চাঁদের জ্যোৎস্নায় মোড়া এক জাদুকরী রাত
বুধবার রাতটি ছিল আকাশপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য দৃশ্যের মুহূর্ত। সারা বিশ্বের মানুষ চোখে দেখেছে বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও বৃহৎ পূর্ণচন্দ্র — ‘বিভার সুপারমুন’। পৃথিবীর কাছে সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করার কারণে এই পূর্ণচন্দ্র আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও উজ্জ্বল ও বড় দেখিয়েছে।
সুপারমুনের কারণ ও নামের উৎপত্তি
চাঁদের কক্ষপথ পুরোপুরি গোল নয়, বরং ডিম্বাকৃতির। এই কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে, তখনই দেখা দেয় ‘সুপারমুন’।
‘বিভার মুন’ নামটি এসেছে প্রাচীন উত্তর আমেরিকার স্থানীয় উপজাতিদের প্রথা থেকে। নভেম্বর মাসে তারা বিভার ধরার ফাঁদ পেতে রাখত বলে এ নামটি প্রচলিত হয়।
এই বছরের শেষ সুপারমুন দেখা যাবে আগামী ৪ ডিসেম্বর।
বিশ্বজুড়ে ফটোগ্রাফারদের চোখে বিভার সুপারমুন
বুধবার রাতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফটোগ্রাফাররা তুলেছেন চমকপ্রদ সব ছবি।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়, প্ল্যানেটারিয়ামের টেলিস্কোপের সাহায্যে মানুষ সুপারমুন পর্যবেক্ষণ করেছে।

চীনের হুয়াই’আন শহরে, পণ্যবাহী জাহাজ আর ধোঁয়াময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের পটভূমিতে চাঁদকে দেখা গেছে মনোমুগ্ধকরভাবে উদিত হতে।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে, নর্থ বন্ডি পাহাড়ের ঢালে শত শত মানুষ বিস্ময়ে দেখেছে বিশাল কমলা রঙের সুপারমুনকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে চাঁদ উদিত দেখার জন্য হাডসন ইয়ার্ডসে এজএনওয়াইসি পর্যবেক্ষণ ডেকে মানুষ জড়ো হয়েছিল।

নিউ জার্সির হোবোকেনে নিখুঁতভাবে অবস্থান করা ফটোগ্রাফার গ্যারি হার্শর্ন, নিউ ইয়র্কের উপর সূর্যাস্তের সাথে সাথে ক্রাইসলার বিল্ডিংয়ের পিছনে বিভার চাঁদের উদয়ের এই আকর্ষণীয় দৃশ্যটি ধারণ করেছিলেন।

লন্ডনে, আলোকচিত্রী নিল হল মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মধ্যেও তুলেছেন পরিষ্কার একটি চাঁদের ছবি, যেখানে ক্রেটার ও ভাঁজগুলো স্পষ্ট দেখা গেছে।

চীনের কেন্দ্রীয় উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত জিয়াংসু প্রদেশের লিয়ানয়ুঙ্গাং শহরের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের উপরে চাঁদ উঠেছে।

ফ্রান্সের প্যারিসে, মেঘের আড়ালে থেকেও চাঁদ দেখা দিয়েছে শহরের আকাশে, ধূসর আলোয় ঢেকে গেছে পুরো স্কাইলাইন।

ইতালির রোমে, উড়ন্ত পাখিদের সাথে জ্বলজ্বলে কমলা চাঁদ শহরের আকাশে এক রোমান্টিক আবহ তৈরি করেছে।

পোল্যান্ডের প্রজেমিসলে চন্দ্র প্রদর্শনীকে ছেদ করে ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকা অফ দ্য অ্যাসাম্পশন অফ দ্য ব্লেসেড ভার্জিন মেরি এবং সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্টের ক্লক টাওয়ারের চূড়াটি।

ডোগুকান কেসকিনকিলিকের ছবির সামনের অংশে তুরস্কের আঙ্কারার আঙ্কারা দুর্গের ছবি তোলা হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে অবস্থিত ইউনাইটেড স্টেটস মেরিন কর্পস ওয়ার মেমোরিয়াল, যা ইও জিমা মেমোরিয়াল নামে পরিচিত, এর পিছনে একটি উজ্জ্বল চাঁদের ছবি তোলা হয়েছে।

আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে রিও দে লা প্লাটা নদীর উপর দিয়ে চাঁদটি ঝিকিমিকি করছিল।

জার্মানির হ্যানোভারে, আলোকচিত্রী জুলিয়ান স্ট্রাটেনশুলটে তাঁর ক্যামেরায় মূর্তিটির হাতের সাথে চাঁদের অবস্থান মিলিয়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন একটি ছবি।

গাজা শহরে, ধ্বংসস্তূপের মাঝেও উঠে আসা চাঁদের দৃশ্য এক নিস্তব্ধ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে।

রাশিয়ার মস্কোতে, ক্রেমলিন ও সেন্ট বাসিলস ক্যাথেড্রালের পেছনে মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিয়েছে বিভার মুন।

গ্রীসের এথেন্সে অ্যাক্রোপলিসের উপরে মেঘ বিচ্ছিন্ন হয়ে চাঁদ দেখা গেছে।

কাতারের দোহায়, কাতার বোট শো চলাকালীন এক নারী স্যাক্সোফোন বাজাচ্ছেন, আর পেছনে কমলা চাঁদ—এই দৃশ্যটি যেন এক জীবন্ত চিত্রকর্ম।

সিরিয়ার ইদলিবে, ঘূর্ণমান আলোকচক্রের পাশে আকাশে ভাসমান চাঁদের দৃশ্য ধরা পড়েছে এক বিমোহিত ছবিতে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের উপর মেঘের আবরণের কারণে চাঁদ উদয় আংশিকভাবে ঢেকে গিয়েছিল।

ভারতের দিল্লিতে, বেগুনি আলোর নিচে ছোট্ট কমলা চাঁদ এক মায়াবী দৃশ্য তৈরি করেছে।

সিঙ্গাপুরে, স্ট্রিট লাইটের আলোর সাথে মিলেমিশে চাঁদকে দেখা গেছে এক বিমূর্ত সৌন্দর্যে।

সাইপ্রাসের লিমাসলে, গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়েছে উজ্জ্বল বিভার মুন।

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে, ইডেন পার্কে ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগকারীরা পেয়েছেন পরিষ্কার আকাশে চাঁদের পূর্ণ রূপ।
প্রকৃতির মহিমা — একই চাঁদ, ভিন্ন ভিন্ন রূপ
তুরস্কের সারিকামিশ থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড পর্যন্ত — একই চাঁদ তার নিজস্ব জ্যোতিতে বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। বিভার সুপারমুন শুধু একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়, এটি পৃথিবীর আকাশের এক বিরল সৌন্দর্য, যা মানুষকে আবারও মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির অপার বিস্ময়কে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















