাস্যরস করে তিনি ভেতরে ঢুকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোপন বার্তা পৌঁছে দেন।


বন্দিত্ব ও মৃত্যুর মুখে বেঁচে ফেরা

১৯৪৪ সালের জুনে জার্মান পুলিশ তাঁকে উট্রেখটের এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে তাঁকে নেদারল্যান্ডসের হারজোগেনবুশ (ভুখত) কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়, যেখানে বন্দিদের দিয়ে গ্যাসমাস্ক তৈরি করানো হতো। সেলমা সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে সেই গ্যাসমাস্কগুলি নষ্ট করার কাজ করতেন।

পরে তাঁকে পাঠানো হয় জার্মানির উত্তরাঞ্চলের নারী বন্দিদের সবচেয়ে বড় শিবির রাভেনসব্রুকে। সেখানে তিনি মারধর, রোগব্যাধি, অনাহার ও দাসত্বের মতো পরিস্থিতি সহ্য করেন। তাঁকে বিমানযন্ত্রাংশ তৈরির কারখানায় কাজ করতে হতো।

১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে সুইডিশ রেড ক্রস তাঁকে মুক্ত করে। কিন্তু মুক্তির পথে থাকা ট্রাকগুলিকে ভুলবশত শত্রুপক্ষের কনভয় ভেবে রয়্যাল এয়ার ফোর্স হামলা চালায়, যেখানে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

 


পরিবারের মর্মান্তিক পরিণতি

যুদ্ধশেষে সুইডেন হয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছে সেলমা জানতে পারেন, তাঁর বাবা, মা, বোন, দাদি, খালা, চাচা ও দুই কাজিন সবাই নাৎসিদের হাতে নিহত হয়েছেন।

১৯২২ সালের ৭ জুন আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেন সেলমা ভেলম্যান (পরবর্তীতে ভান দে পেরে)। তাঁর বাবা বারেন্ড লেভি ভেলম্যান ছিলেন একসময় অভিনেতা ও গায়ক, আর মা ফেমেতিয়ে স্পিয়র ছিলেন মিলিনার (টুপি প্রস্তুতকারক)। ছোটবেলায় সেলমা দীর্ঘদিন প্লিউরিসি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কাটান, তবুও তিনি পড়াশোনায় ভালো ছিলেন এবং বড় হয়ে একটি বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোরে চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন।

নাৎসি আক্রমণের পর ১৯৪০ সালের জুনে তাঁকে শ্রমশিবিরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তখন তাঁর বাবা নির্বাসিত হন, মা ও বোন আত্মগোপনে যান, আর সেলমা যোগ দেন প্রতিরোধে।


যুদ্ধোত্তর জীবন ও অবদান

মুক্তির পর ইংল্যান্ডে গিয়ে তিনি সমাজবিজ্ঞান ও গণিত পড়ান, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে নৃবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন এবং বিবিসির ডাচ ভাষা পরিষেবায় কাজ শুরু করেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ফ্লেমিশ সাংবাদিক হুগো ভান দে পেরের, যাঁর সঙ্গে তিনি ১৯৫৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক ছেলে হয়, নাম জোসেলিন।

১৯৭৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর সেলমা সংস্কৃতি-বিষয়ক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৮৩ সালে নেদারল্যান্ডস সরকার তাঁকে রেজিস্ট্যান্স মেমোরিয়াল ক্রস পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর তিনি রাভেনসব্রুকে ফিরে যেতেন, শিক্ষার্থীদের যুদ্ধের বিভীষিকা স্মরণ করিয়ে দিতে।


ক্ষমা নয়, কিন্তু ঘৃণাও নয়

২০২১ সালে পিবিএস উপস্থাপক ক্রিশ্চিয়ান আমানপুর তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি যুদ্ধের প্রতি ক্ষোভ অনুভব করেন?
সেলমার উত্তর ছিল গভীর ও মানবিক—
“ক্ষোভ? শব্দটা কঠিন। না, আমি ক্ষুব্ধ নই, তবে যারা সেই ভয়ঙ্কর কাজগুলো করেছে, তাদের ক্ষমা করি না। তারা ভয়ঙ্কর মানুষ ছিল এবং মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য ছিল। কিন্তু আমি জার্মানদের ঘৃণা করি না; আমি তেমন অসহিষ্ণু হতে পারি না।”


এক অমর উত্তরাধিকার

সেলমা ভান দে পেরে—এক তরুণী, যিনি মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে বাঁচার পাশাপাশি মানবতার মর্যাদাও রক্ষা করেছিলেন। তাঁর জীবন প্রমাণ করে, ইতিহাসের অন্ধতম সময়েও একজন মানুষের সাহস আলো জ্বালাতে পারে।


#SelmaVanDePerre #HolocaustSurvivor #WWII #DutchResistance #History #Courage #Humanity #SarakKhonReport #WorldWar2 #Inspiration