“অভিনন্দন! আপনি ১০ লাখ টাকা জিতেছেন” — এমন এস এম এস বা কল পেয়ে অনেকেই লোভে পড়ে ব্যক্তিগত তথ্য দিচ্ছেন, কেউ বা বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছেন।
যারা লোভে পড়ে এ কাজ করছেন, তারা জানেন না এসবের পেছনে সক্রিয় রয়েছে সংঘবদ্ধ সাইবার প্রতারক চক্র।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জেলার মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও এসএমএসের মাধ্যমে “ লাখ লাখ টাকার লটারি বিজয়ী” বা “অনলাইন গেমে পুরস্কারপ্রাপ্ত” এমন বার্তা পাচ্ছেন। নিজেদের কোনো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের প্রতিনিধি পরিচয়ে ফোন করে বা বার্তা পাঠিয়ে বিশ্বাস অর্জন করছে। এরপর তারা “প্রসেসিং ফি” বা “ভ্যাট চার্জ” নামে বিকাশ বা নগদে অল্প অঙ্কের টাকা পাঠাতে বলে। টাকা পাঠানোর পরই নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায় বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রতারকরা সাধারণত বিদেশি নাম ও লোগো ব্যবহার করে বার্তা পাঠায়, যাতে মানুষ সহজে বিশ্বাস করে। অনেক সময় তারা ভিত্তিহীন ওয়েবসাইটও বানায়, যা দেখতে প্রকৃত কোন কোম্পানির ওয়েবসাইটের মতো।”
প্রতারণা কীভাবে হয়?
অনলাইন পুরস্কার প্রতারণা মূলত তিনভাবে পরিচালিত হয় —সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া লটারির বার্তা বা বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনলাইন গেম বা জরিপে অংশ নেওয়ার পর “বিজয়ী হয়েছেন” দাবি করে ও ফোন কলের মাধ্যমে পুরস্কার প্রদানের কথা বলে অর্থ দাবি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতারকরা প্রাথমিকভাবে ছোট অঙ্কের টাকা নেয়, কিন্তু যোগাযোগ পেলে পরবর্তীতে বড় অঙ্কের দাবি করে। অনেক সময় ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে আর্থিক প্রতারণা বা পরিচয় চুরির মতো বড় অপরাধেও ব্যবহার করা হয়।
অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযানকারী সাইবার ক্রাইম দমন ইউনিট জানিয়েছে, সম্প্রতি কয়েকটি বড় অনলাইন প্রতারণা চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ইতিমধ্যে রাজধানী ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এই চক্রগুলো সাধারণত দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হয় এবং মোবাইল অ্যাপ, ভিপিএন ও ভার্চুয়াল নম্বর ব্যবহার করে পরিচয় গোপন রাখে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: আতঙ্ক নয়, সচেতনতাই এখানে মূল সমাধান। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. মুশফিকুর রহমান বলেন, “কোনো প্রতিষ্ঠান পুরস্কার দেওয়ার আগে কখনোই টাকা নেয় না। তাই এ ধরনের বার্তা বা কল পাওয়া মাত্র সেটি যাচাই করুন বা উপেক্ষা করুন। মনে রাখবেন, প্রতারকরা আপনার বিশ্বাসকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।” তিনি আরও বলেন, “অপরিচিত ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্য বা ব্যাংক ডিটেইলস দেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সন্দেহ হলে দ্রুত জাতীয় সাইবার হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন।”
নিজেকে সুরক্ষিত রাখার করণীয়
অচেনা বার্তা বা লিংকে ক্লিক করবেন না:
অপরিচিত ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য প্রদান করবেন না।
ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখুন:
এনআইডি, ব্যাংক বা বিকাশ নম্বর শেয়ার করবেন না।
বার্তা বা ফোন পেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেখে নিশ্চিত হোন।
এছাড়া রয়েছে, প্রতারণার শিকার হলে জাতীয় সাইবার হেল্পলাইন ৯৯৯ বা ৩৩৩ নম্বরে অভিযোগ করার সুযোগ।

পরিচিতদের সতর্ক করুন:
পরিবার ও বন্ধুদের এসব প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করুন। সচেতনতার অভাবই বড় বাধা বলে মনে করেন, সাইবার বিশেষজ্ঞগন। তাদের মতে, প্রযুক্তি ব্যবহারে দ্রুত অগ্রগতি হলেও সাধারণ মানুষের সচেতনতা এখনো সীমিত। অনেকেই পুরস্কারের লোভে যাচাই না করেই তথ্য দেন, যা প্রতারকদের জন্য সুযোগ তৈরি করে।
একজন সাইবার বিশ্লেষক বলেন, “সচেতনতা বাড়ানোই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। স্কুল, কলেজ ও গণমাধ্যমে অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে নিয়মিত সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো জরুরি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















