হঠাৎ শোকের পর ভরসা ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স
ব্র্যাক ব্যাংকের কনফারেন্স রুমে নিঃশব্দে বসে ছিল চার বছরের ছোট্ট নাবিল। মায়ের কোলে হেলান দিয়ে থাকা এই শিশুটি হয়তো বুঝতেই পারছিল না, তার জীবনের ভার কতটা বদলে গেছে। এক মাস আগেই মারা গেছেন তার বাবা, আরিফুল ইসলাম — ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের এক ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার।
বৃহস্পতিবার, স্ত্রী নাজমুন নাহার ব্র্যাক ব্যাংকে এসেছিলেন তাঁর স্বামীর জীবনবিমার চেক গ্রহণ করতে। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় ব্যাংকের ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স সেবার মাধ্যমে তিনি ১২ লাখ ২৮ হাজার টাকার দাবি চেক পান, জানিয়েছে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
হঠাৎ অসুস্থতা, তারপর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ
নাজমুন জানান, পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। এক বছর পর জন্ম হয় নাবিলের, জীবন চলছিল স্বাভাবিক ছন্দে। ফ্রিল্যান্স কাজের মাধ্যমে আরিফুল পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিলেন।
কিন্তু এ বছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রথমে জন্ডিস ধরা পড়লেও ২৩ দিন হাসপাতালে থাকার পর হঠাৎই মাত্র ৩০ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
নাজমুন বলেন, সেই মুহূর্তটা যেন হাওর অঞ্চলের আকস্মিক ঝড় ‘আফাল’-এর মতো সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

জীবনের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে আশ্রয়
এই বিপর্যয়ের মাঝেও স্বামীর এক সঠিক সিদ্ধান্তই তাকে ভরসা দিয়েছে। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে আরিফুল ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স সেবার মাধ্যমে জীবনবিমা নিয়েছিলেন।
“আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার মাত্র দুই দিনের মধ্যেই বিমার টাকা পেয়ে গেছি,” জানালেন নাজমুন।
“এখন আমি ব্র্যাক ব্যাংকে একটি স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) খোলার পরিকল্পনা করছি। এর সুদে শ্বশুরের চিকিৎসা খরচ এবং নাবিলের পড়াশোনার ব্যয় চালাব। আমার স্বপ্ন—নাবিলকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।”
ব্র্যাক ব্যাংকের প্রশংসা ও সেবার দৃষ্টান্ত
ব্র্যাক ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসএমই ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান সৈয়দ আবদুল মোমেন জানান, আরিফুল ছিলেন ব্যাংকের একজন বিশ্বস্ত গ্রাহক, যিনি তার ফ্রিল্যান্স আয়সহ সব আর্থিক লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালনা করতেন।
“এ বছরের এপ্রিলে তিনি আমাদের এক শাখায় আসেন, তখন আমাদের কর্মীরা তাকে ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্সের মাধ্যমে জীবনবিমা নিতে পরামর্শ দেন,” বলেন মোমেন।
“তিনি মাত্র দুই কিস্তি জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার অকাল মৃত্যু সত্ত্বেও ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্সের কারণে তার পরিবার দ্রুত পুরো দাবি পেয়েছে।”
আনুষ্ঠানিকভাবে চেক হস্তান্তর
প্রয়াত আরিফুল ইসলামের স্ত্রী নাজমুন নাহারের হাতে বিমার চেক তুলে দেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রেফাত উল্লাহ খান, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এমডি ও সিইও মো. জালালুল আজিম, সৈয়দ আবদুল মোমেন, ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স অফিসার মাহবুবুর রহমান এবং প্রগতি লাইফের ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স বিভাগের প্রধান ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জহুরুল ইসলাম।
ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স: ব্যাংক ও বিমা একসঙ্গে
২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স সেবা চালু করে, যেখানে একই প্ল্যাটফর্মে ব্যাংকিং ও বিমা সেবা একত্রিত হয়েছে।
মেটলাইফ বাংলাদেশ, প্রগতি লাইফ, গ্রিন ডেল্টা ও পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের মতো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় গ্রাহকরা এখন জীবন, স্বাস্থ্য, গাড়ি ও ভ্রমণ বিমাসহ নানা ধরনের সুরক্ষা সেবা পাচ্ছেন।

সম্প্রতি চালু হওয়া ‘ক্রেডিট শিল্ড ইন্স্যুরেন্স’ সুবিধার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও এসএমই ঋণগ্রহীতা এবং ক্রেডিট কার্ডধারীরা অতিরিক্ত নিরাপত্তা পাচ্ছেন। এছাড়াও প্রশিক্ষিত ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স কর্মকর্তারা গ্রাহকদের জন্য উপযুক্ত বিমা পলিসি বেছে নিতে সহায়তা করছেন।
আর্থিক নিরাপত্তার নতুন অধ্যায়
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক দেশের মানুষের কাছে বিমা সেবা আরও সহজলভ্য করতে চায়, যাতে আরিফুলের মতো পরিবারের গল্পগুলো হতাশায় নয়—বরং সুরক্ষা ও আশার বার্তায় শেষ হয়।
#ব্র্যাক_ব্যাংক #ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স #প্রগতি_লাইফ_ইন্স্যুরেন্স #আর্থিক_নিরাপত্তা #বাংলাদেশ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















